ভারত ও চীনের পর জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ছে বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার:

ভারত ও চীনের পর জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সোমবার থেকে শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরে এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে। জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, চীন, ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার ক্ষেত্রেও এটি সহায়ক হবে। এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের কৌশলগত সম্পর্ক শুধুমাত্র দুই দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর মাধ্যমে জাপানের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের যোগাযোগ নিবিড় হবে। তিনি বলেন, জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত রয়েছে। বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্ব রাজনীতিতে এটি বিশেষ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ অর্জনে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। অপরদিকে টোকিও এবং বেইজিংয়ের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক না থাকলেও চীনের প্রভাব বলয়ে যুক্ত নয় জাপান। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে এ সম্পর্ক ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বলে মনে করেন তিনি।

সাধারণভাবে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মাত্রার বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা থাকলে দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। সাধারণ সম্পর্কের থেকে বেশি গভীর কৌশলগত সম্পর্কে সামরিক জোট গঠনের বিষয়টি না-ও থাকতে পারে। কৌশলগত সম্পর্কে চারটি উপাদান বিদ্যমান থাকে, সেগুলো হচ্ছে- প্রথমত, কৌশলগত সম্পর্কের মাধ্যমে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য যে কাঠামো দরকার, সেটির ঘোষণা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতির মাধ্যমে করা হয়। দ্বিতীয়ত, দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান রাখা এবং আরও গভীরতর করার জন্য ক্রমাগত উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হতে হবে। তৃতীয়ত, কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার ওপর জোর দেয়া হয়। চতুর্থত, অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর হবে এবং ব্যাপ্তি বড় থাকবে। এ ছাড়া কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে দুই দেশের খাপ খাইয়ে নেয়ার নমনীয়তা থাকতে হবে। কৌশলগত সম্পর্কের লক্ষ্য হচ্ছে- দুই দেশের মূল জাতীয় স্বার্থ দীর্ঘমেয়াদে যেন একই সুত্রে বাঁধা থাকে। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বর্তমানে সামগ্রিক অংশীদারত্ব (কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ) সম্পর্ক বিদ্যমান। এ ছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে জাপানের ভিশন ‘বিগ-বি’-তে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মো. শহীদুল হক বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের সময় থেকে যৌথ বিবৃতিতে সামগ্রিক অংশীদারত্বের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ বিগ-বি-এর সঙ্গে যুক্ত। জাপানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত হওয়ার বিষয়টি ২০১৪ সালের ধারাবাহিকতা জানিয়ে তিনি বলেন, সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম এবং উভয় পক্ষের জাতীয় স্বার্থ বিদ্যমান থাকতে হয়। এ ছাড়া কোন সময়ে এই সম্পর্ককে উন্নীত করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই দেশটির অবস্থান। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে এখন দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার কারণে মানবিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, এসব কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জাপানের মতো উন্নত বিশ্বের দেশকে আকর্ষণ করতে সক্ষম। জাপানের মতো দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করার মাধ্যমে শুধুমাত্র ওই দেশ নয়, বরং টোকিও’র অন্যান্য যে বন্ধু দেশ আছে, তাদের সঙ্গে ঢাকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি করার সুযোগ তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন।

Please follow and like us:

Check Also

ইসরায়েলের অনুরোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক

ইরান থেকে ইসরাইলের উদ্দেশ্যে শতাধিক ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এসব প্রতিহত করতে ইসরাইলের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।