উটও আছে, ভেড়াও আছে- গাজার হাটে নেই শুধু ক্রেতা

ঈদের দিনের সকাল। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর আল মাওয়াসিতে বসেছে একটি কোরবানির পশুর হাট। হাট বলতে যা বোঝায়, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক ফাঁকা ও নিঃস্তব্ধ কিছু। সেখানে দেখা গেল একটি উট, একটি গরু আর হাতে গোনা কয়েকটি ভেড়া ও ছাগল।

আশপাশে কিছু শিশু ও কৌতূহলী মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ দেখছে, কেউ ছবি তুলছে- কিন্তু কেউই এগিয়ে এসে বলছে না, ‘এইটা কত?’ কেননা, এখানে নেই কোনো ‘ক্রেতা’।

শুক্রবার (৬ জুন), মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাতেও উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা।

কাগজে-কলমে ‘উদযাপন’ বলা হলেও বাস্তবে সেখানে নেই কোনো ঈদের আমেজ। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ, খাদ্য সংকট, অর্থনৈতিক দুর্দশা ও মানবিক বিপর্যয়ের মাঝে ঈদ যেন কেবল একটি স্মৃতি।

ঈদুল আজহার প্রধান অনুষঙ্গ কোরবানি। মুসলিমরা এদিন পশু জবাই করে তার একাংশ বিলিয়ে দেন দরিদ্রদের মাঝে। কোরবানির এই ঐতিহ্য একসঙ্গে আনন্দ, সংহতি ও ত্যাগের বার্তা বহন করে। কিন্তু গাজাবাসীর পক্ষে কোরবানি দেওয়া তো দূরের কথা-তাদের অনেকের পক্ষে একটুকরো রুটিও জোগাড় করা দায়।

বার্তাসংস্থা এপি জানায়, তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় প্রবেশ করেনি কোনো তাজা মাংস। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে বাইরে থেকে খাবার বা পশু ঢোকার সুযোগ নেই। গাজার ভেতরে যেসব পশু লালন-পালন করা হচ্ছিল, তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে মারা গেছে বিমান হামলায়, ক্ষুধায় কিংবা চিকিৎসার অভাবে।

বেঁচে থাকা যেসব পশু আছে, তাদের নিয়েই বসেছে আল মাওয়াসির হাট। সেখানে আব্দেল রহমান মাদি নামের এক মধ্যবয়স্ক বাবা এপিকে বলেন, আমার এমনকি রুটি কেনার সামর্থ্যও নেই। কোনো মাংস, কোনো সবজি কেনার সামর্থ নেই।

দূরের খান ইউনিস শহরে কিছু দোকানে দেখা গেছে খেলনা আর পুরোনো কাপড়। কিছু অভিভাবক ঈদের দিনে সন্তানদের মুখে একটুখানি হাসি ফেরাতে দরদাম করছেন। কিন্তু বেশিরভাগই দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন চুপচাপ।

হালা আবু নাকিরা নামে এক নারী বলেন, আগে ঈদ ছিল আনন্দ আর নতুন জামার দিন। কিন্তু এখন ঈদ মানেই অনাহার আর নিরাশা। তার কণ্ঠে ভেসে আসে হাহাকার, আমরা এখন বাজারে যাই শুধুই আটা খুঁজতে। প্রতিদিন কমদামে আটা খুঁজে বেড়াই। কিন্তু যা পাই, তাও কিনতে হয় অবিশ্বাস্য দামে।

শিশুরা যদিও পশুগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে একটু আনন্দ পায়, কিন্তু সেগুলো যেন এক নিঃশব্দ প্রদর্শনী-যেখানে আনন্দ নেই, কেবল অভাব আর অবরোধের দীর্ঘ ছায়া।

গাজার ঈদ এখন আর উৎসব নয়। এখনকার ঈদ মানে- একটি উট, একটি গরু, কয়েকটি ভেড়া আর অসংখ্য শূন্য পকেট।

সূত্র : এপি

Check Also

ছোট গাছে সাত ছড়া সৌদি খেজুর, লাভের আশা সাতক্ষীরার চাষির

সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নে যখন পৌঁছালাম, সূর্য তখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।