বিশেষ করে গত জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার পর তুরস্কের গণতন্ত্রের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে বলে মত সমালোচকদের। এই মুহূর্তে তুরস্কে কতটা গণতন্ত্র আছে, তা বুঝতে কিছু তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের চলতি বছরের আইনের শাসন সূচকে বিশ্বের ১১৩টি দেশের মধ্যে তুরস্কের অবস্থান ৯৯তম। তুরস্কের আগে ৯৮তম স্থানে রয়েছে মিয়ানমার। ইরানের অবস্থান ৮৬তম।
সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠানোর ক্ষেত্রে তুরস্কের অবস্থান সামনের কাতারে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে দেশটির বিশ্লেষকেরা তাঁদের মত প্রকাশেও ভয় পাচ্ছেন।
দেশটিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চলছে। তুরস্কের তৃতীয় প্রধান বিরোধী দল এইচডিপির একাধিক নেতা ও বেশ কয়েকজন এমপিকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এইচডিপির অভিযোগ, তাদের পার্লামেন্টের বাইরে রাখতে চায় সরকার। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তাঁর ক্ষমতা বাড়াতে চান।
তুরস্কের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এইচডিপির ডেপুটি প্রেসিডেন্ট হিসার ওজসয় বলেন, গণতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটেছে। খুব সীমিত যে গণতান্ত্রিক পরিসর দেশে ছিল, তাও পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে।
অভ্যুত্থানচেষ্টার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তুরস্কের ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনকে দায়ী করে আসছেন এরদোয়ান। গুলেনকে সমর্থনের অভিযোগ এনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণহারে সাময়িক বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুতিকরণ অব্যাহত আছে। এই সংখ্যা এখন প্রায় লাখ ছুঁয়েছে।
গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে জারি হচ্ছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। গত জুলাই থেকে প্রায় ৩৭ হাজার মানুষকে জেলে পোরা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রেক্টর নিয়োগের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টকে দিতে আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
চরম দুঃসময় পার করছে গণমাধ্যম। ইতিমধ্যে শতাধিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। করা হচ্ছে হয়রানি।
সরকার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করছে। যোগাযোগের সামাজিক মাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তুর্কি সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এসব নিন্দা আঙ্কারা কানে তুলছে বলে মনে হয় না।
সমালোচনা করতে গিয়ে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রধান বলেন, তুরস্ক শেষ সীমা অতিক্রম করেছে।
জবাবে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাই, আমরা তোমাদের শেষ সীমার (রেড লাইন) তোয়াক্কা করি না।’
তুরস্কে এখন গণতন্ত্র আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শুদ্ধি অভিযানের ভুক্তভোগী লোকজন, বামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি এবং এরদোয়ানের সমালোচকেরা বলছেন, তুরস্কে আগেই গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে।
তুরস্কে এই ঘরানার বিপরীত মতও লক্ষণীয়। তাদের চোখে এরদোয়ান নায়ক, যিনি দেশের ইতিবাচক রূপান্তর ঘটিয়েছেন। কিন্তু বাইরের বিশ্ব ভুল বুঝছে।
গত ১৫ জুলাই রাতে সরকার ও তার সমর্থকদের জীবন বাজি রেখে অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেওয়ার ঘটনাই তুর্কি গণতন্ত্রের পরিপক্বতার স্বাক্ষর বহন করে বলে অনেকের মত। কিন্তু সেদিন রাতে যে ধরনের গণতন্ত্র রক্ষা করা হয়েছে, তা নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক বিতর্ক আছে। বিবিসি অনলাইন অবলম্বনে