বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, ২৩ দিনে নিহত ৫৬৮

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ ও মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গতকাল বুধবার আরো ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজন পুলিশ সদস্য, দুজন র‌্যাব সদস্য, ডিবি সদস্য একজন এবং একজন আনসার সদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ রয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর গত তিন দিনে শুধু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ৮৩টি লাশ। হাসপাতাল সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

১ জুলাই থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংসতায় রূপ নেয়।

১৬ জুলাই সংঘর্ষে নিহত হয় ছয়জন। ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৪৩৯ জন নিহত হয়। এর বাইরে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আরো ১০৩ জনসহ দেশে মোট ৫৪২ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আসা আরো ২৬ জনসহ এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬৮।

 হাসপাতাল, চিকিৎসক ও নিহতের স্বজন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকা মেডিক্যালে নতুন ২৬ লাশগত রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত হাসপাতালে আসা সাত পুলিশ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন সুজন চন্দ্র দে (৪২)। তাঁকে পিটিয়ে হত্য করা হয়। যাত্রাবাড়ী থেকে তাঁর লাশ মর্গে নেওয়া হয়। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী এলাকার পুলিশ সদস্য ফিরোজ হোসেনের (৪২) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।

তাঁর পিতার নাম আব্দুল জলিল শেখ। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামে। সাভার আশুলিয়া থেকে পুলিশ সদস্য রাজু আহমেদের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে পুলিশ সদস্য রেজাউল করিম (৪৮), উত্তরা থেকে গুলিবিদ্ধ পুলিশ সদস্য শহিদুল আলম (৪৮), উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশ সদস্য রাসেল (৪৪), মিরপুর থেকে পুলিশ সদস্য রুবেল (২২) এবং যাত্রাবাড়ী থেকে পুলিশ সদস্য আব্দুল মজিদের (৪৬) মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়।
দুই র‌্যাব সদস্যের মধ্যে পুলিশ ইন্সপেক্টর হাসমত আলী (৪০) ও র‌্যাব সদস্য বিজিবির জেসিও আনোয়ারের (৪১) মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়।

একজন ডিবি সদস্য হলেন উত্তরা ডিবির ইন্সপেক্টর রাসেল (৩৮), একজন আনসার সদস্য হলেন যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ আবু জাফর (৪৩)।

এ ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছেন পারভেজ মিয়া (৩০)। তাঁর বাড়ি ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে। তিনি শনির আখড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। যাত্রাবাড়ী থেকে সুমন ইসলাম (৩০), উত্তরা থেকে মো. আবু হাসনাত রনি (২৪), উত্তরা থেকে গুলিবিদ্ধ খগেন্দ্র চন্দ্র সরকার (৪৯), উত্তরা থেকে হাফেজ মো. মাহমুদুল হাসান (২৬), মতিঝিল থেকে রাব্বি (২১), গুলশান থেকে আসিফ (১৬), কামরাঙ্গীর চর থেকে নুর আলম (২১), বংশাল থেকে শাওন (২২), হাতিরঝিল থেকে বাপ্পি আহমেদের (৩৫) লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়।

অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল থেকে একজন (২২), যাত্রাবাড়ী থেকে একজন (৩০), হাতিরঝিল থেকে একজন (৩৫), উত্তরা থেকে একজন (৩২) রয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এসব ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিল ২৬৮ জন।

Please follow and like us:

Check Also

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় দুই পুলিশ গ্রেফতার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ হত্যা মামলায় দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।