সগৌরবে মমতা ব্যানার্জীর প্রত্যাবর্তন…

Mamata1ঢাকা, ১৯ মে : সব জল্পনা কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে সগৌরবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতমায় প্রত্যাবর্তন করছেন মমতা ব্যানার্জী। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। অবশ্য এবার নির্বাচনের আগেই স্লোগান উঠেছিল পরিবর্তনের। ছিল ঘুষ, সারদা কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা। কলকাতায় ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার পর রব উঠেছিল, ৫ বছরেই ঘুরে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির হাওয়া। শেষ পর্যন্ত ভারতের এই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তার কিছুই হয়নি। কিন্তু সব শঙ্কা কাটিয়ে আবারও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় বসছে তৃণমূল কংগ্রেস। ফিরছে বিপুল বিক্রমে, আগের চেয়েও বেশি আসন আর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে।
বৃহস্পতিবার সকালে ভোট গণনা শুরুর পর অনানুষ্ঠাকি ফলাফলে দেখা গেছে, মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পথে। একের পর এক আসন থেকে কেবল জয়ের খবরই আসছে। ৫৪ বছর পর কোনও একক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে। রাজ্যের মোট ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২০৭টিতেই এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বাম-কংগ্রেসের জোট এগিয়ে ৭৮টি আসনে, বিজেপি ৬টি এবং অন্যান্য দল এগিয়ে ৩টিতে। প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল পেয়েছে ৪৬.১% ভোট। বাম-কংগ্রেসের জোট পেয়েছে ৩৬.৭%। এখন পর্যন্ত বিজেপি পেয়েছে ১০.৪% ভোট। অন্যান্য দল পেয়েছে ১০%।
এদিকে জয়ের খবর আসতে শুরুর পর সাংবাদিকদের সাথে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণই গণতন্ত্রের কান্ডারি। মানুষ নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে নিজের ভোট দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। কমিশনকে তিনি ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে দলের কর্মীদের সংযত থাকতে বলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, মমতাজির সঙ্গে কথা হয়েছে। অসাধারণ এই জয়ের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি। এর পরেই তিনি জানিয়েছেন, ‘রাজ্যে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার জন্য তাঁর প্রতি শুভ কামনাও রইল।
৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা নেন কংগ্রেসের এক সময়ের নেত্রী মমতা। ওই নির্বাচনে তার দল তৃণমূল পায় ১৮৪টি আসন। বামফ্রন্টের কাস্তে-হাতুড়ি ওই নির্বাচনে ৬০টি এবং কংগ্রেসের পাঞ্জা প্রতীক ৪০ আসনে জয় পায়। সেবার মমতার রাজনৈতিক মিত্র ছিল তার আগের দল কংগ্রেস। কিন্তু রাজনীতির পালাবদলের খেলায় এবার তাকে একাই লড়তে হয়। অন্যদিকে রাজ্যে এক সময়ের ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট মমতা হটাতে জোট বাঁধে কংগ্রেসের সঙ্গে।
বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের এ রাজ্যের ভোটের ফল নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশিদের আগ্রহ ছিল। বামফ্রন্টের জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় দুদেশের কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়। সে সময় জ্যোতি বসুর ভূমিকার কথা স্মরণ করা হয় এখনও। পক্ষান্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার আপত্তির কারণে আটকে যায় দুদেশের তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। পরে কেন্দ্রের চাপে মমতার সুর বদলালেও সেই চুক্তি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেশ বেকায়দায় ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হাচ্ছিল বিরোধী শিবির থেকে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি, নারদের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ায় কলকাতার ‘দিদি’ বেশ খানিকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন বলেই মনে হচ্ছিল।
ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাস ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কায় নির্বাচন কমিশনও এবারের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে। ৪ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ছয় দফার ভোটের সময়ে বদলি করা হয় বহু সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যকে। নির্বাচনের আগে আগে ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে তৃণমূলের পরাজয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও বুথফেরত জরিপেই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেন মমতা।

এবিএন/বৃহস্পতি/আন্তর্জাতিক/ডেস্ক/এমআর

Check Also

ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি

পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।