কলারোয়ার ‘এবি পার্ক’ থেকে হাতেনাতে পতিতা-খরিদ্দারসহ ৯জন আটক

নিজস্ব প্রতিনিধি: অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে কলারোয়ার যুগিখালী এলাকার ‘এবি পার্ক’ থেকে ভ্রাম্যমান পতিতা ও খরিদ্দার এবং পার্কের ম্যানেজারসহ ৯জনকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে থানা পুলিশ। আটকদের এদিন সাতক্ষীরার আদালতে প্রেরণ করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার ওসি শেখ মুনীর-উল-গীয়াসের নির্দেশে তদন্ত ওসি মোহা. রাজিব হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে অভিযান চালিয়ে উপজেলার যুগিখালীর জাহাজমারি বিল এলাকার ‘এবি পার্ক’ থেকে হাতেনাতে তাদের আটক করে। এই ‘এবি পার্ক’টি স্থানীয়দের কাছে ‘জাহাজমারি পার্ক’ নামেও পরিচিত।
থানা সূত্রে জানা যায় অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ৩জন ভ্রাম্যমান পতিতা ও ৪জন খরিদ্দারকে হাতে নাতে ধরে ফেলে পুলিশ সদস্যরা। এছাড়াও ওই পার্কের ম্যানেজার উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামের মৃত ওমর আলীর পুত্র সাহেব আলী ওরফে শহর আলী (৫০) ও পরিচ্চন্নতাকর্মী কাম বাবুর্চি খুলনার পাইকগাছা থানার শাহাপাড়া দেবদুয়া গ্রামের মৃত ফজর আলীর স্ত্রী কুলসুম বেগম (৫০)কে অপকর্মে সহযোগিতার অভিযোগে আটক করা হয়। আটককৃত ভ্রাম্যামান পতিতা ও খরিদ্দাররা হলো সাতক্ষীরা সদর থানার এল্লারচর গ্রামের মৃত ইমান আলীর কন্যা আঞ্জুয়ারা বেগম (৩৫), ঝিকরগাছার বাকড়া গ্রামের জনৈক ব্যক্তির বাসাবাড়ির ভাড়াটিয়া একই থানার উজ্জলপুর গ্রামের মৃত নাজের মোড়লের কন্যা রেবেকা (৩৫), শার্শা থানার লাউতাড়া গ্রামের গাফফার আলীর কন্যা মোছা.মাহফুজা (২৫), যশোরের ঝিকরগাছা থানার বাকড়া আলীপুরের জামশেদ আলীর পুত্র রফিকুল ইসলাম (২৮), কেশবপুর থানার গোপসানা গ্রামের মান্নান মোড়লের পুত্র হাবিবুর রহমান (৩০) ও একই গ্রামের সুভাষ বিশ্বাসের পুত্র সূর্য বিশ্বাস (২৫) এবং মনিরামপুর থানার হায়াতপুরের আনিছুর রহমানের পুত্র মেহেদি হাসান (২৩)। সে সময় ‘এবি পার্কের’ মালিক যুগিখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাশার পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে ধৃত ৯জন আসামি ও পার্কের মালিক যুগিখালী গ্রামের মৃত এবাদ আলী ফকিরের পুত্র আবুল বাশার ফকিরের নাম উল্লেখসহ আরো ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কলারোয়া থানায় একটি মামলা (নং-২৬, তাং-২৩/১১/১৯ইং) হয়েছে।’
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গীয়াস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এব্যাপারে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রাজিব হোসেন জানান ‘দীর্ঘদিন যাবত ওই পার্কটিতে অবৈধ ও অসামাজিক কর্মকান্ডসহ জুয়ার আসর বসতো। পার্কের ভিতরে ও বাইরে রীতিমতো পাহারা দিয়ে এ কাজ চালাতো। তাই গোপন সংবাদ পেয়ে কৌশলে ওই পার্কে অভিযান পরিচালনা করে এর সত্যতা পেয়েছি। অসামাজিক কর্মকান্ডের দায়ে ৪জন নারীসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি আরো জানান ‘ওই পার্কের মধ্যে ছোট ছোট অনেক গুলো অস্থায়ী ঘর আছে, যার মধ্যে ঘন্টায় ১ হাজার টাকা চুক্তিতে পার্কের মধ্যে অবস্থান করা ভাসমান পতিতাদের খদ্দের এর কাছে ভাড়া দেয়া হয়। সেসময় ওই ঘরের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। ঘন্টা পুরো হলে তালা খুলে দেয় পার্ক কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও পার্কের মধ্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কৃত্রিমভাবে আড়াল করে রাখা আস্তানা করা আছে, সেখানে অবস্থান করতে হলে ৫’শত টাকা ভাড়া দিতে হয় পার্কে আগন্তুক স্কুল কলেজে পড়ুয়া প্রেমিক-প্রেমিকাদের। যেখানে সব ধরণের অপকর্ম চলে। দূর থেকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে ওই আস্তানার মধ্যে কোন মানুষ আছে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন ‘ভ্রমন পিপাসু ও বিনোদনের জন্য কলারোয়া উপজেলা সদর থেকে ১৪কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ফসলি মাঠের মধ্যে ২০১৪ সালে ‘এবি পার্ক’ নামে এই পার্কটি তৈরী করা হলেও মূলত অনৈতিক কর্মকান্ড চলে আসছিলো প্রথম থেকেই। দেহব্যবসার পাশাপাশি প্রায়-ই জুয়ার আসরের অভিযোগ ছিলো সবার মুখে। পার্কটি উদ্বোধনের পর থেকেই নানান নেতিবাচক কারণে এবি পার্ক বা জাহাজমারি পার্কের নাম শুনলেই অনেকের কাছে নাক-শিটকানোর অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগে পার্কটি বন্ধ করা ও নজরদারিতে রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলো এলাকাবাসী। এর আগেও একাধিকবার পার্কে জুয়ার আসরে অভিযান চালানোর খবর পাওয়া গিয়েছে।
তাদের অভিযোগ- ‘পার্কে অবৈধ কাজের সাথে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ইন্ধন ছিলো। থানা সদর থেকে দূরে হওয়ার কারণে পুলিশ কিংবা অন্যান্য প্রশাসন সেখানে গিয়ে হাতেনাতে কাউকে ধরতে পারতো না। এমনকি ফসলি মাঠের মধ্যে হওয়ায় ওই পার্কে যাওয়ার একমাত্র রাস্তার মুখে পার্ক সংশ্লিষ্টদের নজরদারির কারণে কোন অভিযান বাস্তবিক অর্থে আলোর মুখ দেখেনি। ফলে স্থানীয় সাধারণ মানুষের নেতিবাচক মনোভাব অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে।’
পুলিশসহ প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি পার্ক সংশ্লিষ্ট ও এ অনৈতিক কাজে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি এলাকার সার্বিক পরিবেশ সমুন্নত রাখতে পার্কটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার দাবিও জানানো হয়।’

Check Also

পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উদ্যোগে এনজিও প্রতিনিধি এবং যুব সংগঠনে নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সভা

 আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরাঃ পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে এনজিও প্রতিনিধি এবং যুব সংগঠনে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।