এবারেরে ঈদে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর সাজে সাতক্ষীরার রূপসী ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ দর্শণার্থীদের বিনোদন নিশ্চিত করতে নানা প্রস্তুতিতে নতুন রুপে সাজানো হয়েছে দেবহাটা তথা সাতক্ষীরার অন্যতম নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর পিকনিক স্পট রুপসী ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। ইছামতি নদীর কোল ঘেঁষে এ পর্যটন কেন্দ্রটি ঈদ উপলক্ষে অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাংলাদেশ—ভারত সীমান্ত নদী ইছামতির কোল ঘেঁষে মিনি সুন্দরবন নামে পরিচিত পর্যটন কেন্দ্রটি দর্শণার্থীদের কাছে বেশ পূর্ব থেকেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ম্যানগ্রোভের মধ্যে কেওড়া, গোল, বাইন, কাঁকড়া, নিম, সুন্দরী, হরকচাসহ নানা প্রজাতির গাছ—গাছালীর মধ্যে হরেক রকমের হাঁস, মুরগী, খরগোশ, বানর, পাখি এনে দিয়েছে এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। নদী ভ্রমণের জন্য আছে নৌকা। স্থলে বেড়ানোর জন্য আছে ঘোড়া। বাচ্চাদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য ট্রেন, দেখার জন্য আছে বিভিন্ন কাটুন বা ফেস্টুন আর তার সাসাথে আছে বাগান ভর্তি ফুল।

জেলার সদর হতে প্রায় ৩০কিলোমিটার দুরে ইছামতি নদীর তীরে শিবনগর মৌজায় অবস্থিত এ বনটি। এটি উপজেলার “রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র” নামে পরিচিত। ইছামতি নদীর তীরে ২০১২ পরবর্তী তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড. গোলাম মোস্তফা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনম তরিকুল ইসলামের উদ্যোগে সরকারী খাস জমিতে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয় এই রুপসী ম্যানগ্রোভকে। ১৮৬৭ সালে টাউনশ্রীপুর গ্রামটিই এক সময় পৌরসভা ছিল। এখানে বাস ছিল প্রায় ১৮জন জমিদার ও বিখ্যাত ব্যক্তির। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর টাউনশ্রীপুর পৌরসভা বিলুপ্ত হয়। জমিদারীত্বের অবসানের পর বিখ্যাত ব্যক্তিরা কোলকাতা বা অন্যান্য বড় শহরগুলিতে চলে যান। ফলে টাউনশ্রীপুরের সেই শ্রী আর ধরে রাখা যায়নি। তবে সেই সব বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাসস্থান ও অন্যান্য স্থাপনাগুলি এখনো এই এলাকার প্রত্নতত্ব নিদর্শণ হিসেবে থেকে গিয়েছে। এসব কারনে শুধু ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নয় টাউনশ্রীপুর এলাকা ঘিরে রয়েছে পর্যটনের ব্যাপক সুযোগ।

এবারের ঈদে একটু লম্বা ছুটি থাকার কারণে মিনি সুন্দরবন দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন বিনোদনপ্রেমী আবাল—বৃদ্ধ—বনিতা। কেউ আসছেন পরিবার পরিচনসহ আবার কেউ আসছেন বন্ধু বা প্রিয় কোন মানুষকে সাথে নিয়ে। এখানে আছে গেস্ট হাউস, নামাজের জায়গা। মহিলাদের নামাজের জন্য আলাদা স্থান আছে। দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে লোকজনের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ঈদের দিন থেকে দুপুরের পরপরই এই বিনোদন কেন্দ্রে শতশত মানুষের ভিড় পড়ে যাচ্ছে। এখানে বিভিন্ন জাতের কবুতর, লাভ বার্ড, কোকাটেল, পাজেরিকা, টিয়া, কালিম পাখি, তোতামুখি, ইমু পাখিসহ বহু পাখির আবাসস্থল হয়ে উঠেছে এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। উপজেলার সদর ইউনিয়নের শীবনগর এলাকায় তিন নদীর মোহনায় ১৫০বিঘা জমিতে অবস্থিত এই বনের বুক চিরে প্রায় ৩০বিঘা জমিতে অনামিকা লেক, পিকনিক স্পট, শিশুপার্ক, কনফারেন্স রুম, পাকা ট্রেইল, সেলফি পয়েন্ট, প্যাডেল চালিত বোড, ইছামতির পাড়ে বসে সূর্যাস্ত উপভোগের দারুণ সুযোগও এখানে পাচ্ছেন আগত মানুষেরা। সুপেয় পানির ব্যবস্থা ছাড়াও নতুনভাবে যোগ হচ্ছে রাত্রিযাপনের জন্য কটেজ। নানামূখি বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা বনটিতে বর্তমানে এই এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

ঘুরতে আসা দর্শণার্থীরা জানান, বনটি ইছামতি নদীর পাড়ে হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। এপাশে বাংলাদেশ অপরপাশে ভারত আর মাঝখানে নদী। জায়গাটি অত্যন্ত নিরিবিলি হওয়ায় সব বয়সী মানুষের কাছে প্রিয়। তাছাড়া বিভিন্ন দিবস বা ছুটির দিনে বেশি দুরে না যেয়ে দেবহাটায় এসে সুন্দরবন ভ্রমনেরও স্বাদ পান তারা। নারী ও শিশুদের জন্য স্থানটি খুবই নিরাপদ বলেও দাবি দর্শণার্থীদের। এই স্পটটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ছুটি ও বিভিন্ন উৎসব ঘিরে দিনে ৩/৪ হাজার দর্শণার্থীদের পদাচারনা ঘটে এই বিনোদন কেন্দ্রে। দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জেলার মধ্যে এই রুপসী ম্যানগ্রোভটি সকল শ্রেণির মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও অন্যরকম অনুভূতির জায়গা উল্লেখ করে জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এই বিনোদন কেন্দ্রটির নানারকম রুপ দেয়া হচ্ছে এবং আরো অনেক কাজ চলছে। তিনি বলেন, সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় প্রশাসনের বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এখানে এসে যেমন বিমোহিত হন ঠিক তেমনি সাধারণ মানুষও এখানে এসে প্রশান্তি পান।
সবদিক বিবেচনা করেই ভ্রমন পিপাসুদের কাছে এই বিনোদন কেন্দ্রটির আকর্ষন অন্যরকম বলে ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান জানান। বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার সোহেল বলেন, বিনোদন কেন্দ্রে এসে যাতে কেউ কোন প্রকার হয়রানি না হয় সে ব্যাপারে তাদের স্টাফরা নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন। দর্শণার্থীদের বিনোদনের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আবু সাই; বিশ^াস
সাতক্ষীরা
৩/৬/২৫
০১৭১২—৩৩৩২৯৯

 

Check Also

ছোট গাছে সাত ছড়া সৌদি খেজুর, লাভের আশা সাতক্ষীরার চাষির

সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নে যখন পৌঁছালাম, সূর্য তখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।