পুশ ইন বা পুশ ব্যাক কোনো আইনসম্মত পদ্ধতি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ভারত যেভাবে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মানুষ ঠেলে (পুশ ইন) দিচ্ছে, তা আইনসিদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ শনিবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রায়মঙ্গল নদ ও বয়েসিং খালের সংযোগস্থলে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’-এর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় তিনি এ কথা বলেন।

পুশ ইন সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাসী উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় আন্তর্জাতিক আইন ও প্রটোকল অনুসরণ করে আসছে। আমরা ইতিমধ্যে এ সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে চিঠি লিখেছি। আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এ সমস্যার সমাধানে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।’

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের তরফ থেকে ভারতকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশি কেউ যদি অবৈধভাবে ভারতে থেকে থাকেন, তবে ভারত যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠায়। আর বাংলাদেশে যদি অবৈধ ভারতীয় নাগরিক থেকে থাকেন, তাঁদেরও যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। সে জন্য ভারতীয় পক্ষকে বলা হয়েছে, তারাও যেন পুশ ইন না করে যথাযথ চ্যানেলে ফেরত পাঠায়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, গতকাল শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে ভারত পুশ ইনের চেষ্টা করেছে, যা বিজিবি, আনসার এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় প্রতিহত করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে ও সহযোগিতা করলে ভারত পুশ ইন করতে পারবে না।

ভারত গুজরাটে অবস্থিত একটি বাঙালি বস্তি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে পুশ ইন শুরু হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে ইউএনএইচসিআর-এর কার্ডধারী কিছু রোহিঙ্গাও রয়েছে। আবার যারা ভারতীয় রোহিঙ্গা, তাদেরও পুশ ইন করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সে জন্য আমরা একটা প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি।’

বিজিবির তথ্যানুযায়ী, ভারত গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে ৩৭০ জনকে ঠেলে দিয়েছে। তাঁদেরও একইভাবে ঠেলে দেওয়ার ইচ্ছা আছে কি না, এমন প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘তাঁরা যদি আমার দেশের নাগরিক হন, তাহলে তো পুশ ব্যাক করার অধিকার আমাদের নেই। আমাদের দেশে যাঁরা অবৈধ ভারতীয় আছেন, তাঁদের আমরা এভাবে পুশ ব্যাক করব না। আমরা তাঁদের যথাযথ চ্যানেলে ফেরত পাঠাব। কেননা, পুশ ইন বা পুশ ব্যাক কোনো আইনসম্মত পদ্ধতি নয়।’

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার সীমান্তের রায়মঙ্গল নদী ও বয়েরসিং খালের সংযোগস্থলে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বয়েসিং ভাসমান বিওপিছবি: বিজিবি

বয়েসিং ভাসমান বিওপি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এই ভাসমান বিওপি একটি অপারেশনাল প্ল্যাটফর্ম, যা জলপথে সীমান্ত এলাকায় টহল ও নজরদারি জোরদার করবে। বয়েসিং ভাসমান বিওপি শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি একটি কৌশলগত নিরাপত্তা পদক্ষেপ, যা সীমান্ত এলাকায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিজিবির অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এই উদ্যোগ সীমান্তে নতুন নিরাপত্তা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং কার্যকর বর্ডার ম্যানেজমেন্টে সহায়ক হবে।

বয়েসিং ভাসমান বিওপির উদ্বোধনকালে কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে উপদেষ্টা সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত বিজিবির নীলডুমুর ব্যাটালিয়ন পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি একটি বৃক্ষ রোপণ করেন এবং ব্যাটালিয়নের সদস্যদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

Check Also

ছোট গাছে সাত ছড়া সৌদি খেজুর, লাভের আশা সাতক্ষীরার চাষির

সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নে যখন পৌঁছালাম, সূর্য তখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।