লন্ডন: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা তার সরকার দিয়েছে সেটি নির্বাচনের জন্য সঠিক সময়। ভোটের জন্য দেশের মানুষ প্রস্তুত হয়ে আছে।
সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার (১১ জুন) লন্ডনে চ্যাথাম হাউজের সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা এসব বলেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ১৭ বছর পর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে। আগামী জুলাই মাসে ‘জুলাই সনদ’ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে পাসপোর্ট প্রাপ্তি সুবিধাসহ তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আগে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে ‘মাধ্যম’ প্রয়োজন হতো। যার মাধ্যমে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হতো। এখন সরকারি বিভিন্ন সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে, যাতে সবাই সহজেই সেবা নিতে পারেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, সাত বছর আগে রোহিঙ্গারা যারা বাংলাদেশে এসেছিল তাদের অনেকে পাঁচ মাস বয়সী থেকে শুরু করে ৫ বছর বা ৭ বছর বয়সীও ছিল। তারা সবাই আজ যুবক বা কিশোর। এখন মার্কিন সরকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে তাদের ভরনপোষণ দেবে কারা। তাদের তো থাকার নির্দিষ্ট সময়ও নেই। বিষয়টি নিয়ে তার সরকার গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের কোনো দায়িত্বে তার থাকার ইচ্ছে নেই। এ সময় সব দলের অংশগ্রহণের একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া নারীদের অধিকার নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
লন্ডনে সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার (১১ জুন) লন্ডন স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েলের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। সফরের দ্বিতীয় দিনজুড়ে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, নীতি সংলাপ ও এক রাজকীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কর্মসূচি।
এরপর সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন লন্ডনের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের পরিচালক বেন ব্ল্যান্ড এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. চিয়েটিজ বাজপাই।
সকাল ১১টায় অধ্যাপক ইউনূস চ্যাথাম হাউসে মূল বক্তা হিসেবে অংশ নেন এক নীতি সংলাপে। চ্যাথাম হাউসের মূল হল কক্ষে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিক, গবেষক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপ শেষে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে তার সম্মানে ম্যালকম রুমে একটি অভ্যর্থনার আয়োজন করবে চ্যাথাম হাউস। দিনের শেষ ভাগে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অধ্যাপক ইউনূস অংশ নেবেন সেন্ট জেমস প্যালেসে আয়োজিত এক রাজকীয় নৈশভোজে। ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের দ্য কিংস ফাউন্ডেশন-এর ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাজা চার্লস নিজেও উপস্থিত থাকবেন।