বিশেষজ্ঞ দলে রয়েছেন ভোটাধিকারবিষয়ক অ্যাটর্নি জন বোনিফাজ। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর কম্পিউটার সিকিউরিটি অ্যান্ড সোসাইটির পরিচালক জে এলেক্স হলডারম্যানও এ দলে রয়েছেন। তাদের কাছে এমন কিছু তথ্য রয়েছে, যা থেকে তারা বিশ্বাস করছেন, উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ায় হয় ভোট কারচুপি, নাহয় ভোট হ্যাক করা হয়েছে।
এ বিশেষজ্ঞ দল সম্ভবত তাদের প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রের ওপর কথা বলছেন না বরং তারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হিলারির নির্বাচনী টিমের সঙ্গে যোগাযোগে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনের ডেইলি ইন্টেলিজেন্সার-এ ২২ নভেম্বর এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার হিলারির প্রচারশিবিরের চেয়ারম্যান জন পোডেস্টা ও জেনারেল কাউন্সেল মার্ক এলিয়াসের সঙ্গে কনফারেন্স কলে কথা বলেছে বিশেষজ্ঞ দল।
বিশেষজ্ঞ দল উদঘাটন করেছেন, উইসকনসিনে যেসব ভোটকেন্দ্রে অপটিক্যাল স্ক্যানার ও ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হয়েছে, তার তুলনায় ইলেকট্রোনিক ভোটকেন্দ্রগুলোতে ৭ শতাংশ ভোট কম পেয়েছেন হিলারি। অর্থাৎ ইলেকট্রোনিক ভোটিং মেশিনে কারচুপি বা হ্যাক করা হয়ে থাকতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে হিলারির ৩০ হাজার ভোট নষ্ট হয়েছে, যেখানে ট্রাম্প জিতেছেন ২৭ হাজার ভোটে।
গুরুত্বপূর্ণ হলো- বিশেষজ্ঞরা হ্যাকিং বা কারচুপির নির্দিষ্ট তথ্য উদঘাটন করতে পারেননি। সন্দেহজনক পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হ্যাক করার যে অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার ওপর, তাকে আমলে নিচ্ছেন তারা। এ ধরনের অভিযোগ হোয়াইট হাউসও করেছে। তা ছাড়া, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পের সমর্থক। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির তথ্য-উপাত্ত হ্যাক করার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে ওবামা প্রশাসন।
নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ট্রাম্প পেয়েছেন ২৯০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আর হিলারি পেয়েছেন ২৩২টি। মিশিগানের ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। দুজনের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান এতটাই কম যে, কাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় মিশিগান, উইসকনসিন ও পেনসিলভানিয়ার ফলাফল যদি হিলারির পক্ষে যায়, তাহলে সামগ্রিক ফলাফল উল্টে যাবে- হেরে যাবেন ট্রাম্প, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন হিলারি। মিশিগানের ইলেকটোরাল ভোট ১৬টি, উইসকনসিনের ১০টি এবং পেনসিলভানিয়ার ২০টি নিয়ে তিন রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোট ৪৬টি। হিলারি এরই মধ্যে পেয়েছেন ২৩২টি। এর সঙ্গে ৪৬টি যোগ হলে দাঁড়ায় ২৭৮টি। অর্থাৎ হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী! কিন্তু হিলারি ও তার প্রচারশিবিরের পক্ষ থেকে ভোট পুনর্গণনার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। আর গুনলেই যে হিলারি জয়ী হবেনই, এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। কিছু ইলেকটোর আছেন, যাদের বলা হয় ভরসাহীন ইলেকটোর। তাদের কেউ কেউ বিজয়ী প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে ভোট দেন। এবারের নির্বাচনে অন্তত ছয়জন ইলেকটোর বলেছেন, তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। তারপরও তাদের ওই সব রাজ্যে ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে রাজ্যে যে প্রার্থী জয়ী হন, তিনিই সব ইলেকটোরাল ভোট পান। কিন্তু বিরল হলেও কিছু ইলেকটোর পরাজিত প্রার্থীকেও ভোট দিতে পারেন। এবার যে ছয় ইলেকটোর ট্রাম্পকে ভোট দেবেন, তারা যদি হিলারিকে ভোট দেন এবং পুনর্গণনায় হিলারি যদি পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে জিতে যান, তাহলেও হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন।
যদি ভোট পুনর্গণনার আবেদন করতে হয়, তাহলে হাতে বেশি সময়ও নেই হিলারির। উইসকনসিনে ভোট পুনর্গণনার আবেদনের শেষ সময় শুক্রবার, পেনসিলভানিয়ায় সোমবার এবং মিশিগানে আগামী বুধবার। এ তিন রাজ্যে শুধু ভোট পুনর্গণনা নয়, ইলেকট্রোনিক ভোটিং মেশিনের ফরেনসিক তদন্ত করতে হবে। কিন্তু তা কি করবেন হিলারি?
হিলারির একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত হোয়াইট হাউস। এ অবস্থায় হিলারি হয়তো ভোট পুনর্গণনায় আগ্রহী হবেন না। হিলারির যোগাযোগ উপদেষ্টা জেনিফার পালমিয়েরি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। কিন্তু হিলারির সহযোগীদের একাংশ চাইছেন, এ ইস্যুতে হিলারি উদ্যোগ নিন।