পিটিআই ছাড়ছেন নেতারা, ৯ই মে’র নিন্দা জানাতে চাপ বাড়ছে ইমরানের ওপর

নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। একের পর এক দল ছাড়ার খবর পাচ্ছেন দলীয় নেতাদের কাছ থেকে। ৯ই মে পিটিআই কর্মীরা পাকিস্তানজুড়ে যে ‘দাঙ্গা ও সহিংসতা’ চালিয়েছে তার দায় এড়াতেই পদত্যাগ করছেন নেতারা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পিটিআই’র মোট সাত শীর্ষ নেতা দলত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। পদত্যাগের আগে তারা সবাই ৯ই মে’র সহিংসতার নিন্দা ও বিচার দাবি করেছেন। এ খবর দিয়েছে করাচিভিত্তিক গণমাধ্যম ডন।

খবরে জানানো হয়, শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন পিটিআই নেতা জয় প্রকাশ। এর আগে বৃহস্পতিবার একসঙ্গে পদত্যাগ করেন পিটিআই নেতা মালিক আমিন আসলাম, ড. মুহাম্মদ আমজাদ এবং ড. ইমরান আলি শাহ। আর বুধবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আমির মাহমুদ কিয়ানি, মাহমুদ বাকি মৌলভি এবং ড. সঞ্জয় গাঙ্গওয়ানি।

দলটির প্রধান ইমরান খানের দাবি, সরকার ও সামরিক বাহিনীর চাপের কারণেই নেতারা দল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তবে জয় প্রকাশ পদত্যাগের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তাকে পদত্যাগে কেউ চাপ দেয়নি। আমি পাকিস্তানের জন্য রীতিমতো কাঁদছি।

বিজ্ঞাপন

প্রকাশ জানান, পদত্যাগ করলেও তিনি পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের অধিকারের জন্য কাজ করে যাবেন। করাচি থেকে তিনি নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সাংবাদিকদের সামনে তিনি ৯ই মে’র সহিংসতার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, কারা এই সহিংসতা চালিয়েছে এবং সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করেছে তাদের শাস্তি দিতে তদন্ত হোক।
এর আগে রাজধানী ইসলামাবাদের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে পিটিআই নেতা আসলাম ও আমজাদ ঘোষণা করেন যে, ৯ই মে যা হয়েছে তারপরেও আর পিটিআই’র সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। পিটিআই দিন দিন পাকিস্তানের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই দুই নেতা। সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর নিন্দাও করেন তারা।

এরমধ্যে আসলাম ছিলেন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ইমরান খানের উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমি ১৩ বছর ধরে পিটিআই’র সঙ্গে রয়েছি। তবে লাহোরের জিন্নাহ হাউস এবং সামরিক স্থাপনায় হামলার পর আর এই দলের সঙ্গে থাকা যায় না। ইমরান খানের উচিৎ ছিল অবিলম্বে ওই ঘটনার নিন্দা জানানো এবং নিজ দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা দেয়া। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিনি কিছুই করেননি।
হামলার বিষয়ে তার শোক প্রকাশ আসলাম বলেন, পিটিআই কর্মীরা কেন কেবল সামরিক এবং রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি দুর্নীতি নির্মূল করতে পিটিআই-এ যোগ দিয়েছিলেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে পাকিস্তানকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইমরান খান এখন যা করছেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি ইমরান খানকে নিজ দলের মধ্যে থাকা ‘ব্ল্যাক শিপ’দের শনাক্ত করতে বলেন। কারণ, সামরিক বাহিনী ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করা শুধুমাত্র পাকিস্তানের শত্রুদের এজেন্ডা।

আরেক নেতা ড. আমজাদও তার পদত্যাগের জন্য অনেকটা একই কারণের কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি এমন রাজনীতির অংশ হতে পারি না যা দেশকে ধ্বংস করছে। ইমরান খানকে তার দলেরই কিছু লোক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করছে বলে জানান তিনি। আমজাদ পিটিআই-এর উপ-তথ্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার দাবি, ইমরান খান সত্য ও আন্তরিক বন্ধুদের সনাক্ত করতে পারেন না, বরঞ্চ তিনি তাদের অনুসরণ করেন যারা তাকে বিভ্রান্ত করে।

শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি পিটিআই ছাড়ছেন আঞ্চলিক নেতারাও। পাঞ্জাবের সংসদ থেকে এরইমধ্যে অন্তত আট পিটিআই আইনপ্রনেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ইমরান খানের ওপর ৯ই মে’র ঘটনার নিন্দা জানানোর চাপ বাড়ছে। পদত্যাগ ছাড়াও দলের মধ্য থেকেও নেতারা ইমরানকে অনুরোধ জানাচ্ছেন, যাতে ওই ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। জিও নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী বলেন, গত ৯ই মে পিটিআই সমর্থকরা দেশের নানা প্রান্তে যে ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিলেন, তার জন্য ইমরানের প্রকাশ্যে নিন্দা জানানো উচিত। এর পাশাপাশি তিনি ওই ‘উগ্র’ সমর্থকদের কড়া শাস্তিরো দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে ইমরান খান সামরিক বাহিনীর ওপর হামলার নিন্দা জানালেও তিনি দাবি করেন যে, এই ঘটনা তার দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তার দাবি, পিটিআইকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্রকারীরাই সশস্ত্র ওই হামলাকারীদের লেলিয়ে দিয়েছিল। ইমরান খান একটি স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে ৯ মে-র দাঙ্গার বিস্তারিত তদন্ত দাবি করেন। তিনি বলেন, যে কোনো সুষ্ঠু তদন্তে এটি বের হবে যে ওই হামলাগুলো ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, দাঙ্গাকারীদের থামাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য পুলিশ ও সেনাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় সরকারকে অবশ্যই সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহ করতে হবে। পিটিআইয়ের পাঞ্জাবের সভাপতি ইয়াসমিন রশীদ ও আমার বোনেরা লোকজনকে সেনা কম্যান্ডারের বাড়ির ভেতরে না গিয়ে ভবনটির বাইরে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছিল।

পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শেরি রেহমান টুইটারে ইমরান খানকে ৯ মের ঘটনার নিন্দা জানাতে চাপ দিয়েছেন। শুক্রবার তিনি টুইট করেন যে, তার দলের লোকেরা যেখানে ওই সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে, তখন ইমরান খান উল্টো সেটির পক্ষ নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ইমরান খানকে অবশ্যই এই সহিংস রাজনীতি, হুমকিদায়ক ভাষা ও বিবৃতির জন্য দায়ী করতে হবে। তিনি জাতির কাছে ৯ই মের জন্য ক্ষমা না চেয়ে আরও ওই সহিংসতার পক্ষ নিয়ে ভুল করছেন বলেও সাবধান করেন এই পাক মন্ত্রী।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।