আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: নিম্ন চাপের ফলে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরাতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। পাকা ধানক্ষেত,ইটেরভাটা ও সবজি খেত নষ্ট হযেছে গেছে। টানা তিনি দিনের বৃষ্টিতে জেলার কয়েক হাজার কৃষক পথে বসেছে। ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
জেলার অধিকাংশ ইট ভাটা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। জেলা শতাধিক ইটভাটার পাড়ান নষ্ট হয়েছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন জেলার ইটভাটা মালিকরা।সাতক্ষীরা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম জানান, অসময়ে বৃষ্টির কারণে জেলা ইটভাটা গুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে লক্ষ-লক্ষ প্রস্তুতকৃত কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। স্বরণকালের ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ইটভাটা মালিকেরা।
অনেক ভাটা মালিকেরা ব্যাংক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু বছরের শুরুতেই এ বড় ধরনের ধাক্কায় সর্বশান্ত হয়ে গেছেন তারা। প্রতিটি ভাটা মালিক ব্যাবসার শুরুতেই ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। অনেক ভাটা মালিকের পক্ষে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
আড়াই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তাতে ফুলকপি চাষ করেছিলেন কৃষক আব্দুস সালাম। ফুলও ধরেছিল থরে থরে। ফুলে ফুলে ভরে গিয়েছিল কৃষক আব্দুস সালামের ক্ষেত। ফুলকপির ক্ষেতের আইলে পোতা ডালে বসে শিষ দিতো দোয়েল। এমন দৃশ্য দেখে মন ভরে উঠতো আব্দুস সালামের। বুক ভরা আশায় স্বপ্ন বুনতো সে। কিন্তু অগ্রহায়ণের বৃষ্টি কৃষক আব্দুস সালামের স্বপ্নকে তছনছ করে দিয়েছে। টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে ফুলে ফুলে ভরা সেই ক্ষেত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। শুধু আব্দুস সালামের ফুলকপির ক্ষেত নয়, আব্দুস সালামের মতো অনেক কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। আব্দুস সালামের বাড়ী ফিংড়ী ইউনিয়নে। সদর উপজেলা আগরদাঁড়ী ইউনিয়নের কৃষক আবুল খায়ের সরদার শীতকালীন সবজির পাশাপাশি চাষ করেছিলেন সরিষার। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সর্বনাশ হয়েছে তার। সে সরিষা ক্ষেতগুলো ছিল কাচা হলুদের আবরনে ফুলে ফুলে ঢাকা, যেন প্রকৃতির রং তুলির ক্যানভাস। সেই ক্যানভাস আজ তছনছ হয়ে গিয়েছে। নগরঘাটা ইউনিয়নের কৃষক আলফাজ উদ্দিন জানান, তার এলাকায় ওলকপি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, পেয়াজ, বেগুন, সরিষাসহ প্রত্যেক সবজির ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসময়ের বৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে কৃষকের হাসি।শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ থেকে পিযুষ বাউলিয়া জানান, অসময়ের বৃষ্টিতে সেখানের সবজিসহ আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকের কাটা ধানে মই দেওয়ার অবস্থার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানির উপর ভাসছে ধান।এদিকে কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা থেকে শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, তার এলাকায়ও সবজির পাশাপাশি আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
সদর (শহর) উপ সহকারী কৃষি অফিসার রঘুজিৎ গুহ বলেন, অসময়ের বৃষ্টি কৃষকের সাজানো স্বপ্নকে বিদ্ধস্থ করেছে। যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। ক্ষতি পুষিয়ে কৃষকদের ঘুরে দাড়াতে তিনি অতি দ্রুত কাটা আমন ধান ক্ষেত থেকে তুলে আঙিনায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সাথে যে সব সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে সে সব ফসলের স্বল্প মেয়াদী আবাদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। প্রয়োজনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নেওয়ারও আহবান জানান তিনি।
১২ ডিসেম্বর,২০১৭ মঙ্গলবার:ক্রাইমর্বাতাডটকম/প্রতিনিধি/আসাবি