শিকলবন্দী এক যুগ

ক্রাইমবার্তা রিপোট:বড় বোন পাপড়ি খাতুনের বয়স ৩৩ বছর। ছোট বোন অনন্যা খাতুনের ৩০। হেসেখেলেই দিন কাটছিল তাঁদের। একপর্যায়ে তাঁরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ কারণে এক যুগের বেশি সময় ধরে তাঁদের শিকল পরিয়ে রাখছেন স্বজনেরা।2

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ও দুর্গন্ধযুক্ত একটি ঘরে ওই দুই বোনের বাস। চিকিৎসা ও যত্নের অভাবে তাঁরা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। থাকেন একই বিছানায়। পাপড়ি খাতুন কথা বলেন, পাশে লোকজন পেলে গানও শোনান। অনন্যা চুপচাপ থাকেন।

পাপড়ি খাতুন বলেন, ‘আপনি কি গান শুনবেন?’ তারপর একটি গানও শোনান। কী চান জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান। পায়ে বাঁধা শিকলটিও খুলতে চান।

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা গ্রামে বাস ওই দুজনের। বাবা আবদুল মান্নান ও শাহীনা বেগম মারা গেছেন আগেই। ছোট ভাই মুশফিকুর রহমান (১২) অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সংসার সামলাতে গিয়ে আরেক ভাই সম্রাট মিয়ার (১৯) পড়ালেখা হয়ে ওঠেনি।

সম্রাট মিয়া বলেন, ‘বাবা দেড় বিঘা কৃষিজমি রেখে গেছেন। অভাবের তাড়নায় অনেক আগেই তা বন্ধক রাখতে হয়েছে। অনেক সময় খাবারও সংগ্রহ করতে পারি না। তখন ঘরে বসে কাঁদি। বোনদের চিকিৎসা করব কীভাবে। বোনদের কষ্ট দেখে শিকল খুলে দিলে অন্য মানুষের বাড়ির রান্নাঘরে গিয়ে ভাত খেয়ে ফেলাসহ নানা সমস্যা করে। চাচা আবদুল হাই ছাড়া কেউ দেখতেও আসেন না আমাদের।’

স্থানীয় লোকজন ও পরিবার সূত্র জানায়, গরিব হলেও সুখী পরিবার ছিল আবদুল মান্নানের। তিনি উপজেলা পরিসংখ্যান বিভাগে ছোট পদে চাকরি করতেন। আদারভিটা উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৯৯৯ সালে পাপড়ি খাতুন আর ২০০১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অনন্যা খাতুনের আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাঁরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বন্ধ হয় লেখাপড়া। পাবনা মানসিক হাসপাতালে কয়েক মাস রেখে চিকিৎসাও করানো হয়। এরপরও ভালো না হওয়ায় সামাজিকভাবে বিব্রত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে ২০০৪ সাল থেকে পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয় তাঁদের। ২০১০ সালে আবদুল মান্নান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান। ২০১৪ সালে শাহীনা পারভীনও চলে যান পরপারে।

চাচা আবদুল হাই বলেন, ‘ওদের কষ্ট দেখে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার চেষ্টা করি। ভাতিজা সম্রাট অন্য মানুষের গরু লালনপালন করে এবং মানুষের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালায়। সে রান্নাবান্নাসহ সংসারের সব কাজ করে। অনেক সময় না খেয়েও থাকে। টাকার অভাবে দুই বোনের চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। ভালো চিকিৎসা করা হলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।’

আদারভিটা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শান্তেজা খাতুন বলেন, ‘পাপড়ি মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার গান ভালো লাগত। সবার সহযোগিতাই পারে তাদের সুস্থতা ফিরে দিতে।’

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম গতকাল বলেন, ‘এ ধরনের রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা করালে আমরা ওষুধ সরবরাহসহ সহযোগিতা করতে পারি। এ ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।’

 

Check Also

আব্দুর রহমান কলেজের বিধিবহির্ভূত এডহক কমিটি বাতিল চেয়ে আবেদন

সূত্র ঃ তারিখ ঃ ২০-১০-২০২৪ ইংবরাবরজেলা প্রশাসকসাতক্ষীরা। বিষয় ঃ বিধিবহির্ভূত এডহক কমিটি বাতিল প্রসঙ্গে। জনাব,যথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।