সাতক্ষীরা: এক বছরে ৩০টি পুকুর ভরাট

সরকার আইন করে পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাতক্ষীরা শহরে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। একটি বা দুটি নয় গত এক বছরে ৩০টি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। ভরাট করা অধিকাংশ জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ভবন। এতে গোসল, গৃহস্থালিসহ নানা কাজে ব্যবহারের জন্য পানি উৎস ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিষয়গুলো সঠিকভাবে তদারকি না করায় এবং এই আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অবাধে পুকুরগুলো ভরাট করা হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পুকুর ভরাট বন্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) ৬–এর ঙ ধারা অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্যকোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এই আইন লঙ্ঘনকারীদের দুই বছর কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ ছাড়া মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণের জন্য প্রণীত প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের (২০০০) ৫ ধারা অনুযায়ী, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এ ছাড়া এ ধরনের জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর করা যাবে না।

সাতক্ষীরা শহরের কাছারিপাড়ার বাসিন্দা সাবেক পৌর কাউন্সিলর হাসান জাহিদ জানান, পরিবেশ আইন না মেনে সাতক্ষীরা পৌরসভার একের পর এক পুকুর ভরাট করে সেখানে ভবন তৈরি করা হচ্ছে। ফলে সুপেয় খাবার পানিসহ ব্যবহারের পানির অভাব দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এমন অবস্থান হয়েছে কোথাও আগুন লাগলে আশেপাশে সহজে পানি পাওয়া যায় না।

শহরের ৫নং ওয়ার্ডের গড়েকান্দায় বাসিন্দা আবদুর গফ্ফার জানান, তাঁদের এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খায়রুল মোজাফফর দুই একর আয়তনের দুটি বড় পুকুর ভারাটের কাজ করছেন। ওই পুকুরের পানি স্থানীয় লোকজন বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার করে আসছিল। বিষয়টি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে জানালে তাঁরা এলাকা পরিদর্শন করে সত্যতা পান। কিন্তু পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ হয়নি। এই বিষয়ে খায়রুল মোজাফফরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি তাঁর নিজ প্রয়োজনে পুকুরগুলো ভরাট করছেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছরে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার মিন্টু চৌধুরী, নূর আলী গাজী, ইটাগাছার আবুল কাসেম, পলাশপোল এলাকার নওসাদ চৌধুরী, আসাদুল মোল্যা, হাজু ঘোষ, আফতাবুজ্জামান, খুলনা মোড়ের আবদুর ছাত্তার, সুলতানপুর এলাকার তৌহিদুল ইসলাম, একই এলাকার বদরুজ্জামান ও মুজিবুর রহমান, মো. আলম, কাটিয়ার রেজাউল করিম, লুৎফর রহমান, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়েরসহ ৩০টি পুকুর ভরাট করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকায় প্রায় দুই বিঘা আয়তনের একটি পুকুর ছিল। সাত মাস আগে সেটি ভরাট করে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন নওসাদ চৌধুরী। একই এলাকার শংকর সরকার বলেন, তিনি হাজু ঘোষের পুকুরের একাংশ কিনে আরসিসি পিলার তুলে ভবন নির্মাণ করেছেন। জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে ভবন করার সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। কামালনগর এলাকার এক একর আয়তনের পুকুরটি ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি করেছেন মিন্টু চৌধুরী। মিন্টু চৌধুরী বলেন, পুকুরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। তাই তিনি পুকুরটি ভরাট করেছেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, পুকুর ভরাটের ঘটনায় ইতোমধ্যে একজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় অধিকাংশ এলাকায় খাওয়ার পানির সংকট রয়েছে। পুকুর ভরাট না করার বিষয়ে সভা ও সমাবেশ বলা হয়। ভরাট করলে কী সমস্যা হতে পারে, তা-ও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অভিযোগ পেলেই সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে পুকুর ভরাট বন্ধ করে দিয়ে আসা হয়।

Please follow and like us:

Check Also

বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ৮ জলদস্যু গ্রেফতার

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ অপহরণে যুক্ত ৮ জলদস্যুকে আটক করেছে সোমালিয়ার পুলিশ। রোববার জাহাজটিকে মুক্তি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।