যুদ্ধ নয় শান্তি চাই
যুদ্ধ কোনো দেশ বা জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। মানুষ যেমন একা বসবাস করতে পারে না, ঠিক তেমনি একটি দেশও কখনো একা চলতে পারে না। বলা যায় এই বিশ্বটা একটা সংসার, প্রতিটি দেশ তার সদস্য। পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বজায় রেখে সবাই দেশ পরিচালনা করবে এটাই সবার কাম্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সে পরিসংখ্যানে যেন হিসাব মিলছে না। ঠুনকো বিষয় নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে কখনো মৃদু কখনো উত্তাল হাওয়ার মতো তর্ক-বিতর্ক, যুদ্ধ লেগেই আছে। কিছুদিন আগেও একটি অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ হয়ে গেলো। (জুলাই, ২০১৬) ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি অঞ্চলে ভারতীয় সেনাক্যাম্পে এক হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। অন্য দিকে ২ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। উভয় দেশের বেশ কিছু সেনাসদস্য আহত হয়। এরই মধ্যে আপাতত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটি থেমেছে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের স্মৃতি খুব বেশি সুখকর নয়। ১৯৪৭, ১৯৫৬ ও ১৯৯৯Ñ তিনটি যুদ্ধ উভয় দেশের জন্য অস্বস্তিকর, শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ তৈরি করেছিলো। দেশ দু’টি পরমাণু শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার ফলে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। দুই দেশের মুরব্বিস্থানীয় দেশ আমেরিকা-রাশিয়া কিংবা চীন, তারাও এরকম যুদ্ধ চায় না। সুতরাং আমাদেরও প্রত্যাশা যুদ্ধ নয় শান্তি চাই।
দুই.
বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। (কবি কাজী নজরুল ইসলাম)
এ পৃথিবীতে মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। পারস্পরিক ভালোবাসা ও প্রীতির ফ্রেমে বেঁধে দিয়েছেন। একজন ছাড়া অন্যজনকে ভাবাই যায় না। অথচ সমাজের চিত্র আজ ভিন্ন। এ দুরবস্থা ও দুর্গতির প্রধান কারণ আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়। আমাদের মননে পচন ধরেছে। আমরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারিনি। সম্প্রতি সিলেটের মেয়ে খাদিজার ওপর বদরুলের নৃশংস হামলার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাহিত্যসংগঠন এবং সমাজের সচেতন নাগরিকসমাজ। ইতঃপূর্বেও এই লোকজনই তনু, রিশাদের প্রকৃত খুনিদের ফাঁসির দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রশাসন সেইসব খুনিকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি। বিচারহীনতার সংস্কৃতিই মূলত বদরুলদেরকে সৃষ্টি করেছে। তবে আমরা কি নতুন নতুন শিরোনামে খাদিজাদের ওপর নির্যাতনের চিত্র দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাবো; নাকি ঐক্য গড়ে তুলে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসনের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদেরকে শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবো? সে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনই সময়।
তিন.
উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা চলেছি দুর্বার গতিতে, এখনই সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। এখন সময় আমাদের, এখন সময় বাংলাদেশের- এমন নানা স্লোগানধর্মী পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে আছে আমাদের চারদিক। আসলেই কি আমরা এগিয়ে যাচ্ছি! এসব স্লোগানের অন্তরালে লুকিয়ে আছে অসংখ্য মানুষের না-বলা কষ্টের ইতিহাস, যা কোনোদিন কোনো পোস্টার, ব্যানার বা মিডিয়ার শিরোনামে আসে না। আর এসবের মূল কারণ দেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি। স্বেচ্ছাচারিতায় লাটে উঠেছে মনুষ্যত্ববোধ ও মানবতা। মানবাধিকার সে তো দীর্ঘদিনের নির্বাসনে। একদলীয় শাসনব্যবস্থার পাশাপাশি চলছে অন্যদেরকে কোণঠাসা করে অবৈধ ক্ষমতার দীর্ঘস্থায়ী মালিক হওয়ার ফন্দি। এখন বাংলাদেশ আর নির্যাতিত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। আশা করি দেশপ্রেমিক জনতা আবারো জেগে উঠবে নতুন একটি সকালের সন্ধানে।ছাত্রসংবাদ