সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালী ভূমিহীন জনপদে অগ্নিসংযোগ ও বোমা নিক্ষেপ করে ত্রাস সৃষ্টি করার জবাবে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় দেবহাটার খালিষাখালী কামরুলনগর আবাসন এলাকায় এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, শহীদ কামরুল নগর ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্রের সভাপতি আনারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, ভূমিহীন কার্যকরী কমিটির সভাপতি আব্দুল হালিম, উপদেষ্টা শহিদুল ইসলাম, সহ বুল্লা, রফিকুল ইসলাম, রিপন, মনি, রহমান প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালী এলাকার ভূমিহীন জনপদের অসহায় নিরীহ ভূমিহীন মানুষ। আমাদের বসবাসের মত কোন জমিজায়গা নাই। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ সি এস ১৮১২ খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক চন্ডিচরন ঘোষের পরিত্যাক্ত ৪৩৯.২০ একর জমি, যা লাওয়ারেশ হিসেবে সরকারী ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে ৬৩৫টি পরিবার শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছিল। এরপর কথিত জমির মালিকরা আমাদের নামে বিভিন্ন সময়ে থানায় ফৌজদারী মামলা দায়ের করে আসছে। উক্ত জমিতে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ে সাবেক জেলা প্রশাসক কে উক্ত জমি দেখভাল করার নির্দেশ দিলেও তিনি তা নেননি বরং তিনি ২৯/১১/২১ তারিখে ভূয়া জাল জালিয়াতি কাগজপত্র তৈরি করে জমির মালিকানা দাবিদার ব্যক্তিদ্বয়ের পক্ষে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করে সরকারি সম্পত্তি নিজ দখলে না নিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ৬৩৫টি ভূমিহীন পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার আদেশ দেন সাবেক জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির। উক্ত আদেশের ভিত্তিতে ভূমিহীন ৬৩৫টি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে সাতক্ষীরা জেলার ইতিহাসে নজির বিহীন ঘটনা ঘটিয়ে দেন সাবেক জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির। এই সুযোগে উক্ত সম্পত্তি জবর দখল করে ভোগদখল করেন চিহ্নিত জালিয়াতী কাজী গোলাম ওয়ারেশ দিংসহ একাধিক ব্যক্তিরা। কথিত জমির মালিক ডা: নজরুল ইসলাম, ইকবাল মাসুদ ও আ: আজিজের মত ভূমিদস্যুরা। তারা টাইটেল লুট নং-১৮/২০১০ ও আপিল মামলা নং ২১৬/১২ জমির মালিক দাবি করে এই চক্রটি বিভিন্ন আদালতে মামলা দায়ের করে সরকারি সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছিল। উক্ত ঘটনাটি সাতক্ষীরা জজ কোর্টের বিজ্ঞ জিপি গাজী লুৎফর রহমানের দৃস্টিগোচর হওয়ার পর থেকে সরকার পক্ষ নড়ে চড়ে বসে এবং উক্ত সম্পত্তি রিসিভার নিয়োগের জন্য উক্ত আদালতের স্বরণাপন্ন হন এবং বিজ্ঞ আদালত উক্ত সম্পত্তি রিসিভার নিয়োগ করেন। ভূমিদস্যু ও ভূমি জবর দখলকারী জাল জালিয়াতি কাগজপত্র সৃজনকারীদের বিরুদ্ধে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কোন পদক্ষেপ নেননি। উক্ত জমিতে ৬৩৫টি পরিবার বর্তমান বাড়ি ঘর নির্মাণ করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখলে আছে। ভূমিহীনদের পক্ষে আনারুল ইসলাম (সহ ২৮জন) রিট পিটিশন ১৫০০/২০২২ দায়ের করেন এবং হাইকোর্ট থেকে অদ্যবধি স্টাট্যাস্কো বহাল আছে। কিন্তু উক্ত ভূমিদস্যু ও এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী একাধিক হত্যা গুম ও ডাকাতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আকরাম ডাকাত, আয়ুব আলী গাজীর ছেলে কালু ডাকাত ওরফে শরিফুল, জব্বারের ছেলে মোকরম শেখ, সাইফুল, রিয়াজ মৌলভী, শওকাত, কালু গাজীর ছেলে আ: আলিম, বাকু ছিদ্দিক সহ বহিরাগত সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত এলাকায় বোমা ফাটিয়ে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। গত ২০মে সকাল ১০টার দিকে ভূমিহীন মমতাজ ওরফে ভাদ্রুী,নার্গিস, তুলি, খাদিজা ও মজিদের বাড়িতে যেয়ে তাদের বাড়িঘর ভাংচুরসহ অগ্নিসংযোগ করে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে। মমতাজ ওরফে ভাদ্রুীর দুই পা ভেঙে ও হাতে কোপ দিয়েছে উক্ত সন্ত্রাসীরা। পরবর্তিতে ভূমিহীন জনপদের লোকজন একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসীদেরকে ধাওয়া করলে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে গুলি করতে করতে চলে যায়। কিন্তু সন্ত্রাসী বাহিনীর সক্রিয় সদস্য একাধিক হত্যা, অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার আসামী দেবহাটা উপজেলার নাংলা গ্রামের আ: গফুর ও আতিয়ার ওরফে আকাশ ঘটনাস্থলে জনতার হাতে আটক হয়। এঘটনায় ওখানকার বসবাসরত ভূমিহীনরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে।
ভূমিহীন জনপদের বসবাসরত ভূমিহীনরা ওইসব ভূমিদস্যু ও তাদের সন্ত্রাসীদের তদন্ত পূর্বক গ্রেফতার ও বিচার দাবী করে প্রধান উপদেষ্টাসহ পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
