নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ২ ০ ১ ৬ # ঘুরে দাঁড়ানোর প্লাটফর্ম বানাতে চায় বিএনপি

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত বিএনপির মূল ফোকাস এখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন (নাসিক)। কার্যত এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায় দলটি। এ জন্য সর্বশক্তি দিয়ে বিএনপি নেতারা মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনের শেষ মিনিট পর্যন্ত টিকে থাকতে পুরো সিটিতে তৈরি করা হচ্ছে সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক। আঁটা হচ্ছে কেন্দ্রভিত্তিক পরিকল্পনা।
দলটির নেতারা বলছেন, নাসিক নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত। যদি তারা বিজয়ী হন, তাহলে পরবর্তী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট প্রভাব থাকবে। অন্য দিকে, সরকার বরাবরের মতো কারচুপির নির্বাচন করে ফল ছিনিয়ে নিলে সেটিও আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরিতে ‘নতুন টনিক’ হিসেবে কাজ করবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী নাসিক নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে গঠিত মনিটরিং টিম নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে সরাসরি নাসিক নির্বাচনের মাঠে কাজ করছে কেন্দ্রীয় সমন্বয় টিম। স্থানীয়ভাবেও প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম স্থানীয় টিমকে প্রতিনিয়ত নির্বাচনী প্রচারে নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণেও কয়েকজন নেতা কাজ করছেন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছেÑ এক, কারচুপিসহ ক্ষমতাসীনদের যেকোনো বিতর্কিত কর্মকাে র প্রমাণ সংগ্রহে রেখে পরবর্তীতে সরকারকে চাপে ফেলা এবং দুই, দলের যেসব নেতা সঠিকভাবে কাজ করছেন না, তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া।
জানা গেছে, পুরো নির্বাচনের বিষয়টি নজরে রাখছেন খালেদা জিয়া। কোথাও কোনো গাফলতির তথ্য পাওয়া মাত্র সংশ্লিষ্ট নেতাকে ডেকে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া নারায়াণগঞ্জে দেশের বিভিন্ন জেলার ভোটার থাকার কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের সেখানে প্রতিদিন যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন চেয়ারপারসন।
বিএনপি সূত্র মতে, নাসিক নির্বাচনের কারণে দলের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তে এরই মধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলপর্যায়ে বিএনপির পুনর্গঠনের পাশাপাশি অন্যতম অঙ্গসংগঠন যুবদল এবং ঢাকা মহানগর বিএনপি পুনর্গঠনের পরিকল্পনা ছিল। এখন নতুন কমিটি দেয়া হলে দলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত পেছানো হয়েছে। নির্বাচনের পরে কয়েকটি জেলা কমিটির পাশাপাশি যুবদল এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির দু’টি কমিটি ঘোষণা করা হবে। এর পরেই বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা নির্বাচনের’ দিনকে কেন্দ্র করে রাজপথে নামার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান, নাসিক নির্বাচনের কারণে সাংগঠনিকভাবে উপকৃত হয়েছে বিএনপি। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক কর্মকাে ব্যাপক গতি এসেছে। কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার পরেও অনেক নেতা নিষ্ক্রিয় ছিল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতাকে সরাসরি এই প্রচারণার সাথে যুক্ত করা হয়েছে। তারা নির্বাচনের মাঠে বিএনপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
সিনিয়র এক নেতা বলেন, দুই দফা সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল না হওয়ায় বিএনপি কার্যত ঘরে বসে গিয়েছিল। সভা-সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে দলটির কার্যক্রম শুধু সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই ছিল সীমাবদ্ধ। নাসিক নির্বাচনের কারণে সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। এবার এই নির্বাচনের ফলাফল এবং ক্ষমতাসীনদের কর্মকা বিএনপিকে নতুনভাবে রাজনীতিতে গতিমান হওয়ার সুযোগ এনে দিচ্ছে। আর সেইভাবেই দলের কৌশল ঠিক করা হচ্ছে।
দলটির হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, নাসিক নির্বাচনে জয়-পরাজয় যাই হোক তাকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। ধানের শীষের প্রার্থী জয়লাভ করলে দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলকে বিএনপি বোঝাতে সক্ষম হবে সরকারের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী এবং গায়ের জোরে তারা ক্ষমতায় আছে। আর ভোট ডাকাতি ও গায়ের জোরে নির্বাচন করে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করানো হলেও তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হবে। সেটিও বিএনপির পক্ষেই আসবে। আর এ থেকে প্রমাণিত হবে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। ফলে ইসি পুনর্গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের পক্ষে জনমত বা আন্দোলন গড়ে তোলা দলটির জন্য সহজ হবে।
সূত্র মতে, বিএনপির কাছে এমন তথ্য আছে যে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের মতো জোর করে ফল নিজের পক্ষে নিতে চাননা তিনি। এ জন্য ইতিবাচক ফল পেতে প্রচারণায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। আর কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনের আগে বা ঢাকা সিটি নির্বাচনের মতো মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে বর্জন করার কোনো ইচ্ছা নেই দলটির।
এসব বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের মানুষ আজ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, তার ওপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, তার ওপর নির্ভর করবে আরেকটি নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ফলে অবশ্যই জনগণের বিজয় হবে এবং আগামীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

Check Also

সরকারি কর্মচারীদের সহযোগিতা না পেলে নতুন লোক বসানো হবে: চট্টগ্রামে আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সরকারি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।