উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোর বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে বসানো সব পাইপ লাইন অপসারণের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার আশাশুনিসহ উপকূলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবা) উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভাঙন প্রতিরোধে চিংড়ি ঘেরে পানি উঠানোর জন্য বাঁধ ছিদ্র করে বসানো পাইপ দ্রুত অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) জেলার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামের খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি এই নির্দেশ দেন।

এসময় বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার এর সাথে থাকা আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায়কে চিংড়ি ঘেরে লবণ পানি উত্তোলনের জন্য পাউবোর বেড়িবাঁধের নিচে ছিদ্র করে ঘের মালিকদের বসানো অবৈধ পাইপ লাইন অপসারণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেন।

বিছট নিউ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ জানান, বিছট গ্রামের যে স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙেছে, ওই স্থানটি দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এছাড়া মূল যে পয়েন্টটি ভেঙেছে সেখানে বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে বসানো একটি পাইপ লাইন ও গেট সিস্টেম ছিল। মাছের ঘেরে পানি তোলার জন্য পাউবো’র বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে পানি তোলার কারণে হঠাৎ বাঁধটি ধসে যায়।

স্থানীয় গ্রামবাসী রুহুল আমিন মোড়ল জানান, মাছের ঘেরে নদীর লবন পানি প্রবাহের জন্য বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে তলা দিয়ে পাইপ বসানোর কারণে বাঁধের নিচের মাটি দুর্বল হয়েছিল। যে কারণে আস্তে অস্তে তলার মাটি ক্ষয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করে বেড়িবাঁধ ধসে পড়ে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

আনুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন জানান, সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাউবো’র বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে অবৈধভাবে পাইপ ঢুকিয়ে নদীর লবন পানি উঠিয়ে চলছে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বেড়িবাঁধের ১০০ মিটার দূরে ঘের করার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ চিংড়ি চাষীরা তা মানছে না। এভাবে যত্রতত্র পাইপ বসানোর কারণে বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে প্রতিবছর ছোটখাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ভেঙে যাচ্ছে এসব বেড়িবাঁধ। প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। নোনা পানির বিরূপ প্রভাবে উজার হচ্ছে বনজ ও ফলদ সম্পদ। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

এদিকে বিছট গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ, সেনাবাহিনীর কর্নেল নাবিদ, আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় প্রমুখ।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, নায়েবে আমীর শেখ নুরুল হুদা, সেক্রেটারি মাওঃ আজিজুর রহমান, জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর হাফেজ মাওঃ মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস ও প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী, আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের আমীর আবু মুছা তারিকুজ্জামান তুষার, নাযেবে আমীর মাওঃ আনওয়ারুল হক প্রমুখ।

পরিদর্শনকালে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল ঘেরে নদীর লবণ পানি উঠাতে বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে অবৈধভাবে পাইপ বসানোর বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারের দৃষ্টিগোচরে আনেন। বিষয়টি অনুধাবন করে তিনি সাথে সাথে আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস ও প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালীকে দুই ঘন্টার মধ্যে বেড়িবাঁধে বসানো সব অবৈধ পাইপ অপসারণের নির্দেশ দেন। একই সময় আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায়কে পাউবোর বেড়িবাঁধের নিচে ঘের মালিকদের বসানো অবৈধ পাইপ লাইন অপসারণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেন।

এদিকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার কর্তৃক বেড়িবাঁধের ছিদ্র করে বসানো অবৈধ পাইপ লাইন অপসারণের নির্দেশ পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট, নয়াখালী, কাকবসিয়াসহ আশেপাশের এলাকা থেকে সব পাইন লাইন অপসারণ করে নিয়েছেন ঘের মালিকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম।

Check Also

আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামী

আগামী রমজানের আগেই জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।