জেল হাজতে রাগীব আলী

ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাগীব আলীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে তাকে সিলেটের বিশ্বনাথে সিএমএম আদালতে উপস্থাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে ব্যবসায়ী রাগীব আলীকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ভারত। দেশটির করিমগঞ্জ সীমান্ত থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। ভারতের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ভিসা নবায়ন করতে বাংলাদেশে আসার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বিষয়টি আমাদের সময় ডটকমকে রাগীব আলী নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতার হওয়ার পর রাগীব আলী বলেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমি নবায়ন করতে যাচ্ছিলাম। তখনই আমাকে গ্রেফতার করা হয়।

আপনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে এ অবস্থায় ভারতে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি আমাদেরসময় ডটকমের প্রতিবেদককে বলেন, গ্রেফতারী পরোয়ানা হওয়ার ২ দিন আগেই আমি ভারতে এসেছিলাম। আমি অসুস্থ তাই যেতে দেরি হয়েছে। তবে এখনও আমার ২ দিন ভিসার মেয়াদ আছে।  আপনি লন্ডন বা অন্য কোন দেশে গেলেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো পলাতক না। আমি সাভাবিকভাবেই ভারতে এসেছিলাম।

জানা গেছে, বুধবার রাতে রাগিব আলী করিমগঞ্জের এসপি প্রদীপ রঞ্জন করের কাছে যান। এসময় তিনি ভারতে ভিসার মেয়াদ আরো ২০ দিন বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু এর আগেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে ভারতীয় পুলিশের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়েছিলো। রাগীব আলী নামের কেউ ভারতে থাকলে তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ করা হয়। সেই অনুযায়ী পুলিশ তার ভিসার মেয়াদ না বাড়িয়ে তাকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে। বাংলাদেশে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়ার পর ভারতের পুলিশকে রাগীব আলী সম্পর্কে অবহিত করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে তাকে আটক করে পুলিশ।

আজ দুপুরে শিল্পপতি রাগীব আলীকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। দিকে জকিগঞ্জ সীমান্তে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের জড়ো হতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এখান থেকেই তাকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, শিল্পপতি রাগীব আলীসহ তার পরিবারের সদস্যরা সিলেটের তারাপুর চা-বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও ভূমি আত্মসাতের দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

আগষ্টের ১২ তারিখে সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো দুটি মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। খবরটি শোনার পর শুক্রবার তিনি জকিগঞ্জ সীমান্তে গিয়ে তাদের ভারত চলে যান।

“গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ আদালত থেকে পুলিশের হাতে আসার আগেই চলে যাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।”

ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির মামলায় রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

এছাড়া প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা অপর মামলায় এ দুজনসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেয় একই আদালত।

পরোয়ানার অপর চারজন হলেন- তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা কাদির।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯১৫ সালের ২ জুলাই বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্ত ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা তার তারাপুর চা-বাগানসহ সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউর নামে দান করেন। তখন থেকে এলাকাটি দেবোত্তোর সম্পত্তি হিসেবে পরিচিত।

বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্তের মৃত্যুর পর রাজেন্দ্র লাল গুপ্ত নামে এক ব্যক্তি এ দেবোত্তর  সম্পত্তির সেবায়েত হন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজেন্দ্র মারা গেলে তার ছেলে  পঙ্কজ কুমার গুপ্ত সেবায়েত হন।

পঙ্কজ কুমার ভারত চলে গেলে কথিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত বনে যান রাগীবের আত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদ।

একজন মুসলমান দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত হওয়ায় সন্দেহ দেখা দেয়। এরপর তদন্ত শুরু হয়।

তদন্তে উঠে আসে মোস্তাক মজিদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মির্জা ফজলুল করিমের স্বাক্ষর জাল করে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইয়ের নামে ৯৯ বছরের জন্য চা বাগানটির ইজারা দেওয়ার নথি তৈরি করেন।

চা-বাগান এলাকায় রাগীব আলী ৩৩৭টি প্লট বানিয়ে বিক্রি করেছেন।

গত ১০ জুলাই আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান ওই দুই মামলার অভিযোগপত্র দেন।

গত বুধবার ছিল মামলার শুনানির দিন। ওইদিন রাগীব আলী অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় চেয়ে আবেদন করেন, কিন্তু আদালত আবেদন নাকচ করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেয়।

মোস্তাক মজিদকে সেবায়েত করা, আব্দুল হাইকে চা-বাগান লিজ দেওয়া প্রভৃতি ঘটনার সঙ্গে পঙ্কজ কুমার জড়িত থাকার আলামত পাওয়ায় তাকেও প্রতারণার মামলায় আসামি করা হয়েছে ।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।