ঢাকা, ২৬ মে : এবার সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পর পৌরসভা নির্বাচনেও ভরাডুবি অব্যাহত রয়েছে বিএনপির। বুধবার অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপে দেশের ৭ জেলার ৯টি পৌরসভার বেসরকারি ফলাফলে সবকটিতেই জিতেছে আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে ৭টিতেই মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। আর অন্য যে দুজন মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন তারাও আওয়ামী লীগেরই নেতা। দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তারা। গোলযোগ না ঘটলেও অনিয়মের অভিযোগের মধ্যেই বুধবার পৌর নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে এ পৌরসভাগুলোতে একযোগে ভোটগ্রহণ করা হয়। রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তারা ফল ঘোষণা করলে দেখা যায়, ভোটের হিসাবে কোনোটিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা। তবে বিএনপি অভিযোগ করেছে, ভোট জালিয়াতি ও কেন্দ্র দখল অবাধে হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন তা ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রসঙ্গত সারাদেশে পৌর নির্বাচনের প্রথম পর্বে গত ৩০ ডিসেম্বর ২২৭টি পৌরসভায় ভোট হয়। তাতে আওয়ামী লীগ ১৭৭টি ও বিএনপি ২২টিতে মেয়র পদে জয় পায়। জাতীয় পার্টির একজন মেয়র হন। এছাড়া ২৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র হন, যার ১৮ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। দ্বিতীয় পর্বে গত ২১ মার্চ ভোটে ১০ পৌরসভার সবকটিতে জয় পান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।
ফেনীর ছাগলনাইয়া ও নোয়াখালী পৌরসভায় বিএনপির ২ প্রার্থী আলমগীর হোসেন ও হারুনুর রশীদ আজাদ ভোটগ্রহণ চলাকালেই জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। ছাগলনাইয়ায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ মোস্তফা। তার ভোট সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৭৪ ভোট। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোহাম্মদ আলমগীর পেয়েছেন ৭৬৪ ভোট। তিনি ভোট শুরুর দেড় ঘণ্টার মাথায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। বুধবার সকালে ভোট শুরুর ২ ঘণ্টার মাথায় ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলযোগ বাঁধে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, জালভোট দেয়ায় ৭০টি ব্যালট পেপার বাতিল করা হয়।
নোয়াখালী পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত সহিদ উল্যাহ খান সোহেল ২৮ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৯৮ ভোট। এছাড়া বিএনপির শক্ত অবস্থান বলে পরিচিত নোয়াখালীর সেনবাগেও মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আবু জাফর টিপু। তবে এখানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী আবু নাছের দুলাল। ফল ঘোষণার পর দেখা যায় ৩ হাজার ৮৯০ ভোট পেয়েছেন টিপু, দুলালের ভোট ৩ হাজার ৮৬টি।
অন্যদিকে লক্ষীপুরের বিতর্কিত আবু তাহের এবার তৃতীয় বারের মতো লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীকে তার ভোট সংখ্যা যেখানে ৩৩ হাজার ৩৫০টি, সেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী রেজাউল করিম লিটনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তার ভোট ১ হাজার ৮৬৮টি। আর কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. ইসলাম। তিনি ৯ হাজার ৬০৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক বাবুল নারকেল গাছ প্রতীকে পেয়েছেন ৪০৮ ভোট।
নরসিংদীর ঘোড়াশালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শরীফুল হক শরিফও বিজয়ী হয়েছেন বিশাল ব্যবধানে। তার ৩৮ হাজার ৭৯২ ভোটের বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন পেয়েছেন ১ হাজার ভোট। আর নরসিংদীর রায়পুরায় নৌকাকে ডুবিয়েছেন আওয়ামী লীগেরই নেতা জামাল মোল্লা। তিনি ৮ হাজার ৯৫১ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবদুল কুদ্দুছ পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৫৬ ভোট।
খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভায় পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান মেয়র মো. শাহজাহান কাজী রিপন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোবাইল প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ২৪২ ভোট পেয়েছেন রিপন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিশ্ব ত্রিপুরা নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ২৯৩ ভোট। অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমরান উদ্দিন জুয়েল। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৮ হাজার ৪৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মো. ইলিয়াস ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১৩৪৩ ভোট।
এবিএন/বৃহস্পতি/এক্সক্লুসিভ/জাতীয়/ডেস্ক/এমআর