ঢাকা, ২২ মে : এবার ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের এক স্কুলশিক্ষকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর এলাকায় তাজেক প্রধান উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম ইব্রাহিম খলিল (৫০)। পুলিশ আহত আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় নিয়ে গেছে। ঘটনার শিকার ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে শনিবার বিকালে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আটককৃত শিক্ষক বলেছেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের পর নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশনের চেষ্টা করলে আমি সেটা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। এ কারণেই তার ক্ষুব্ধ পরিবার আমাকে পরিকল্পিত ভাবে ঘটনা সাজিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। পক্ষান্তরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ওসি আব্দুল মালেক বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওই ছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।
প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে একের পর এক আলোচিত ও অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব ঘটনায় অভিভাবকদের মনে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কান ধরে ওঠবস ও বন্দরের মীরকুন্ডি এলাকায় সহকারী শিক্ষকের এক ছাত্রীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই আবর ঘটলো ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা। শ্যামল কান্তি ভক্তের ইস্যু নিয়ে এমনিতেই উত্তপ্ত পুরো দেশ। তার উপর বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দরের মীরকুন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এক ছাত্রীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। এসব ঘটনা নিয়ে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মধ্যে শনিবার এমন ঘটনা ঘটায় নারায়ণগঞ্জের অভিভাবকদের মনে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। এছাড়া এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় শহরের চাষাঢ়া এলাকাতেও সড়ক অবরোধ করে রাখে স্থানীয় জনতা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবিন আহমেদ বলেন, শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। দুপুরের দিকে স্কুল ছুটি দেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় হঠাৎ হৈ চৈ শুনে রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখি আমাদের এক সহকারী শিক্ষককে স্থানীয়রা মারধর করছে।
প্রধান শিক্ষক বলেন, পরে তাদের কাছ থেকে জানতে পারি, শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্রেণিকক্ষে একা পেয়ে জাপটে ধরে যৌন হয়রানি করেছে। ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনেই তারা এসেছেন।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের স্কুলের এক শিক্ষকের বিয়ে ঠিক হয়েছে। সেজন্য শনিবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। তখন নবম শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার এক ছাত্রীকে ক্লাশ রুমে একা পেয়ে ইব্রাহিম স্যার জাপটে ধরেন। ওই সময় ওই ছাত্রী চিৎকার করলে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ইব্রাহিম স্যারকে হাতেনাতে আটক করে এবং স্কুলেরই কয়েকজন ছাত্র স্যারকে মারধর করে। এলাকাবাসী খবর পেয়ে স্কুলে গিয়ে ওই শিক্ষককে গনপিটুনি শুরু করেন। মারধরে ওই শিক্ষকের মাথা ফেটে যায়। পরে তাকে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক এবং স্থানীয় মুরুব্বীরা উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে।
এবিএন/রবি/শিক্ষাঙ্গন/ডেস্ক/প্রতিনিধি