সাতক্ষীরায় ২ ঘণ্টার চিংড়ি পোনার বাজারে কোটি টাকার বেচাবিক্রি

ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাতটা। পুব আকাশে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। তখনো শহরের চিরচেনা কোলাহল শুরু হয়নি। তবে সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর করিম সুপার মার্কেটের চিত্র ভিন্ন। মার্কেটের আশপাশে ৫০০ গজের মধ্যে সকালে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য বসে বাগদা চিংড়ির পোনা (রেনু) বিক্রির বাজার।

সকাল থেকেই সেখানে ভিড় করেন পোনা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। রোদের তেজ বাড়ার আগেই বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়। দুই ঘণ্টায় বাজারটিতে কোটি টাকার বেশি পোনা বিক্রি হয়। ভরা মৌসুমে বিক্রি বাড়ে আরও কয়েক গুণ।

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় ৬৫ হাজার ৫৩৬ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ির ঘের আছে ৫৪ হাজার ৯৩৫টি। এসব ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য ৩২০ থেকে ৩৫০ কোটি পোনার প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ পোনা কক্সবাজারের বিভিন্ন হ্যাচারি থেকে আসে। বাকিগুলো প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরবন বা অন্য উৎস থেকে উৎপাদন করা হয়।

সাতক্ষীরা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৬৪। এ ছাড়া জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক ব্যবসায়ী আছেন।

সকালে রোদের তাপ ছড়ানোর আগে বাগদা চিংড়ির পোনা বাজার থেকে নিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন চিংড়িচাষিরা। শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর করিম সুপার মার্কেটের সামনে
সকালে রোদের তাপ ছড়ানোর আগে বাগদা চিংড়ির পোনা বাজার থেকে নিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন চিংড়িচাষিরা। শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর করিম সুপার মার্কেটের সামনেছবি: প্রথম আলো

চিংড়িচাষি মাসুদার রহমান  বলেন, সাতক্ষীরার বাগদা পোনার বাজার বসে প্রতিদিন সকাল সাতটায়। চলে নয়টা পর্যন্ত। সাতক্ষীরা থেকে এসব পোনা শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, তালা ছাড়াও খুলনার পাইকগাছা ও কয়রার বিভিন্ন ঘেরে চলে যায়। দুই ঘণ্টায় প্রতিদিন অন্তত এক কোটি টাকার ওপর পোনা বিক্রি হয়। তবে ভরা মৌসুমে পোনার চাহিদা বাড়লে বেচাবিক্রি আরও বাড়ে। কক্সবাজার থেকেই বেশি পোনা আসে।

নিজের ঘেরে চিংড়ি চাষের জন্য কালীগঞ্জ থেকে পোনা নিতে আসেন ঘের ব্যবসায়ী বাবু বিশ্বাস। জানালেন, তিনি দুই বাক্সে ১০ হাজার ৮০০টি পোনা কিনেছেন। প্রতি হাজার ৩৮৫ টাকা করে। একইভাবে আশাশুনির বালিথা থেকে আসা হারুন অর রশিদ প্রতি হাজার ৪০০ টাকা দরে ২৭ হাজার পোনা কিনেছেন।

চিংড়িচাষি কাজী আনিসুর রহমান  বলেন, বাগদা চিংড়ির চাষের জন্য সাধারণত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে জমি (ঘের) প্রস্তুত করতে হয়। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ঘেরে পোনা ছাড়া শুরু হয়। শেষ হয় অক্টোবরে। এই ৯ মাস প্রতি তিন সপ্তাহ পরপর প্রতি বিঘায় এক হাজার করে চিংড়ির পোনা ছাড়তে হয়। পোনা ছাড়ার ৬০ থেকে ৭০ দিন পর ঘেরে মাছ ওঠা শুরু হয়।

সাতক্ষীরা পোনা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, শহরের কামালনগর এলাকায় ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে পোনা বিক্রির বাজার বসা শুরু হয়। এখনো চলছে। তবে বাজার সংকুচিত হয়েছে। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন ৮-১০টি হ্যাচারির ১২ থেকে ১৪টি ট্রাকে পোনা আসে। প্রতি ট্রাকে ২৫ থেকে ২৭ লাখ পোনা থাকে। গতকাল সকালে ১২টি ট্রাকে সাড়ে তিন কোটি পোনা এসেছে। গড়ে ৩৭০ টাকা দাম হিসাবে ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি শেষ দিকে যশোর পর্যন্ত পোনা কার্গো বিমানে আসে। তারপর সেখান থেকে ট্রাকে সাতক্ষীরায় আনা হয়। তখন দুই থেকে তিন গুণ বেশি পোনা আসে। দামও বেশি থাকে।

Check Also

৫০ বছরের ‘লজ্জা’ থেকে মুক্ত হলেন ড. ইউনূস

দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে এতোদিন নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকাকে ‘লজ্জার’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।