লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতার মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির ১২ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

লক্ষ্মীপুরে পূর্ববিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাউছার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির ১২ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় মামলাটি করেন নিহত কাউছারের স্ত্রী শিল্পী বেগম।

মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি রিয়াজ হোসেনসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি ১১ জন বিএনপির কর্মী।

এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী। শহরের সামাদ মোড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়। এর আগে দলটির নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সেখানে জড়ো হন।

জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন নুরনবী বলেন, ‘বিএনপির কয়েকজন কর্মীর হামলায় কাউছার আহমেদ মারা গেছেন।’

অন্যদিকে এ ঘটনার বিষয়ে আজ সকাল ১০টায় শহরের গোডাউন রোডের বশির ভিলা হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি। সেখানে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘একটি স্থানীয় ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়। মারামারির পর কাউছার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসকদের ধারণা, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে। সুরতহাল রিপোর্টেও তেমনটা উল্লেখ রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার আগেই বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা ঠিক হয়নি।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার রাজীবপুর এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রিয়াজ হোসেন ও বিএনপির কর্মী সোহাগ ও তাঁদের অনুসারীদের সঙ্গে জামায়াত নেতা কাউছারের ভাই আলতাফ হোসেনের মারামারির ঘটনা ঘটে। তখন কাউছারসহ তাঁর পরিবারের চারজন আহত হন। পরে তাঁরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

পরিবারের অভিযোগ, বিকেলে কাউছার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। নিহত কাউছার আহমেদ বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন জামায়াতের ওলামা বিভাগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতিও করতেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, পূর্ববিরোধের জেরে ৫ জুন দুপুরে রাজীবপুর এলাকায় বাদীর বাড়ির সামনে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। প্রথমে কাউছারের ভাইয়ের ওপর হামলা হয়। পরে কাউছার তাঁকে রক্ষা করতে গেলে তাঁর মাথার পেছনে রড দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে আরও মারধর করা হয়।

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা কাউছার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। আজ সকালে সদরের গোডাউন রোড এলাকার একটি মিলনায়তনে
লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা কাউছার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। আজ সকালে সদরের গোডাউন রোড এলাকার একটি মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহত ব্যক্তিদের সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের সামনে তাঁদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এতে ভয়ে তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। পরে সন্ধ্যায় কাউছারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মোন্নাফ বলেন, নিহত কাউছারের স্ত্রী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। তদন্ত চলছে।

Check Also

ছোট গাছে সাত ছড়া সৌদি খেজুর, লাভের আশা সাতক্ষীরার চাষির

সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নে যখন পৌঁছালাম, সূর্য তখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।