সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে নিহতরা জামায়াত কর্মী, পরিকল্পিত খুনের অভিযোগ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় গণপিটুনিতে দুজন নিহতের বিষয় নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুজন জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় কর্মী। তাদের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় একাধিক মামলা আছে।

জামায়াত নেতারা অভিযোগ করেছেন, সালিশ বৈঠকের নামে ডেকে নিয়ে তাদের দুজন কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

সোমবার (৩ মার্চ) রাতে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের চূড়ামণি গ্রামের ছনখোলা এলাকায় গণপিটুনিতে দুজন নিহত হন। এ সময় গোলাগুলিতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।

পুলিশ নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। তারা হলেন, মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ ছালেক (৩৫)। এদের মধ্যে নেজাম উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে। আর ছালেক একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে।

আহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন, ওবায়দুল হক (২২), নাসির উদ্দিন (৩৮), আব্বাস উদ্দিন (৩৮) ও মো. মামুনুর রশিদ (৪৫)। তারা ছনখোলা এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৪-৫টি সিএনজি অটোরিকশায় করে নেজাম ও ছালেকসহ অন্তঃত ১২ জন যুবক ছনখোলা এলাকায় যান। তারা ওই গ্রামের দোকানের সামনে অটোরিকশা থেকে নামেন। তখন মসজিদের মাইক থেকে এলাকায় ডাকাত এসেছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ ঘোষণায় গ্রামের লোকজন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। অনেকে তারাবির নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হন। তারা নেজামদের ঘিরে ফেললে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। গুলিবর্ষণের মধ্যেই অটোরিকশায় করে অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গ্রামবাসী নেজাম ও ছালেককে ধরে বেধড়ক মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। আর গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজন আহত হন।

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, খবর পেয়ে সাতকানিয়া থানা থেকে ওসিসহ পুলিশের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। রাতে পুলিশ সুপারসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও সেখানে যান। পুলিশ দুজনের লাশ উদ্ধার করে রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। আহতদের নগরীতে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এছাড়া পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে বলে ওসি জানান।

জামায়াতে ইসলামীর সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোছেন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একটি সালিশ বৈঠকের কথা বলে তাদের এওচিয়া ইউনিয়নে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দুজনের মাথায় পর্যায়ক্রমে আঘাত করা হয়।’

তবে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের সক্রিয় কর্মী নেজাম উদ্দিন আওয়ামী লীগের আমলে দীর্ঘসময় এলাকাছাড়া ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি এলাকায় ফেরেন। এরপর এলাকায় নেজামের পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়। তারা একাধিকবার সংঘাতেও জড়িয়েছে।

এ ছাড়া নেজাম ও তার পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠতে থাকে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ এবং এলাকাভিত্তিক অপরাধ ও আধিপত্যের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্র জানায়।

জানতে চাইলে ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন আপনাদের যে তথ্য দিচ্ছেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরাও সেগুলোই পাচ্ছি। নেজাম অনেকদিন এলাকায় ছিলেন না। নেজাম ও ছালেকের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগে দায়ের হওয়া একাধিক মামলা আছে। এর মধ্যে কিছু মামলা বিচারাধীন আর কিছু মামলা তদন্তাধীন আছে।’

Check Also

ভোমরা স্থল বন্দরে চারমাসে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে গত চার মাসে ১লাখ ৪৩ হাজার ৬০৫ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।