দেবহাটার আম রাজ্যে হতাশার চাকা

দেবহাটা অফিস \ দেশের আম রাজ্য হিসেবে খ্যাত দেবহাটার আম রাজ্যে হতাশার চাকা ঘুরছে। যে রাজ্যে এই মৌসুমে উৎসব, উচ্ছাস, প্রানের স্পন্দন বিরাজ করে, শত শত ট্রাক উপজেলা সদরের আম রাজ্য গুলোতে সচল থাকে, ট্রাক কি ট্রাক আম লোড হয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। অর্থনীতিতে সুবাতাসের এই মোখ্যম সময়গুলোতে দেবহাটা আম নির্ভর অর্থনীতিতে পরিনত হয়। আম ভাঙ্গা, আম প্যাকেট জাত, বহন, ট্রাক লোড সহ অনুসঙ্গিক তৎপরতায় বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের অংশ গ্রহন থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এবার আমের মূল্য হ্রাসের অসম প্রতিযোগিতায় আম ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি হতাশায় নিমজ্জিত। আম চাষী, বাগান মালিক, আম ব্যবসায়ীসহ এই পেশার সাথে সংশি−ষ্টদের মাঝে ভয়ানক লোকসানের ছোয়া স্পষ্ট। দেবহাটার আম ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম দৃষ্টিপাতকে জানান আমের এমন নি¤œমুখি বাজার অতীতে কখনও হইনি। দেবহাটার টাউন শ্রীপুর, উপজেলা সদর, আজিজপুর, সুশিলগাতী, কামটা, সখিপুর, পারুলিয়া, গাজীরহাট, রহিমপুর সহ বিভিন্ন এলাকার আমর বাগান গুলোতে থোকা থোকা জ্বলজ্বলে আম ঝুলছে। মূল্য না থাকায় চাষীদের আম ভাঙ্গার প্রতি বিশেষ আগ্রহ নেই, অপেক্ষা করছেন আমের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনায়। অবশ্য আম পেকে যাচ্ছে, পড়ে যাচ্ছে আর তাই বাধ্য হয়ে অনেক আম চাষী আম ভাংছে এবং কম মূল্যে বাজার জাত করছে। দেবহাটার বর্তমান সময় হীমসাগর আম ভাঙ্গার সময় কিন্তু কোন কোন বাগানে গোবিন্দ ভোগের অস্তিত্ব বিদ্যমান, কারন যদি আমের মূল্য বাড়ে। অন্যান্য বছর এই সময়ে হীমসাগরের পাইকারী মূল্য কেজি প্রতি ৫০/৬০ টাকা থাকলেও বর্তমান সময়ে কেজি প্রতি ২৫/৩০ টাকা। রাজধানী ঢাকার ট্রাক ভর্তি আমের যে দৃশ্য তা যেন হারিয়ে গেছে। গতকাল সারাদিনে দেবহাটা উপজেলা সদর হতে গুটি কয়েকট্রাক আম লোড করে রাজধানী ঢাকার বাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। লক্ষ লক্ষ টাকায় বাগান ক্রয় করে লোকসানের মুখে আম চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নি¤œ পঞ্চাশ হাজার সর্বচ্চ দশ পনের লক্ষ টাকার বাগান সবই লোকসানের মুখে। এবারের মৌসুমে গাছে গাছে ব্যাপক আম ধরে এবং বাম্পার ফলনও নিশ্চিত হয়, কিন্তু বিভিন্ন কারনে বিশেষ করে অপরিপক্ক আম কৃত্রিম ভাবে পাকানোর ঘটনা রাজধানী বাজারে পৌছালে সাতক্ষীরার আমের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ সহ অন্যান্য কারন বর্তমান দুরবস্থার জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী। চাষীদের পাশাপাশি আম বাগান মালিকরাও (বিক্রেতা) লোকসানের মুখে আর এ নিয়ে বিশেষ করে আর্থিক লেনদেন হিসেবে প্রতিনিয়ত ঝগড়া ঝাটি হচ্ছে। আম বাগান মালিকরা বাগান বেচা কেনার সময় গ্রাহক (আম বাগান ক্রয় কারী) ক্ষেত্র বিশেষ আর্ধেক পরিমান টাকা পরিশোধ করেন এবং কথা খাকে অর্থাৎ চুক্তি হয় আম ভাঙ্গার সময় বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে, আর বর্তমান সময় বাকি টাকা লেনদেন নিয়েই চলছে মন কসাকসি, ঝগড়া বিবাদ। আমের মূল্য বাজার নেমে যাওয়ায়, আমের সস্তা দরের কারনে বাগান ক্রেতারা বাকিটাকা পরিশোধ করতে পারছেনা। অন্যদিকে বাগান মালিক আম ভাংতে দিচ্ছে না। রাজধানী ঢাকার আম ব্যবসায়ীরা ও দেবহাটার বিভিন্ন এলাকায় আম বাগানে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছেন যা বর্তমান পরিস্থিতি লোকসানের ভারে জর্জরিত অন্যদিকে স্থানীয় চাষীরা ঢাকার আম আড়তগুলো হতে দাদন নিয়ে আম বাগান ক্রয় করেছে যার শেষ কথা লোকসান এবং লোকসান। দেবহাটার হাট বাজার গুলোতেও অত্যন্ত কম মূল্যে আম বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে রসনা তৃপ্তের লোভনীয় আকর্ষনীয় হীম সাগর কোন কোন বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে বিশ/পচিশ টাকায় যা অবিশ্বাস্য এবং চাষীদের জন্য অভিশাপ।

Please follow and like us:

Check Also

তালায় অগ্নিকাণ্ডে ৭টি বসতঘর পুড়ে ছাই

তালা(সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা:সাতক্ষীরার তালায় অগ্নিকাণ্ডে সাতটি বসতঘর পুড়ে গেছে। উপজেলার ধলবাড়িয়া গ্রামে সোমবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।