ভারত থেকে পুশব্যাক, সাতক্ষীরা সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ১৯ রোহিঙ্গা আটক

ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা: অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় সাতক্ষীরার পদ্মশাখরা সীমান্ত থেকে নারী ও শিশুসহ ১৯ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবি। বুধবার সকালে সদর উপজেলার পদ্মশাখরা সীমান্ত থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ১০ জন শিশু, ৬ জন নারী এবং ৩ জন পুরুষ রয়েছে।

আটক রোহিঙ্গারা হলেন মরিয়ম বেগম, আসমা খাতুন, রাশিদা খাতুন, সুমাইয়া বেগম, গুলশান আরা খাতুন, জাইনুল কেগম, মো. আলাউদ্দিন, আজিজুর রহমান ও এনায়েত আলি। অবশিষ্ট ১০ জন শিশু তাদের বয়স ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছর।

বিজিবির পদ্মশাখরা বিওপি কমান্ডার সুবেদার মোশাররফ হোসেন জানান, ভারত থেকে অবৈধভাবে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী পুরুষ সদর উপজেলার পদ্মশাখরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি সদস্যরা সেখানে অভিযান চালায়। এসময় সেখান থেকে নারী ও শিশুসহ ১৯ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।

আটক রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, তারা সবাই ভারত থেকে বিএসএফ-এর সহায়তায় বাংলাদেশে এসেছে। এর আগে ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই দফায় তারা মিয়ানমার থেকে ভারতের দিল্লীতে যান। সেখানে তারা বসবাস করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং খাদ্য বস্ত্র ও চিকিৎসা দিচ্ছে এই খবর পেয়ে তারা দিল্লী থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। বাংলাদেশে আসার কথা বললে বিএসএফ তাদেরকে সীমান্ত পার হতে সহযোগিতা করেছে বলে তারা জানায়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক শরিফ এনামুল হক জানান উদ্ধারকৃতরা বেশ ক্লান্ত। তাদেরকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারতে অবস্থানরত প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে বহিষ্কার করা হবে এবং নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। গত ৮ আগস্ট ভারত সরকার রোহিঙ্গাসহ অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত ও বহিষ্কার করার জন্য সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা আবেদনে রোহিঙ্গারা বলেছেন, তাদের বিতাড়ন হবে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। এতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের আবার মিয়ানমারে পাঠানো হলে দু’টি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে। কারণ আন্তর্জাতিক আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বসবাস নিরাপদ না হলে কাউকে জোর করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না। আবেদনে উদ্বাস্তুদের অধিকার সমুন্নতকারী আদালতের আগের বেশ কয়েকটি রায়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু ভারত সরকার তা মানতে নারাজ। এমনকি আদালতের রায় পর্যন্তও অপেক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক কর্মকর্তা সম্প্রতি মিডিয়ার কাছে স্বীকার করেছেন, তারা মরিচের গুঁড়া ছিটানো ও স্ট্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার করছে। কয়েকটি রাজ্যে ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থান মোলায়েম ভাষায় বললে, উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারতে অবস্থানরত প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে বহিষ্কার করা হবে এবং নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। এ অবস্থান অসাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতির বরখেলাপ। এই নীতি পক্ষপাতদুষ্ট, বৈষম্যমূলক ও রক্ষণশীল। এই অভারতীয় নীতি আগের আদর্শ থেকে সরে আসা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে ভারতের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়দায়িত্ব পরিত্যাগের শামিল।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।