২০ হাজার বাংলাদেশী ফেরত পাঠাতে চায় ব্রিটেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিমত

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:কুড়ি হাজার বাংলাদেশী নাগরিককে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠাতে চায় ব্রিটেন। তবে এসব নাগরিকের বেশির ভাগকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে জোরালভাবে ব্রিটিশ সরকারের কাছে উত্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেছেন, ব্রিটেনে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশী নাগরিক অবৈধভাবে রয়েছে। তাদেরকে জোর করে নয়, বরং মানবিক পদ্ধতিতে ফেরত পাঠাতে চায় ব্রিটেন। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা চলছে।
বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্রিটেন যে ২০ হাজার বাংলাদেশীকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তার সাথে দ্বিমত পোষণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা ব্রিটেনে পড়তে গিয়ে কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে বিপদে পড়েছেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকার বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এসব শিক্ষার্থী ওই কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করত। এখন তাদেরকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কোনোভাবেই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দায়ী করা যাবে না। কেননা ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে ভিসা নিয়ে তারা বৈধভাবেই সে দেশে গেছেন। ভিসা নেয়ার সময় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত ছিল না বা বিষয়টি তাদের জানা ছিল না; কিন্তু ব্রিটিশ হাইকমিশন নিশ্চয়ই যাচাই-বাছাই করে এসব শিক্ষার্থীকে ভিসা দিয়েছে। এখন পড়ালেখার মাঝখানে হঠাৎ করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করলে শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, কালো তালিকভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া বাংলাদেশীদের ব্রিটেনে ভিন্ন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ দিতে হবে। অথবা পুরো টিউশন ফি ফেরত দিয়ে ব্রিটিশ সরকারের ব্যবস্থায় তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ সরকার জোরালভাবে বিষয়টি ব্রিটিশ সরকারের কাছে তুলে ধরবে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে আসার গণভোটের (ব্রেক্সিট) পর ব্রিটেন অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে কঠোর নীতি অনুসরণ করছে। অভিবাসীরা ব্রিটিশদের কর্মক্ষেত্র সঙ্কুচিত করে ফেলছে, ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে ব্রেক্সিটের পক্ষের রাজনীতিকেরা এই অভিযোগ তুলে জনমতকে প্রভাবিত করেন। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে সাবেক সোভিয়েত ব্লকে থাকা অর্থনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে অভিবাসীদের দায়ী করা হয়। ইইউর কারণে এসব দেশের নাগরিকেরা অবাধে ব্রিটেনে আসতে পারছে। গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়ে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ব্রিটেনকে ইইউ থেকে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
এ দিকে ব্রেক্সিটের পর একই ইস্যুতে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে বিজয়ী হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইউরোপের কয়েকটি দেশেও এখন উগ্র জাতীয়তাবাদ ও অভিবাসনবিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হচ্ছে।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।