ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা

ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে ‘সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন একদল শিক্ষার্থী।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে এই প্রতিবাদী কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এসব স্লোগানের মধ্যে রয়েছে—‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’।

শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শিক্ষার্থীরাছবি: সাজিদ হোসেন

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান কর্মসূচি’। আয়োজকেরা বলছেন, দেশজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ও দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবিতে সব কলেজের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ছয়টি দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা চান, এ দেশে আর কেউ যেন ধর্ষণের শিকার না হন। এই ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রযন্ত্রকে বার্তা দেওয়া। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজ নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী শাহবাগে আসবেন। আজ ইফতারের আগপর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মিথিলা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করে, এ দেশে নারীরা কতটা অনিরাপদ। রাষ্ট্রকে নিরাপদ করতে তাঁরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো—

১. ধর্ষকের শাস্তি জনসমক্ষে নিশ্চিত করা। ধর্ষকদের শাস্তি প্রকাশ্যে নিশ্চিত হলে সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাবে।

২. ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। প্রয়োজনে ধর্ষকদের বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে।

শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি দিয়েছেন
শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি দিয়েছেনছবি: সাজিদ হোসেন

৩. দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। যদি কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা, মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করা এবং ভিকটিম ও সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তী ১৫ কার্যদিবস সময়ে যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একটিতেও অসামঞ্জস্য থাকলে, সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

৪. ধর্ষণের ঘটনায় সালিসি বিচার নিষিদ্ধ করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করবে শুধু রাষ্ট্র। পাশাপাশি অনৈতিক পন্থায় প্রশাসনের কারও সহযোগিতায় যদি ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার আসামি ছাড়া পায়, তবে তদন্ত অনুযায়ী তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান করা যেতে পারে।

৬. চলমান মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

Check Also

কালিগঞ্জে যুবককে গলা কেটে হত্যা চেষ্টার মূল আসামিসহ গ্রেপ্তার ২

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে সাইফুল ইসলাম ওরফে সামাদ (২০) নামে এক যুবককে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।