চাঁপাই সীমান্তে ভারতীয়দের অনুপ্রবেশ ॥ হামলা ও সংঘর্ষে ৫ বাংলাদেশী আহত

স্টাফ রিপোর্টার: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কিরণগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশীদের ৩০টি আম গাছসহ শতাধিক বরইগাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ ও ভারতীয়রা। এ সময় বিজিবি স্থানীয়দের সাথে নিয়ে তাদের এই কার্যক্রমকে রুখে দেয়। এ নিয়ে সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তের ১৭৭ পিলারের ১ থেকে ৩ নং এস এলাকায় ঘটনার সূত্রপাত হলেও বিকেলেও সংঘর্ষ চলে। এই উত্তেজনা পরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ঘিরে চৌকা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। এ ঘটনায় পাঁচ বাংলাদেশী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- বিনোদপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের ছেলে রনি (২৫) ও কালিগঞ্জ গ্রামের সেরাজুল ইসলামের ছেলে ফারুক (৩৫), বিশ্বনাথপুর গ্রামের ঝাইটনের ছেলে আসমাউল (১৬) ও কালিগঞ্জ গ্রামের জিন্নুরের ছেলে তরিকুল (৫৫)। অপরজনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানায়, সীমান্তের এপার-ওপারে দুই দেশের উত্তেজিত জনতা মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশি ভূখ-ে প্রবেশ করে চৌকা সীমান্ত এলাকায় অন্তত ৩০টি আমগাছ ও শতাধিক বরইগাছ কেটে ফেলেছে।

বিজিবি জানিয়েছে, এ ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে বলেছে বিএসএফ।

এর আগে চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। তখন চৌকা সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছিল। সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সীমান্তে শূন্যরেখার পাশে বাংলাদেশের ভেতরের জমিতে গম কাটতে গিয়েছিলেন তারা। তখন ভারতীয় নাগরিকেরা এসে বাংলাদেশের ভেতরের কয়েকটি আমগাছ কেটে দেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পরে বিজিবির টহল দল মাইকিং করে স্থানীয়দের সহযোগিতার আহ্বান জানান। এ সময় স্থানীয়রা বিজিবিকে সহযোগিতা করতে সীমান্ত এলাকায় ছুটে আসেন। দুই পাশে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিএসএফ সদস্যরা ৪টি সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ভারতীয় নাগরিকদের হাঁসুয়ার আঘাতে ও তাদের ছোড়া পাথরে কয়েকজন বাংলাদেশি আহত হন।

কালিগঞ্জ ঘুমটোলা গ্রামের রবু আলী জানান, মোটরসাইকেলযোগে ফারুক সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি দেখার জন্য গিয়েছিলেন। উত্তেজনার মধ্যে তীব্র বেগে আসা পাথরের আঘাত পান মাথায়। স্থানীয় বাসিন্দা মিঠুন জানান, সীমান্তের বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময় কয়েকজন ভারতীয় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে রনির ওপর আক্রমণ করে। এতে রনি আহত হন। জানা যায়, বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে বিএসএফ ইট-পাথর ও কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ করে। বাংলাদেশীরাও পাল্টা ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। চৌকা সীমান্তের কালিগঞ্জ এলাকার ওপারে গাছ কাটা শুরু করে বিএসএফের সহায়তায় ভারতীয়রা। এ সময় বাংলাদেশ সীমান্তের লোকজন বাধা দিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে চৌকা সীমান্তের কাছে বিএসএফ ও ভারতীয়রা ঢুকে বাংলাদেশিদের ফসল কেটে নিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এ সময় ১৫-২০টি ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি পাথর ছুড়েছে বলে অভিযোগ সীমান্তবাসীর।

স্থানীয় বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. বাদশা মিয়া বলেন, সীমান্তে গম কাটা নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এতে তিন বাংলাদেশী আহত হয়েছেন। ভারতীয়দের হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার যুবক মেসবাহুল হক। তিনি বলেন, তিনিসহ মোট তিনজন আহত হয়েছেন। অন্য দুজনের মধ্যে বিশ্বনাথপুর গ্রামের মো. রনি ভারতীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে ও মো. ফারুক হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন। বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সীমান্তে অবস্থান করছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, চৌকা ও কিরণগঞ্জ ক্যাম্পের মাঝামাঝি সীমান্ত পিলার ১৭৭ বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে কিছু আমগাছ ছিল। ওই আমগাছ কাটা নিয়ে ভারতীয় নাগরিক ও বাংলাদেশী নাগরিকের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন শূন্যরেখা বরাবর দুই দেশের নাগরিকেরা দাঁড়িয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবির জনবল বাড়ানো হয় এবং তাঁরা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। পরে বিকেল চারটা ১০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফের কমান্ডার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক হয়। যেখানে এ ঘটনার জন্য বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি গাছ কাটার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

বিজিবি কমান্ডার বলেন, এ ঘটনার সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে আছেন। কেউ যাতে শূন্য রেখা অতিক্রম না করে এবং উত্তেজনা প্রশমিত করতে বিজিবি প্রস্তুত আছে। বিজিবির পাশে দেশপ্রেমিক জনগণও আছেন। আহতের ব্যাপারে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, তাদের কাছে আহতের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিসংখ্যান নেই। বিএসএফের পক্ষ থেকে হতাহতের বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি। তারা (বিএসএফ) উচ্ছৃঙ্খল লোকজন (মব) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে, যেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালককে তারা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আশা করছেন, বিজিবি ও বিএসএফ সদর দপ্তরের উচ্চপর্যায়ে এ ব্যাপারে কথা হবে।

Check Also

পাকিস্তান হাইকমিশনারের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।