ক্রাইমবার্তা রিপোট:ময়মনসিংহে উগ্রবাদী সন্দেহে আটক সাতজনের মধ্যে একজন ছাত্রলীগের নেতাও রয়েছেন। ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামের ইকবাল হোসেনের ছেলে আল আমিন (২৫) বাঘবেড় ইউনিয়ন শাখার সহ-সভাপতি। সোমবার দুপুরে আল আমিনসহ সাতজনকে শহরের কালিবাড়ি সড়কের আওয়ামী লীগের নেতা মরহুম অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল কাদিরের ছেলে অ্যাডভোকেট আসিফ আনোয়ার মুরাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র মতে, গ্রেফতারকৃত আল আমিন ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিনের মুন্সিরহাট দিঘিরপাড় গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেনের ছেলে। সে এক সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনির সাথে চলাফেরা করতো। পরবর্তীতে আল আমিন সারের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। ৬-৭ মাস আগে সে ওই ব্যবসা ছেড়ে দেয়। একই সময়ে হঠাৎ তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষণ করা যায়। আল আমিন দাঁড়ি রাখে এবং নিয়মিত নামাজ পড়ে। গত ২৭ মার্চের পর তাকে আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তার বাবার তেমন জমিজমা নেই। গত দুই/তিন মাস ধরে মাছের হ্যাচারির ব্যবসা করছেন। ব্যবসার পুঁজি কিভাবে সংগ্রহ করেছে তা কারো জানা নেই। জমিজমা বিক্রি করার খবরও কেউ জানে না।
বাঘবেড় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ হোসেন মিলন জানান, আল আমিন আওয়ামী লীগ পরিবারের ছেলে। তার চাচাতো ভাই জাকির হোসেন ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। চাচা মোফাখখারুল ইসলাম ছাত্রলীগের ইউনিয়ন শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি। দলের বিভিন্ন কর্মসুচিতে আল আমিন সামনের সারিতে থাকতো বলে তাকে ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদ দেওয়া হয়। সে জঙ্গি প্রমাণিত হলে অথবা কোনো ধরনের খারাপ কাজে জড়িত থাকলে অবশ্যই দল থেকে বহিস্কার করা হবে।
ধোবাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি বলেন, আল আমিনের বাড়ি তার বাড়ির পাশেই। তিনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগামে নিয়মিত অংশ নিতেন। ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন বছরখানেক আগে। ওই কমিটিতে আল আমিন আছে কি-না তার জানা নেই।
আল আমিনের চাচাতো ভাই বাঘবেড় ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির হোসেন জানান, জঙ্গি সন্দেহে আটক সাতজনের মধ্যে হালুয়াঘাট উপজেলার দরিয়াকান্দা গ্রামের মারফত আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামের (২৮) সাথে দুই বছর আগে আল আমিনের পরিচয় ঘটে। আল আমিন ব্যবসা ছেড়ে দিলে তাকে নিজের ব্যবসায় পার্টনার করে মাছের খাবারের ব্যবসা শুরু করে।
আল আমিনের বাবা ইকবাল হোসেন জানান, আল আমিন সার ও বীজের ব্যবসা করতো। লোকসান হওয়ায় ব্যবসা ছেড়ে দেয়। এরপর শহিদুর রহমান রতনের সাথে পরিচয় হয়। শহিদুর তাকে ব্যবসা করতে উদ্বুদ্ধ করলে মুন্সিরহাট বাজারে মাছের খাবারের ব্যবসা শুরু করে। এজন্য শেয়ার বাবদ দুই-আড়াই লাখ টাকা পুঁজি দেওয়ার কথা। গত ২৭ মার্চ আল আমিন ওই টাকা নিতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর তার কোনো খোঁজ না পেয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মোবাইল বন্ধ থাকায় আল আমিনের ‘বন্ধুতুল্য’ চাচা রাতুলের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, আল আমিনের মোবাইলটি হারিয়ে গেছে।
ইকবাল হোসেন জানান, আল আমিন ফুলপুর থেকে এক লাখ তেতত্রিশ হাজার টাকায় টিভিএস কোম্পানির মেট্রো প্লাস ওয়ান টেন একটি মোটরবাইক ক্রয় করে। ভাই-বোনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তিনি মাছের হ্যাচারি করেছেন।
তিনি আরো বলেন- আড়াই বছর বয়সে ওর মা মারা যাবার পর আমি কোলেপিঠে মানুষ করেছি। এমন কাজে তার জড়িত থাকার বিষয়টি ধারণা করতে পারছি না। আল আমিন দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে বলেও জানান তিনি। জঙ্গি তৎপরতার সাথে ছেলের জড়িত থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে আল আমিনকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে জঙ্গি হলে শাস্তি পাওয়া উচিত। কিন্তু নির্দোষ বলে প্রমাণিত হয়, এটা হবে তার জন্য খুবই দুঃখজনক।
ধোবাউড়া থানার ওসি শওকত আলী বলেন, ‘আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি আল আমিন ছাত্রলীগ করতো। তার বাবার মাছের হ্যাচারি রয়েছে। দুই ভাই-বোন রেখে তার মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায়। বাবা পরে দ্বিতীয় বিয়ে করলে আরো দুই সন্তান হয়। আল আমিন সৎ মায়ের ঘরেই বড় হয়েছে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে আল আমিন ছোট, সহোদর বড় বোন বিবাহিত ও স্কুল শিক্ষক বলেও জানান তিনি।
এদিকে ঢাকা থেকে বিশেষ টিম এসে আটককৃতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বুধবার তাদেরকে আদালতে হাজির করা হবে।
এদিকে আটক সাতজনের মধ্যে একজন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র রয়েছেন। তার নাম নাসির উদ্দিন (২৭)। তিনি নেত্রকোনা জেলা মোহনগঞ্জ উপজেলার টেংরাপাড়া গ্রামের মো. সবুজ মিয়ার ছেলে। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের এম-৪৬ ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তিনি। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাসির জানিয়েছে, এখানে লিউকোমেনিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেন।তিনি শহরের কালিবাড়ির ওই বাসায় ওঠার পর কলেজের কারো সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি বলে জানান পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ডা. আ ন ম ফজলুল হক পাঠান জানান, নেত্রকোনা জেলার নাসির নামে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের এম-৪৬ ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্র রয়েছে। আটক নাসির ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র কি-না এটি নিশ্চিত নয়। নাসির অনিয়মিত ছাত্র। তার সহপাঠীরা কয়েক বছর আগেই পাশ করে চলে গেছে। সে এখন শুধু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।