রোয়ানোর ছোবলে প্রাণ গেলো ২৬ জনের : ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

Cyclone-Roanu1ঢাকা, ২২ মে : শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ছোবলে লণ্ডভণ্ড হওয়া দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। দুপুরের পর থেকেই মৃতের সংখ্যা বেড়ই চলেছে। এ প্রাণহানির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ সীমানা অতিক্রম করায় রোয়ানুর শঙ্কা থেকে মুক্ত হয়েছে উপকূলবাসী। অবশ্য নিম্নচাপের কারণে ঝড়ো বাতাস বইছে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে। স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়, তীব্র ঝড়ের আঘাতে চট্টগ্রামে ১২, ভোলায় ৪, ফেনীতে ১, কক্সবাজারে ৪, লক্ষ্মীপুরে ১, পটুয়াখালীতে ১ ও নোয়াখালীতে ৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েক শত লোকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণ এখনো নিরাপদ আশ্রয় ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। তাদের নিজ বাড়িতে ফিরতে আগামী দিনের দুপুর নাগাদ অপেক্ষা করতে হবে।
ঝড়ো হাওয়ার দাপট শুরু হয়েছিল শনিবার ভোর রাত থেকেই; সেই সঙ্গে বৃষ্টি। বেলা দেড়টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। এরপর ঝড়ের দাপট চলে আরও কয়েক ঘণ্টা।
একদিন স্থায়ী হওয়া ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় এলাকার অনেক ঘর-বাড়ি। গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এদিকে ঝড়ে উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পেছানো হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা, রবিবারের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে ২৭ মে।
ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে চট্টগ্রামের ৪ উপকূলীয় উপজেলা সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সীতাকু-ে ১৫০ কোটি টাকার ফসল এবং মৎস্য ও পশুসম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। এ উপজেলাগুলোতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে আড়াই লাখের বেশি মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে পটিয়া ও রাউজানের ছয়টি ইউনিয়ন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন রাতে সাংবাদিকদের বলেন, বাঁশখালী উপজেলার গ-ামারা, ছনুয়া, খানকানাবাদ ইউনিয়ন; সন্দ্বীপের রহমতপুর, উড়ির চর, মগধরা, কালাপানিয়া ও সারিকাইত ইউনিয়নে সমুদ্রের পানি ঢুকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ছনুয়া ইউনিয়ন পুরাই তলিয়ে গেছে।
বাঁশখালীর ৩০ কিলোমিটার এবং সন্দ্বীপের ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধ সংলগ্ন শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে নগরীর বন্দর টিলা, কাঠগড়, পতেঙ্গা, বিমান বন্দর সড়ক, হালিশহর, ডবলমুরিংসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক গাছ ভেঙে পড়ে, যাতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকা। ঝড়ে কালভার্ট ভেঙেছে নগরীর পাহাড়তলি রেলওয়ে পুলিশ লাইন সংলগ্ন মূল সড়কের।
আবহাওয়া অফিস ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান, ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে উপকূলের ৭ জেলায় অন্তত ২৬ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরির এই ঝড়ের প্রভাবে শনিবার ভোর থেকেই ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি ঝরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বাতাসের তীব্রতা। দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রমের সময় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির সঙ্গে দেখা দেয় জলোচ্ছ্বাস, যাতে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এরপরও ঝড়ের দাপট চলে আরও কয়েক ঘণ্টা। রোয়ানু উপকূল পেরিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় আরও অন্তত ২ দিন সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সমুদ্র বন্দরগুলোকে বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এবিএন/রবি/এক্সক্লুসিভ/আববহাওয়া/ডেস্ক/লাম

Check Also

সন্ধ্যায় আবারো সড়ক অবরোধ তিতুমীর শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ না করায় আবারো সড়ক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।