আজ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী-স্মৃতিতে আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ ফিরে দেখা : নবেম্বর ২০১৫

ক্রাইমবার্তা রিপোট:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল বলিষ্ঠ রাজনীতিবিদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গত বছর ২১ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে নাজিমউদ্দিন রোডস্থ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। একই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়।

এর আগে রাত ৮টার পরই দুই পরিবারের সদস্যদেরকে ডেকে পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ। রাত ৯টার পর তাদের পরিবারের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে পৃথকভাবে মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার। তারা বের হয়ে আসার পরই কারাগারে প্রবেশ করেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পরিবার। সাক্ষাৎ শেষে ১২টা ২৫ মিনিটে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। দু’জনের পরিবারের সদস্যরাই জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি বরাবর তারা কোন ধরনের আবেদন করেননি। ওই দিন বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করার আবেদন নিয়ে কারাগারে যান তার আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ করেননি।

যুদ্ধাপরাধের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিচারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে অভিযোগ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিতে গিয়ে বিফল হয়ে ফিরেছে তার পরিবার। আইনি সব প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তোড়জোড়ের মধ্যে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই চিঠি দেয়ার কথা জানান বিএনপি নেতার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর ১ অক্টোবর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং তা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর ২ অক্টোবর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে রিভিউ আবেদন দায়েরের বিষয়ে পরামর্শ করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার পাঁচজন আইনজীবী সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে তিনি আইনজীবীদের রিভিউ আবেদন দায়ের করার পরামর্শ দেন।

গত ১৭ নভেম্বর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও ১৮ নভেম্বর সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানী শেষে ১৮ নভেম্বরই তা খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এক দিন পরই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই দিনই তা কারাগারে পৌঁছে।

২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার একটি মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক দেখানো হয়। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এরপর ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটরের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেয় আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে অপর দুই সদস্য বিচারপতি মো: মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক শাহিনুর ইসলাম।

এ দিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও ভাংচুরের এক মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

নির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় রায় যথাযথ হয়নি -খন্দকার মাহবুব হোসেন

রিভিউ আবেদন খারিজের পর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রধান আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করেছেন। যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, তাতে সাক্ষী-প্রমাণ সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে এখন আমরা আল্লাহর দরবারে বিচার চাইবো।

তিনি বলেন,আমাদের দায়িত্ব হলো আসামীকে আইনি সাহায্য করা। আইনজীবীরা অপরাধকে সমর্থন করেন না। আমরা আইনি লড়াই করেছি। লড়াইয়ে হেরে গেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা রিভিউতে বলেছি, যেসব অপরাধে দু’জন আসামীকে সাজা দেয়া হয়েছে, তা বৈধ আইনানুগ হয়নি। সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী একাত্তর সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। তিনি হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত সনদ আদালতে দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু এই বিচারের বিপক্ষে-এই যুক্তিতে ওই সনদ গ্রহণ করা হয়নি।

মুজাহিদের বিষয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না থাকায় ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগের রায় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে রিভিউতে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আদালত তা নাকচ করে দেন।

আমরা হ্যাপি-এটর্নি জেনারেল

এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিষয়ে বলেন, তার অপরাধ এতই জঘন্য ছিল যে তিনি যদি ছাড়া পেতেন, তাহলে দেশের মানুষ অস্বস্তিতে পড়ত। সাধারণ মানুষও হতাশ হয়ে পড়ত।

মুজাহিদের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যায় আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় আমরা সস্তোষ প্রকাশ করছি। এতে বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, এতজন বুদ্ধিজীবীকে মারা হলো। তাদের বিনিময়ে অন্তত একজনকে শাস্তি দেয়ার সুযোগ হয়েছে। এ জন্য আমরা হ্যাপি।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী : আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে একটি সুপরিচিত নাম। বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং জোটনির্ভর রাজনীতির প্রবর্তন এবং চারদলীয় জোটের প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক অবদান রাখার জন্য আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ রাজনীতি সচেতন মানুষের নিকট একজন গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। জোটের রাজনীতির প্রবর্তন বাংলাদেশের রাজনীতিক প্রেক্ষাপটে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কেননা এর মাধ্যমে বাংলাদেশী  জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে একই প্লাটফর্মে আনা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তিনি কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। মন্ত্রী হিসেবেও তিনি একজন সৎ মানুষ হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন।

আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি। তিনি তার পিতা প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল আলীর কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। একজন ধর্মীয় নেতা ও আধ্যাত্মিক পুরুষ হিসেবে মাওলানা আব্দুল আলীকে আজও ফরিদপুরসহ গোটা অঞ্চলের মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তিনি শুধু ধর্মীয় নেতাই ছিলেন না বরং জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬২-১৯৬৪ সাল পর্যন্ত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যও (এমপিএ) নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ফরিদপুর ময়জুদ্দিন স্কুলে ভর্তি হন এবং তারও পরে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুলে অধ্যয়ন করেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা সুসম্পন্ন করার পর তিনি ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক ডিগ্রী শেষ করার পর তিনি ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আগমন করেন। জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাত্র দুই-আড়াই মাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ক্লাস করার পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় জনাব মুজাহিদ আর সেখানে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন।

ছাত্র রাজনীতি : ছাত্র জীবন থেকেই জনাব মুজাহিদ রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। শুরুতে রাজেন্দ্র কলেজে কিছুদিন এনএসএফ এ কাজ করার পর তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সাথে যুক্ত হন। ১৯৭০ এর ডিসেম্বরে যখন তিনি ফরিদপুর ছাড়েন তখন তিনি ফরিদপুর জেলায় ছাত্রসংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঢাকায় এসে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৭১ সালের জুলাইতে ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক সেক্রেটারি (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মনোনীত হন এবং এর মাত্র দুই মাস পর অক্টোবরে তিনি ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক সভাপতি নির্বাচিত হন।

প্রাথমিক কর্মজীবন : জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ তার পেশাগত জীবন শুরু করেন নারায়ণগঞ্জ আদর্শ স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে। এর আগে ১৯৭৩-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই আদর্শ স্কুল প্রতিষ্ঠায় তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। স্কুলের জন্য আর্থিক সংস্থান ও ছাত্র সংগ্রহে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার ঐকান্তিক চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের কারণে আদর্শ স্কুল আজও নারায়ণগঞ্জ জেলায় সর্বশ্রেষ্ঠ স্কুল হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জের আদর্শ স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে সাংগঠনিক প্রয়োজনে তিনি ঢাকায় স্থানান্তরিত হন।  গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেড এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি দৈনিক সংগ্রামের চেয়ারম্যান এবং সাপ্তাহিক সোনার বাংলার পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। গ্রেফতার হওয়ার কিছু দিন পূর্বে তিনি ’রাইজিং সান’ নামক একটি ইংরেজি পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

জামায়াতে যোগদান : ছাত্রজীবন শেষ করার পরপরই আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮২-১৯৮৯ পর্যন্ত ঢাকা মহানগরী জামায়াতের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা : আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বরাবরই দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র আন্দোলনে, ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে, ১৯৯৪-১৯৯৬ কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে, ২০০০ সালে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার আন্দোলনে এবং ২০০৭ সালে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর পাশাপাশি, জনগনের মৌলিক সমস্যা ও জাতীয় সমস্যা নিরসনেও তিনি সক্রিয় অবদান রাখেন।

মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন : আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং মন্ত্রী হিসেবে সফলতার সাথে ৫ বছরের মেয়াদ সম্পন্ন করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করাকালীন সময়ে তিনি মাদারীপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

সামাজিক কার্যক্রম : নিঃস্বার্থ একজন সমাজ সেবক হিসেবে আলী আহসান মোহাম্মদ  মুজাহিদ ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশজুড়ে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং মসজিদ ও এতিমখানা বিনির্মাণে তার সক্রিয় ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তার নিজ জেলা ফরিদপুরে তিনি ৫০ টিরও বেশি মসজিদ নির্মাণে ভূমিকা পালন করেন। দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তিনি এই ব্যাপক সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মাদ্রাসা ছাত্রদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে ২০০২ সালে তৎকালীন চার দলীয় জোট সরকার ফাজিলকে বিএ সমমানের এবং কামিলকে মাস্টার্স মানে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নির্মাণেও তার ভূমিকা সক্রিয় ছিল। তার প্রচেষ্টা ও দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে ফরিদপুর ও মাদারীপুরের মত অবহেলিত জেলা দুটিতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা পরিচালিত হয়। অগণিত রাস্তা, সড়ক ও মহাসড়ক, মাদরাসা, ব্রীজ, কালভার্ট ও মসজিদ এই সময় এই এলাকাগুলোতে নির্মিত হয়। তিনি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় বিভাগীয় সমাজ সেবা কেন্দ্র এবং হাজী শরীয়তউল্লাহ ব্রীজ উদ্বোধন করেন। মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে জনাব মুজাহিদ  দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি নিয়মিতভাবেই তার মন্ত্রণালয়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিটে যেতেন। এর মাধ্যমে তিনি মন্ত্রণালয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি কমানোর চেষ্টা করেছেন এবং তাতে তিনি অনেকটা সফলও হয়েছেন। তার মেয়াদে তিনি বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক শিশু সদন (সরকারি এতিমখানা) নির্মাণ করেন। যা সমাজের ভাগ্যহত ও অনগ্রসর কিশোর কিশোরীদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।

২০০১ সালে যখন আলী আহসান মো: মুজাহিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন, তখন তা একটি দুর্বল বা লো প্রোফাইল মিনিস্ট্রি হিসেবে স্বীকৃত ছিল। কিন্তু তার ৫ বছরের মেয়াদের শেষে এটি হাই প্রোফাইল তথা আলোচিত মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়। মন্ত্রণালয়ের বাজেট মাত্র ৫ বছরে ৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পায়। এগুলো সবই হয় মন্ত্রী হিসেবে তার একনিষ্ঠা ও সফলতার কারণে। তিনি তার মন্ত্রিত্বের ৫ বছরে ছোট খাট নানা অনুষ্ঠান ছাড়াও ৪০টিরও বেশি আলোচিত প্রোগ্রাম করেন যেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যোগ দেন। তার নেতৃত্বে ২০০৪ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রতিবন্ধী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ‘মুক্তা’ নামক একটি মিনারেল ওয়াটারেরও প্রবর্তন করেন। যা প্রতিবন্ধীদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত এবং বাজারজাতকৃত। তার এই উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশের নাম তখন বিশ্ব দরবারে ভিন্নভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। তার সময় প্রতিবন্ধী অলিম্পিকেও বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করে। এছাড়া সুদ মুক্ত ঋণ ও এসিডদগ্ধদের মধ্যে ব্যপকভাবে ভাতা প্রদান করা হয় তার সময়ে। জনাব মুজাহিদ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে ঘুরে নিজে এই ভাতা বিতরণ করতেন। তাই তার সময়ে গ্রামের অভাবী মানুষ সুদখোর মহাজন এবং বেসরকারি সংস্থার হাত থেকে মুক্ত হয়ে সরকারের কাছ থেকে বিশেষত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হাত থেকে ঋণ নিতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীতে এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো বন্ধ হয়ে যায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে।

বৈবাহিক অবস্থা : আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ১৯৭৩ সালের ১৮ অক্টোবর বেগম তামান্না-ই-জাহানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তামান্না-ই-জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তামান্না-ই-জাহান একজন গৃহিণী এবং পড়ুয়া মানসিকতার একজন নারী যিনি নিয়মিতভাবে পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করেন।

জনাব মুজাহিদ ছিলেন ৩ পুত্র ও এক মেয়ে সন্তানের জনক।

5

 

 

 

 

 

 

[আমার শহীদ পিতা আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ তার শেষ সাক্ষাতে আমাদের উদ্দেশে কী কথা বলেছিলেন তা তার শাহাদাতের চার দিনের মাথায় আলহামদুলিল্লাহ সকলের সহযোগিতায় লিখতে সক্ষম হয়েছিলাম। ঐ লেখাটি সেসময় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ঐ প্রসংগে আর নতুন করে কিছু তাই লিখতে চাইনি। এই প্রসঙ্গের বাইরে, শহীদ আলী আহসান মোঃ মুজাহিদের শাহাদাতকে কেন্দ্র করে আমাদের পরিবার এক বছর আগের এই সময়গুলোতে যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল তা শেয়ার করার জন্যই মূলত এই লেখা। এটা মূলত একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ।] দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে এল। নভেম্বর ২০১৫ থেকে নভেম্বর ২০১৬। তবুও সেই দিনগুলো প্রতিটি মুহূর্তে আমার চোখে ভাসে। জীবনের সেই অভিজ্ঞতাগুলো বুকের ভেতরে এমনভাবে গেঁথে বসে আছে যে কোনভাবেই তাকে যেন ভোলা যায় না। আর আমি তা ভুলতেও চাই না কখনো।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শুরুতেই মনে পড়ছে আমাদের মামলার রিভিউ শুনানি হওয়ার দিন ধার্য্য ছিল ২ নভেম্বর, ২০১৫। আমরা জানতাম এই তারিখ কোনভাবেই আর পেছানো সম্ভব নয়। সেই মোতাবেক প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। নিয়মিতভাবে আইনজীবীদের চেম্বারে গিয়ে তাদের সাথে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সমস্যা শুরু হলো, অক্টোবর মাসের শেষ দিক থেকে। আমাদের মামলার অন্যতম কৌঁসুলি এডভোকেট শিশির মনির ভাইকে হয়রানি করা শুরু করল পুলিশ। তার বাসায় ৪/৫ দফা তল্লাশি হলো। তার বাসা থেকে কম্পিউটারসহ অনেক নথি নিয়ে যাওয়া হলো। যেগুলোতে তিনি মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহে রেখেছিলেন। শিশির ভাই’র সাথে আমি সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনবার তার বাসায় মামলার কাজে বসেছিলাম। বেশির ভাগ সময়ই তার চেম্বারেই বসতাম। এরপরও কেন তার বাসায় হানা দেয়া হলো, তা বুঝতে পারছিলাম না। তবে এতটুকু বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারলাম যে, শিশির ভাইকে হেনস্তা করার মুল টার্গেট হলো আমাদের মামলার প্রস্তুতিতে ব্যঘাত ঘটানো।
সেই উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নে তারা বেশ সফলও হয়েছিলো। মামলার প্রস্তুতিতে ভীষণ রকম ঝামেলায় পড়ে গেলাম। শিশির ভাই আত্মগোপনে চলে গেলেন। কোনভাবেই তার সাথে আমি যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। অক্টোবরের ২৭/২৮ তারিখ পর্যন্ত তাকে কোনভাবেই খুঁজে পাইনি আমি। অথচ তার কাছেই আমাদের যাবতীয় পিটিশন, যাবতীয় তথ্যাদি। সিনিয়র এডভোকেট খন্দকার মাহবুব সাহেব আদালতের শুনানিতে অংশ নিলেও তাকে তৈরী করার কাজটি শিশির ভাই করতেন। এখন এই শূন্যতা কে দূর করবে?
সিদ্ধান্ত হলো বিকল্প আইনজীবীকে নিয়ে কাজ করা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের পক্ষে মাত্র দুদিনে এই বিশাল মামলার প্রস্তুতি নেয়া ছিল দুঃসাধ্য। এখানে উল্লেখ্য যে, মানবতা বিরোধী অপরাধের এই মামলাগুলো বাংলাদেশের প্রচলিত ক্রিমিনাল আইন বা সিআরপিসি অনুযায়ী পরিচালিত হয় না। এটা একটা বিশেষ এ্যাক্ট, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই আগে থেকে এর সাথে জড়িত না থাকলে দুদিনের মধ্যে এই মামলার প্রস্তুতি নেয়া বেশ কঠিন। খুব সমস্যায় পড়ে গেলাম।
আইনজীবীদের একটি পক্ষ থেকে মতামত আসলো মামলার শুনানিতে আর অংশ না নেয়ার জন্য। অনেকেই বললেন, যেই আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিবেন, তার পরিণতি শিশিরের মতই হবে। তাছাড়া রিভিউ করেও তো কোন লাভ নেই, এই পর্যন্ত সকল রিভিউ রিজেক্ট হয়েছে, এটাও হবে। সেই বিবেচনায় শুনানি বয়কট করলেই বরং লাভ বেশী হবে। এরই মধ্যে একদিন আব্বার সাথে দেখা হলো একুশে আগস্টের কোর্টে। তিনি বললেন, যত কষ্টই হউক, কোন না কোনভাবে ম্যানেজ করে নিতে। রিভিউ শুনানি যেন কোনভাবেই মিস না হয়। আমি সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পরিবারের সাথে বসলাম। তাদের মতামতও আব্বার মতই অর্থাৎ রিভিউ শুনানী করার পক্ষে। আম্মা বিশেষভাবে দায়িত্ব দিলেন আমাকে, যাতে আমি ঠা-া মাথায় আইনজীবীকে ম্যানেজ করে কাজটা চালিয়ে নিতে পারি। পরবর্তীতে সংগঠন ও আইনজীবীসহ সকলের প্রচেষ্টায় ভিন্ন একটি আইনজীবী টিম নিয়ে আমি খন্দকার মাহবুব সাহেবের সাথে মামলার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বসি। কয়েক দফা বৈঠকও হয়। সেই বৈঠকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও না থাকা এবং আবার শিশির ভাইয়ের উপর হয়রানির বিষয়টা তুলে শুনানি পেছানোর জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২ নভেম্বর শুনানি। ঠিক তার আগের দিন ১ নভেম্বর খবর পেলাম, আমার মেঝ ভাইকে তার কর্মস্থল থেকে জোরপূর্বক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমি নিজে ২০১৩ সালের ৫ মে থেকে বেকার ছিলাম। এবার আরো একজন এই তালিকায় যুক্ত হলো।
এরকম এক পারিবারিক ও আইনগত জটিল পরিস্থিতিতে শুনানীর জন্য কোর্টে গেলাম। খন্দকার মাহবুব সাহেব সময় চেয়ে আবেদন করলেন। কার্যতালিকায় আমাদের পরের সিরিয়ালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের মামলা ছিল। আমাদের আইনজীবী শিশির ভাই নাই বিধায় আমরা সময় চাইলাম। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবের এই ধরনের কোন সংকট না থাকায় তারা আলাদা করে সময় চাইল না। কিন্তু আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে আমাদের দুটি মামলারই রিভিউ শুনানির জন্য নতুন তারিখ ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করে দিলেন। সেদিনই আমার প্রথমবারের মত মনে হলো যে আমাদের দুই মামলার পরিণতি একই দিকে একই সাথে এগুচ্ছে।
হাতে ১৫ দিন সময় পেয়ে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করলাম। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে নতুন করে মামলার প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত নিলাম। এর মধ্যে শিশির ভাইও একদিন হাইকোর্টে হাজির হলেন। তিনি আদালতে পুলিশি হয়রানি এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলা দেখিয়ে আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলেন। আদালত ৪ সপ্তাহের জন্য তাকে হয়রানি বা আটক না করার নির্দেশ দিলো। ফলশ্রুতিতে আমরা তাকে নিয়েই আবার মামলার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম।
৯ নভেম্বর, ২০১৫ তারিখে আমার শহীদ পিতাকে শেষবারের মত একুশে আগস্টের কোর্টে হাজির করা হয়। ঐদিন তার সাথে আমি আদালতের ভেতরে সাক্ষাতও করেছিলাম। আমার আব্বাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় ২০১১ সালে একটি সম্পূরক চার্জশীটের মাধ্যমে আসামী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সালে আমার আব্বার শাহাদাতের আগের সপ্তাহ পর্যন্ত তাকে নিয়মিতভাবে এই মামলায় হাজির করা হয়। প্রতি সপ্তাহে দুদিন আবার কখনো কখনো ৩ দিন এই মামলায় তাকে হাজির করা হতো। কিন্তু ৯ নভেম্বরের শুনানীর পরের সপ্তাহে কোন তারিখ দেয়া হলো না। তারিখ দেয়া হলো একবারে ২৪ নবেম্বর। এরকম ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। ১৭ নভেম্বর আপীল বিভাগের শুনানি তো আগেই ২ নবেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর আপীল বিভাগে তো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হাজির করা হয় না। সুতরাং একুশে আগস্টের আদালত ইচ্ছে করলে পরের সপ্তাহে তারিখ দিতে পারতেন। কিন্তু কেন যেন দিল না।
আমি আদালত থেকে বের হয়েই অন্যান্য অভিযুক্তদের আইনজীবীদের প্রশ্ন করলাম, ভাই আপনাদের কারও কোন মামলার তারিখ আছে সামনের সপ্তাহে, আপনারা কেউ কি সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন? সকল আইনজীবী অস্বীকার করলেন। বললেন, আমরা কেউই কোন টাইম চাইনি। জজ সাহেব নিজেই কোন আবেদন ছাড়াই এক সপ্তাহ বাদ দিয়ে পরের সপ্তাহে তারিখ দিয়েছেন। আমার মনে কেমন যেন একটা আঘাত লাগলো। মামলার দৌড়াদৌড়ি ৬ বছরে যা করেছি তাতে তো কিছুটা হলেও অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার মনে হলো, নিশ্চয়ই প্রশাসনের পক্ষ থেকে জজ সাহেবকে কোন ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে। তার মানে এই সময়ের মধ্যেই আব্বার রায় কার্যকর করেও ফেলতে পারে।
১৭ নবেম্বরের শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন অসাধারণ পারফরমেন্স করলেন। অনেকেই বের হয়ে বললেন এটা তার বেস্ট রিভিউ শুনানি। আমি যতটুকু শুনতে পেরেছি আমারও তাই মনে হয়েছে। আপীল বিভাগের শুনানীতে ঐদিন আইনজীবীর বাইরে অন্য লোকদের প্রবেশে খুব কড়াকড়ি থাকায় পুরো শুনানী আমি শুনতে পারিনি। আমাদের মামলার পরে মাহবুব সাহেব সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রিভিউতেও অংশ নেন। তবে সেটা খুব একটা বড় হয়নি। একদিনেই তাই দুই মামলার রিভিউ শুনানি শেষ হয়ে যায়। রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ হয় পরের দিন অর্থাৎ ১৮ নবেম্বর।
রায় ১৮ তারিখ যথারীতি খারিজ হলো। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল। এর মধ্যেও সাংবাদিক ও মিডিয়ার সাথে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বললাম। আইনজীবীদের সাথে আলাপ করলাম, আর কী করার আছে। সকলের সাথে আলাপ করে মনে হলো, আব্বার সাথে পরিবারের সাক্ষাতটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। জেলখানায় যোগাযোগ করতে শুরু করলাম। সাক্ষাতের দরখাস্ত জমা দিলাম। জেলের যে কর্মকর্তারা আগে ফোন ধরতেন সহজেই, হঠাৎ তারা যেন অপরিচিত হয়ে গেলেন। অনেকবার যোগাযোগ করে ১৯ নভেম্বর সাক্ষাতের অনুমতি পেলাম।
১৯ তারিখে সাক্ষাত করতে গিয়ে আব্বাকে আরও দেখতে সুন্দর ও বলিষ্ঠ মনে হলো। দেখে বুঝলাম তিনি খোদার দরবারে হাজির হওয়ার প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন। নানা কথা হলো। আব্বা আমার কাছে জানতে চাইলেন, ট্রাইব্যুনালের মামলার তো ফায়সালা হলো, একুশে আগস্টের মামলার কী হবে? ২৪ তারিখ তো হাজিরা আছে। আমি বললাম, আমি জানিনা, ঐ মামলার পরিণতি কী হবে এটা আইনজীবীরা ভাল বলতে পারবেন। তখন তিনি বললেন, রাষ্ট্রপতি যেহেতু সংবিধান অনুযায়ী দেশের এক নম্বর ব্যক্তি আবার একজন আইনজীবীও বটে; তাই তার কাছে আমি এই বিষয়টা জানতে চাইবো। আমাকে দায়িত্ব দিলেন আইনজীবীদের সাথে একটা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার জন্য। আর বললেন, যদি আইনজীবীরা সাক্ষাতের অনুমতি না পায়, তাহলে আমরাই যেন মিডিয়ার মাধ্যমে তার এই প্রশ্নটা জাতির সামনে উত্থাপন করি।
আব্বার প্রশ্নটি ছিল অনেকটা এরকম, তাকে তো যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসি দেয়া হলো। এই মামলাটি বিশেষ এ্যাক্টের অধীনে হওয়ায় তার সকল ধরনের নাগরিক ও সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার স্থগিত ছিল। তাছাড়া এই মামলাটি প্রচলিত ক্রিমিনাল আইন বা সিআরপিসি দিয়েও চলে না। তাই যুদ্ধাপরাধের মামলায় যে অভিযুক্ত হয়, তার অবস্থা হয় অনেকটা হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গভীর কুয়োর ভেতরে পড়া মানুষের মত। কিছুই করার থাকে না। বলা যায়, মামলা শুরু করার আগেই রায় নির্ধারণ করা হয়ে যায়। কিন্তু একুশে আগস্টের অপর যে মামলায় তাকে নিয়মিত হাজির করা হচ্ছে, সেই মামলাটি প্রচলিত ক্রিমিনাল আইনে হচ্ছে। এই মামলায় তার আইনী ও মৌলিক অধিকার আর দশটা সাধারণ নাগরিকের মতই বলবৎ আছে। তাই তার পূর্ণাঙ্গ অধিকার আছে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার। যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসি কার্যকর করার জন্য যদি একুশে আগস্ট থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়, তার মানে কিন্তু এটা নয় যে তিনি সেই মামলায় খালাস পেয়েছেন। বরং ভিন্ন মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর করায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হবে। কিন্তু তিনি মনে করেন একুশে আগস্টের মামলায় তার খালাস পাওয়ার সব রকমের চান্স ছিল। কেননা তখনও পর্যন্ত ১৫০ এর উপর সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন এবং তাদের কেউই একবারের জন্য শহীদ মুজাহিদকে অভিযুক্ত করাতো দূরের কথা, তার নামটিও উচ্চারণ করেনি। তাই তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।
সেদিনের সেই সাক্ষাতে আব্বা আরও বললেন, মাফ তিনি চাইবেন না, তিনি কোন অপরাধ করেননি, তাহলে মাফ কেন চাইবেন। আর মাফ চাওয়া মানে নিজের অপরাধ স্বীকার করা যা কখনোই সম্ভব নয়। তবে মাফ না চাওয়ার এই বিষয়টা তিনি আইনজীবীদের সাক্ষাতের পর তাদেরকে দিয়েই বলাবেন। আর মিডিয়ায় কথা বলার জন্য তিনি নিজেই আম্মাকে পরিবারের মুখপাত্র হিসেবে নির্বাচন করলেন। আমরা সেইদিন আব্বার জানাযা কে পড়াবেন, দাফন কোথায় হবে এই সব বিষয় নিয়েও আলাপ করলাম। আমার বড় ভাই এই কঠিন কাজটি করলেন। সন্তান হিসেবে জীবিত সুস্থ পিতাকে প্রশ্ন করা যে, আপনাকে কোথায় কবর দিবো, আপনার কোন চয়েজ আছে কি না, এটা যে কি কঠিন একটি অনুভূতি, তা অন্য কারও বোঝা সম্ভব নয়। এই মানসিক চাপটা আমাদের প্রত্যেককেই মানসিকভাবে অনেকটা অসুস্থ করে দিয়েছে বলে আমার মনে হয়। এই অসুস্থতা থেকে আমরা এখনও রেহাই পাইনি।
বের হয়ে আমরা মিডিয়ার সাথে সেই অনুযায়ী কথা বলেছি। এরপর আমি ফিরে গিয়েছিলাম চেম্বারে। আর অন্যরা বাসায়। আমি আইনজীবীদের সাক্ষাতের জন্য একটি দরখাস্ত লিখে আমাদের আইনজীবী এডভোকেট গাজী তামিমকে কারাগারে যাওয়ার অনুরোধ করলাম। বেচারা ঐদিন অনেকটা সময় জেলগেটে বসে থেকে সন্ধার পরে আমাকে জানালেন, সাক্ষাতের অনুমতি তো দিচ্ছেই না, এমনকি দরখাস্তের কপিও রিসিভ করছে না। আমি চলে আসতে বললাম। পরের দিন অর্থাৎ ২০ নবেম্বর সকালে আবারও আমি তাকে ফোন দিয়ে রিকুয়েস্ট করলাম যাতে তিনি আবারও জেলগেটে দরখাস্তটি নিয়ে যান। সেদিনও সারা দিন বসে এডভোকেট তামিম আমাকে জানালেন যে, সাক্ষাত মনে হয় আর এলাউ করবে না।
এর আগে শহীদ কামারুজ্জামান চাচার রিভিউ রায় বাতিল হওয়ার পরেও একটা আইনজীবীদের সাক্ষাৎ হয়েছিল। কিন্তু আমাদের বেলায় যখন দরখাস্তটাই রিসিভ করছে না, তখন আমার মনে কেমন যেন একটা খটকা লাগলো। মনে হলো ওদের মনে কোন দুরভিসন্ধি আছে।
আমার যতটা মনে পড়ে, ১৯ তারিখ রাত থেকে শুরু করে ২০ তারিখ রাত পর্যন্ত আমরা দফায় দফায় বাসায় আলোচনায় বসেছি, মিটিং করেছি। বিশেষ করে শেষ সাক্ষাতে কারা কারা যাবেন, কাদেরকে বাদ দিবো। যারা যাবেন তাদের আইডি কার্ড জোগাড় করা, তাদেরকে রেডী থাকতে বলা। এত সব লোক কিভাবে যাবেন, তাদের ট্রান্সপোর্ট আয়োজন করা। আল্লাহর রহমতে প্রতিটি সময়ে সংগঠনের দায়িত্বশীলদেরকে কাছে পেয়েছি, তাদের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। কিন্তু কখন যে শেষ সাক্ষাতের ডাক আসবে এটা তো কেউই জানি না, তাই এতগুলো সাক্ষাৎপ্রার্থী মানুষকে আটকে রাখাও কঠিন ছিল।
যাই হউক সময় বয়ে যাচ্ছিল। মিডিয়ার ভাবসাব আর রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছিল ফাঁসি ২১ তারিখ হয়েই যাবে। অথচ তখনও পর্যন্ত আইনজীবীদের সাক্ষাৎ করাতে পারলাম না। আম্মাসহ বাসার সবার সাথে আলাপ করলাম। তাদেরকে মনে করিয়ে দিলাম যে, আব্বাতো বলেছিলেন, যদি আইনজীবীদের সাক্ষাৎ করতে না দেয় তাহলে তার ২১ আগস্টের মামলার পরিণতি সংক্রান্ত প্রশ্নটা যাতে আমরাই জাতির সামনে তুলে ধরি, সেটাতো করতে হবে, কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।
আম্মা সিদ্ধান্ত দিলেন ২১ তারিখেই সংবাদ সম্মেলন করার। সংগঠনকে জানালাম আমরা মামলার প্রয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলনটা করতে চাই। তারা অনুমতি দিলেন। শুধু তাই নয়, তাদেরই ব্যবস্থাপনায় সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনটি সংবাদ সম্মেলনের ভেন্যু হিসেবে ঠিক হয়। আমি নিজে সাংবাদিকদের ফোন করে করে সংবাদ সম্মেলনের দাওয়াত দিলাম। ২০ তারিখ কয়েকদফায় ড্রাফট করে অবশেষে সংবাদ সম্মেলনে আম্মার দেয়া বক্তব্যটি ফাইনাল করি। গভীর রাতে এক প্রতিবেশী ভাইয়ের বাসা থেকে প্রিন্ট করে সাংবাদিকদের জন্য বক্তব্যের কপি তৈরী করি। ঐ ভাইয়ের বাসায় প্রিন্টার ছিল না। তিনি আরেকজনের বাসা থেকে শুধু আমাদের কাজের জন্য ঐ প্রিন্টার জোগাড় করেছিলেন। কাজ শেষ করতে করতে রাত ১টা বেজে গেল। সেনসিটিভ সময়। তিনি তো কোনভাবেই আমাকে সেই রাতে আর বের হতে দিবেন না। কিন্তু আমার মনটা এত বেশী অস্থির ছিল আমি থাকতেই চাইলাম না। বাধ্য হয়ে সেই রাতের বেলায় প্রতিবেশীর কাছ থেকে চাবি নিয়ে সেই ভাইটি আমাকে মেইন গেটের তালা খুলে দিলেন। আমি রাত দেড়টার দিকে বাসায় ফিরলাম। এই সব ভাইদের ভূমিকা এখনও মনে পড়ে প্রতিক্ষণই। এই সংগঠনের অজস্ত্র মানুষকে আমি চলার পথে পেয়েছি, যাদেরকে কোনভাবে আমাদের প্রয়োজনের কথা বলা মাত্রই তারা নিজেদের সব কষ্টকে বেমালুম ভুলে গিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। দায়িত্বশীলদে প্রতি তাদের এই ভালবাসা ইসলামী আন্দোলনের অনন্য-সাধারণ সৌন্দর্যকেই প্রকাশিত করে।
পরের দিন আমরা আম্মার নেতৃত্বে সুপ্রীম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে যাই। সেখানে আম্মা তার বক্তব্য পেশ করেন। পরে আম্মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বাসায় রওয়ানা দেন। আমি একাই পল্টন আইনজীবীদের চেম্বারে চলে যাই। চেম্বারে যাওয়ার পথেই সাংবাদিকদের ফোন পেতে শুরু করি। আব্বা নাকি রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লিখেছেন। চেম্বারে গিয়ে টিভিতে দেখলাম, আমার বাবা আর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দুজনই নাকি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। আগের দিন আমার মনে ওদের দুরভিসন্ধি নিয়ে যে খটকাটা লেগেছিল সেটা তখন আমি বুঝতে পারলাম। এর মাধ্যমে আসলে আমার বাবার শেষ সময়েও তাকে নিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম মিথ্যাচার শুরু হয়। আমি বুঝলাম, আইনজীবীদের সাক্ষাত করতে দেয়নি, যাতে আব্বার প্রকৃত অবস্থান ও চিন্তা বাইরের পৃথিবীতে বেরিয়ে আসতে না পারে। লুকোচুরি খেলে তারা আব্বাকে জাতির সামনে ভীতু প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছে। তাকে নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা-সংক্রান্ত নাটক রচনার জন্যই আমার বাবাকে তার শেষ চাওয়া অনুযায়ী আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
ঐদিন (২১ নভেম্বর) দুপুর বিকাল সন্ধায় টিভির স্ক্রল অনুযায়ী আব্বার লেখা সেই তথাকথিত মার্সি পিটিশনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্টপ্রতির কাছে ঘুরেছে। অথচ আমরা এরই মধ্যে (রাত ৮টা নাগাদ) শেষ সাক্ষাতের জন্য ডাকও পেয়ে গেলাম। সুতরাং যাদের কমন সেন্স আছে তারা এমনিতেই বুঝতে পারবেন, যদি ক্ষমাই চাইতেন তাহলে তার ফায়সালা না হওয়ার আগে আমাদেরকে শেষ সাক্ষাতের জন্য ডাকা হতো না।
অবাক লাগে, আব্বাকে যখন দাফন করে ঢাকায় ফিরছি, তখনও অনেক সাংবাদিক ফোন দিয়ে বলেছেন, আপনি অস্বীকার করছেন, কিন্তু আইনমন্ত্রী তো বলছেন আপনার বাবা ক্ষমা চেয়েছেন। আমি বললাম, আব্বা তার শেষ সাক্ষাতে ক্ষমা চাওয়ার দাবিটি হাস্যকর ও মিথ্যাচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারপরও আপনারা যখন এটা বলেই যাচ্ছেন তাহলে আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, ওনার লেখা সেই তথাকথিত ক্ষমা চাওয়ার আবেদনটি জাতির সামনে প্রকাশ করা হউক। আমি আব্বার হাতের লেখা চিনি। আমিও দেখতে চাই তিনি কী লিখেছেন বা আদৌ কিছু লিখেছেন কি না।
আজ প্রায় এক বছর হয়ে এলো। এখনও সেই চ্যালেঞ্জের কোন উত্তর পেলাম না। আসলে সত্য এভাবেই বিজয়ী হয়। আর মিথ্যা সাময়িক লম্ফঝম্প করলেও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে না। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এই জন্যই ঘোষণা করেছেন, সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসারিত, মিথ্যার পতন অবশ্যম্ভাবী। আমার শহীদ পিতা তার শাহাদাতের মাধ্যমে শুধু যে ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তিকে মজবুত করে গেছেন বা ইসলামের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাই নয়; তার শাহাদাতের মধ্য দিয়ে তার সাথে হওয়া ইতিহাসের জঘন্যতম মিথ্যাচারকেও জাতির সামনে উন্মোচিত করে গিয়েছেন।
তিনি তার শেষ সাক্ষাতে পরিবারের সদস্যদেরকে যা বলে গেছেন, তা যুগের পর যুগ অজস্ত্র ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মী ও মুক্তিকামী জনতার জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে কাজ করবে। আপনাদের সকলের কাছে আমার শহীদ পিতার জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ তায়ালা যেন তার শাহাদাত কবুল করেন এবং তার শাহাদাতকে বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামী আন্দোলনের বিজয়ের আজান হিসেবে কবুল ও মঞ্জুর করে নেন।
-লেখক : শহীদ আলী আহসান মোঃ মুজাহিদের ছোট ছেলে

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।