হুইপপুত্রের হুমকির অডিও নিয়ে তোলপাড়

জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের হুমকির অডিও রেকর্ড নিয়ে তোলপাড় চলছে চট্টগ্রামে।
জুঁয়া-ক্যাসিনোয় কলুষিত ক্রীড়া সংগঠন চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব জব্দ নিয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া স¤পাদক দিদারুল আলম চৌধুরীকে প্রাণনাশের হুমকিসহ কুরুচিপূর্ণ কথা বলার অভিযোগ উঠে শারুনের বিরুদ্ধে।
এই অডিও গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর হুইপপূত্র শারুন ভিডিও বার্তায় এটি মিথ্যা দাবি করে তার প্রতিবাদ জানান। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে হুইপ পূত্রের ভিডিও প্রতিবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে অডিওটি মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য ১০ কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেন দিদারুল আলম চৌধুরী। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডির টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাসও দেন তিনি।
এর আগে বুধবার রাতে ভিডিও বার্তায় হুইপপূত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন দাবি করেছেন, দিদারুল আলম তার উস্কানিমূলক অশ্লীল কথাগুলো কেটে ফেলে দিয়ে বিভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে শুধুমাত্র তার রাগান্বিত বক্তব্যগুলো প্রচার করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
আর দিদারুল আলম বলেন, শারুনের সাথে কথোপকতনের অডিও রেকর্ডটি এডিট করা হয়েছে এমন দাবি তার। এতে নিশ্চিত হলাম যে, রক্ত তার নিজস্ব গতিতে চলে এটাই স্বাভাবিক। অডিও রেকর্ডে একটি শব্দও যদি এডিট করা হয়েছে প্রমাণ করতে পারলে আমি ১০ কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলাম।
এছাড়া আমি তাকে বার বার কল করেছি বলে যে উক্তি করেছে সে উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বলছি, গত কয়েক বছরের মধ্যে তার সাথে আমার মোবাইলে কথোপকথন হয়েছে- কললিস্ট থেকে এমন কিছু প্রমাণ করতে পারলে আরো ১০ কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলাম।
ওই কথোপকথনে শারুন বলেছিল, আংকেল আমাকে ফোন করতেন, আমি আমার মোবাইল সেটটি চুরি হওয়ায় তার নাম্বারটি হারিয়ে ফেলেছি বলে তাকে জানাই, যা ওই অডিও রেকর্ডের কথোপকথনে আছে।
দিদারুল আলম টাইমলাইনে লিখেন, ১৯৮৪ সালের ২১ জানুয়ারি আমার শিশু পুত্র মো. জাবের চৌধুরী ১ মাস ৭ দিন বয়সে মৃত্যুবরণ করলে তার দাফন সেরে আমি ক্রিকেট দল নিয়ে ফাইনাল খেলায় মাঠে নেমে বিজয় দিবস ক্রিকেটে চ্যা¤িপয়ন হয়েছিলাম।
গত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্ণামেন্ট চলাকালীন সময়ে শামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুনের সাথে উপরোক্ত বিষয়ে আলাপচারিতায় সে বলে, আংকেল আমার জন্মও তো ১৯৮৪ সালে। ওই মুহূর্তে আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার ছেলে বলে সম্বোধন করি।
মোবাইলে আলাপচারিতার বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন জনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চাপ সৃষ্টি করলেও ওই ছেলে স¤পর্কটি মনে এনে কিছু করিনি এবং কাউকে করতেও দিইনি। আজ প্রমাণিত হল যে, আমি ছেলের আদরে যতই দামী কোর্ট পরায় না কেন প্রতারকের রক্ত থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া স¤পাদক দিদারুল আলম চৌধুরীকে প্রাণনাশের হুমকিসহ কুরুচিপূর্ণ কথা বলার অভিযোগ উঠে পটিয়ার সাংসদ ও হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষা চেয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি আবেদনও করেছেন এ ক্রীড়া সংগঠক।
অভিযোগে দিদারুল আলম চৌধুরী উল্লেখ করেন, তিনি আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সাল থেকে তাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রাখা হয়। সেই হিসেবে প্রিমিয়ার ব্যাংক জিইসি মোড় শাখায় চট্টগ্রাম আবাহনী ফুটবল কমিটি নামে একটি যৌথ হিসাব খোলা হয়। হিসাবের স্বাক্ষরকারী হিসাবে ক্লাবের মহাসচিব শামসুল হক চৌধুরী, ম্যানেজার সাইফুদ্দিনের পাশাপাশি দিদারুল আলমের স্বাক্ষর নেওয়ারও কথা সব ধরনের লেনদেনে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাকে অন্ধকারে রেখে ওই হিসাব থেকে টাকা পয়সা লেনদেন করা হচ্ছিল। সেজন্য দিদারুল এ মাসে অ্যাকাউন্ট বন্ধের আবেদন করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সব ধরনের লেনদেন স্থগিত রাখে।
এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে শামসুল হকের ছেলে নাজমুল করিম শারুন গত ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে দিদারুলের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। কথা বলার এক পর্যায়ে বন্ধ হওয়া ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে তিনি চাপ দিতে থাকেন। সেটা না মানলে প্রবীণ এ ক্রীড়া সংগঠককে হুমকি-ধমকিসহ অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেন। এমনকি ‘চোয়ারাই দাত ফেলায় দিয়ুম’ (চড় মেরে দাত ফেলে দেব) এমন হুমকিও দেন। আর এ নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে।

Check Also

ঘূর্ণিঝড় “দানা” নিয়ে আতঙ্কিত শ্যামনগর উপকূলবাসী

মোজাফফর হোসাইন: শ্যামনগর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে, আর এতেই আতঙ্ক নেমেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।