ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ভারত সরকার সেদেশে পাঁচশ ও এক হাজারের সব নোট লেনদেন অবৈধ ঘোষণা করায় পাকিস্তানে তৈরি জালরুপি চোরাচালান আকস্মিকভাবে কমে গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে দেশটিতে গত ৯ নভেম্বর থেকে পাঁচশ ও এক হাজারের সব নোট লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে জনগণ। বিপাকে পড়েন ভারত ভ্রমণে থাকা পর্যটকরা। ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্তে পাকিস্তানি জালনোট চক্রে মাথায় হাত পড়েছে।
জানা গেছে, ভারতে জালরুপির চালান পাঠানোর জন্য করাচির টাকশালে পাঁচশ ও এক হাজারের যেসব জালরুপির নোট ছাপানো হয়েছিল, তা এখন টাঁকশালেই পড়ে রয়েছে। এখন আর জালনোট কারবারিরা টাঁকশাল থেকে ওই নোট কিনছে না। আর যারা কোটি কোটি জালরুপির নোট মজুদ করেছিল তাদেরও মাথায় হাত পড়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান আমাদের সময়কে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা গত ৩ বছরে ১৬ কোটি ভারতীয় জালরুপির চালান ও এর সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে আটক করে। এসব চালানের উৎস পাকিস্তানের করাচি। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরেও শাহজালাল বিমানবন্দরে ৬টি বড় কার্টনভর্তি ৬ কোটি ভারতীয় জালরুপি আটক করা হয়। নজরদারি বৃদ্ধির কারণে জালমুদ্রা চক্রের অবৈধ এ কর্মকা- অনেকটা ভেস্তে গেছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে আসা জালমুদ্রার চালানে মূলত পাঁচশ ও এক হাজার টাকার নোট আসত। সম্প্রতি ভারতে এসব নোট বন্ধ হওয়ায় পাকিস্তান থেকে জালরুপি আসার পথ আরও সংকুচিত হয়েছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, ভারতের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পাকিস্তানের করাচিতে প্রতিমাসে কোটি কোটি ভারতীয় এক হাজার ও পাঁচশ রুপির জালনোট ছাপানো হয়। এরপর সেই নোট আকাশপথে এবং নৌপথে বাংলাদেশে আনা হয়। পরে এখান থেকে বিভিন্ন হাত ঘুরে এই জালনোটের চালান স্থলপথে পাঠানো হয় ভারতে। পাকিস্তানে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই তৈয়বা এবং বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির একাধিক গ্রুপ এই জালনোট কারবারির সঙ্গে জড়িত। গত প্রায় এক যুগ ধরে এভাবে করাচির টাঁকশালে তৈরি জালরুপির চালান বাংলাদেশ হয়ে ভারতে পাঠানো হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, একসময় জালরুপির চালান করাচি থেকে বিমানে করে সরাসরি ঢাকায় আনত জালনোট কারবারিরা। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জালরুপি চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করে পুলিশ ও র্যাব। একের পর এক ধরা পড়তে থাকে জালনোট কারবারিরা। এ অবস্থায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিতে রুট পরিবর্তন করে চোরাচালানিরা। তারা কৌশল হিসেবে করাচি থেকে জালরুপির চালান দুবাই হয়ে ঢাকায় আনতে শুরু করে। পরে এই কৌশল সম্পর্কেও অবগত হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
জানা গেছে, গত প্রায় ৮ বছরে পুলিশ, র্যাব ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ অন্তত ৫০ কোটি জালরুপি জব্দ করে। যার সবগুলোই ছিল এক হাজারের নোট। এ সময়ের মধ্যে জালরুপি চক্রের শতাধিক চোরাচালানিকে আটক করা হয়। প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকার জালরুপির চালান করাচি থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢোকার তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। কিন্তু আকস্মিক মোদি সরকার ভারতে পাঁচশ ও এক হাজার টাকার নোট লেনদেন বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জালরুপির কারবারিরাও বিপাকে পড়েছে। যেসব জালনোট কারবারি কোটি কোটি টাকার জালরুপি করাচি থেকে কিনে মজুদ করেছিল তাদের এখন মাথায় হাত পড়েছে। কারণ এই টাকা তারা এখন আর ভারতে চালাতে পারছেন না। আর মজুদ নোট করাচির প্রস্তুতকারক চক্রও ফেরত নিচ্ছে না।
নির্দেশনা অনুযায়ী ভারতে যার যার কাছে পাঁচশ আর এক হাজার রুপির নোট আছে, তারা সেগুলো আগামী পঞ্চাশ দিনের মধ্যে যে কোনো ব্যাংকের শাখায় জমা দিতে পারবেন। এর জন্য সময় পাবেন ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।