আমি কি মারা যাবো?
সিএনএন/ বিবিসি :আতঙ্কিত শিশুটির একটাই প্রশ্ন, আমি কি মারা যাবো…। চোখে-মুখে আতঙ্ক যন্ত্রণায় দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছে শিশুটির। ভীত-সন্ত্রস্ত কিশোরটি বারবার মাকে ডাকছে। কাশি দিতে দিতে হাসপাতালের এক মহিলা কর্মীকে জিজ্ঞেস করছে, আমি কি মারা যাবো? কোনো জবাব না পেয়ে সে আবারো জিজ্ঞেস করছে, বলুন না, আমি কি মারা যাবো?
সিরিয়ায় রাসায়নিক গ্যাসের বিভৎসতার শিকার এই শিশুটিকে তখন বলা হয়, না তোমার কিছু হবে না। তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। ঘটনাটি গত শুক্রবারের। কিন্তু গণমাধ্যমে হƒদয়স্পর্শী ভিডিওটি প্রকাশ পেয়েছে সোমবার। আর এরপর থেকেই এটি ভাইরাল হয়ে গেছে। সে জানে না তার পরিবারের কেউ বেঁচে আছে কিনা।
সিরিয়ায় ফ্রান্সভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থা এটি পোস্ট করেছে। তারা জানায়, আলেপ্পোর পার্শ্ববর্তী আরদ আল-হামরায় ১০ বছরের এ শিশুটি রাসায়নিক হামলার শিকার হয়। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানে আবারো হামলা হয়। তবে তার কোনো ক্ষতি হয়নি।
চিকিৎসার সময় এক নার্স এ ভিডিওটি করেন।
ঘটনার সময় কিশোরটি তার পরিবারের সাথেই ছিল। একের পর এক হামলা হচ্ছিল। ভাই-বোনের সাথে সে যখন ট্রাকে করে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছিল তখন আবার হামলা হয়। তখনই ভাই-বোনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কিশোরটি।
কাশতে কাশতে সে বলছিল সেই রোমহর্ষক কাহিনী, দেখলাম একটি যুদ্ধবিমান থেকে চোখের সামনে কিছু একটা ফেলা হলো, হলুদ রঙের ধোয়ার মতো। কেমন যেন লাগলতারপর তারা (সাহায্যকর্মীরা) আমাকে কোলে তুলে এই হাসপাতালে নিয়ে এলো।
তার ভাই-বোনদের কথা জিজ্ঞেস করতেই কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, আমি জানি না আমার ভাই-বোনের কী হয়েছে।
হাসপাতালের এই মহিলা কর্মীকেই বার বার প্রশ্ন করতে থাকে কিশোরটি।
তারপর জিজ্ঞেস করতে থাকে, আমি কি মারা যাবো, বলুন আমি কি মারা যাবো।
এর কিছুক্ষণ পরই হাসপাতালটিতে আবার হামলা হয়। তবে তার কোনো ক্ষতি হয়নি।
দাতব্য সংস্থাটির ইকোনমিক ডিরেক্টর ওয়াদাহ সিদ্দিক ইমেইলে সিএনএনকে জানিয়েছে, শিশুটি এখন ভালো আছে।
শুক্রবারের এই ঘটনার দু’দিন পর রোববার রাসায়নিক হামলায়ই চার সন্তানসহ এক দম্পতি নিহত হয়েছেন।
সিরিয়ায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ
জাতিসংঘ বলছে, অবরোধের মধ্যে থাকা সিরিয়ায় মানুষের সংখ্যা গত ছয় মাসে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় ১০ লাখে গিয়ে পৌঁছেছে। সংস্থাটি বলছে, আটকে পড়া মানুষদের একটি বিশাল অংশ সরকারি বাহিনীর দ্বারা অবরুদ্ধ। তারা খাদ্য পাচ্ছে না, প্রতিনিয়ত তাদের ওপর হামলা চলছে এবং তারা চিকিৎসার কোনো সুযোগও পাচ্ছে না।
জাতিসংঘের ত্রাণ বিভাগের প্রধান স্টিফেন ও ব্রায়ান বলছেন, বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা বন্ধে এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এর আগে নেয়া বিভিন্ন প্রস্তাব আটকে দিয়েছিল সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া।
নতুন করে অবরুদ্ধ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দামেস্কের উপকণ্ঠে জুবার, হাজার, আল আসওয়াদ এবং খান আলশিহ এলাকা।
ও ব্রায়ান বলেন, গত কয়েকদিনের আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলে বোমা হামলায় কয়েক‘শ বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে এবং অনেকে আহত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নিষ্ঠুর কৌশলের’ অধিকাংশই অংশ গ্রহণ করছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী।
এদিকে সিরিয়ায় দ্রুত বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, সামান্থা পাওয়ার। তিনি বলেন, রুশ এবং সিরিয়া বাহিনী আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলে ‘অমানবিক প্রতিবন্ধকতা’ তৈরি করে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।