ঢাকা, ২১ মে : বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আরো শক্তিশালী হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলের মধ্যেই আঘাত হানতে পারে এবং সন্ধ্যার মধ্যেই সরে যেতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, রোয়ানু আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ শনিবার বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ক্ষতি মোকাবিলায় গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার মধ্যেই উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে সরে যেতে বলেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এরই মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল। তিনি বলেন, রাত ৮টার মধ্যে তাদের সরিয়ে নিতে সারাদেশে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ১৮ জেলার সাড়ে ২১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, এ নিয়ে বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আশা করি, ঝড়ো আবহাওয়ায় জানমালের ক্ষতি হবে না বাংলাদেশে। সরকারও ইতোমধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ক্ষতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে এমন ১৮টি জেলার ৩ হাজার ৮৫১টি আশ্রয়কেন্দ্রে সব মানুষকে আনা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা, খাওয়া ও চিকিত্সার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সারাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী সকল ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী ৩৭টি রুটসহ সারাদেশে যাত্রীবাহী সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এটি বলবত্ থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ শনিবার বিকাল/সন্ধ্যা নাগাদ বরিশাল-চট্রগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
শাহ কামাল বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে ৫৫ হাজার। এছাড়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট ও আনসার ভিডিপিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে।
আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু মোকাবিলায় চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল রাতেই জেলার ৪৭৯টি সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেয়া হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাইকিং শুরু হয়েছে। লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে চলে যেতে বলা হয়েছে। সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারে সাগর উত্তাল রয়েছে। গভীর সাগরে থাকা ফিশিং ট্রলারসমূহ ঘাটে ফিরে এসেছে। রোয়ানু মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে কক্সবাজারের প্রশাসন। নিচু এলাকার লোকজনকে নিরাপদে চলে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বাতিল করা হয়েছে সব সরকারি কর্মকর্তার ছুটি। সহকারী আবহাওয়াবিদ এ. কে. এম নাজমুল হক জানান, ভারী বর্ষণের ফলে কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
এবিএন/শনি/এক্সক্লুসিভ/আবহাওয়া/ডেস্ক/লাম