মালয়েশিয়ায় ভালো নেই অবৈধ বাংলাদেশিরা

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। সমৃদ্ধ হয়েছে দেশের অর্থনীতি। অর্থনীতির এই চাকা সচল রাখতে বড় অবদান রেখেছেন প্রবাসীরা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ভাণ্ডার সমৃদ্ধ রেখেছেন তারা আসলে কেমন আছেন?বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বিভাগের (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ ৭০ হাজার ১১২ জন শ্রমিক মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ করতে গেছেন প্রায় ৭ লাখ শ্রমিক।

তবে মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। প্রতিদিনই তাদের তাড়া করছে পুলিশ। বাসা, অফিস, কারখানা, গাড়ি ও মার্কেটে এমনকি বন-জঙ্গলেও তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

এ বিষয়ে মেহেদী হাসান নামে কুয়ালালামপুরের এক শ্রমিক বলেন, দেশে আত্মীয়স্বজনরা মনে করে শান্তিতে আছি। আমরা জানি আমরা কেমন আছি। প্রতি মুহূর্তে জেলে যাওয়ার আতঙ্কে থাকি। কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন এলাকায়, ফুড কোর্টে, হোটেলে এবং শপিংমলের দোকানে হাজার হাজার বাংলাদেশি কাজ করছে। প্রতি মুহূর্তে তাদের দিন কাটছে আতঙ্কে।

সাড়ে ৩ লাখ টাকায় গত ২০ মাস আগে মালয়েশিয়া আসেন মেহেদী। স্টুডেন্ট ভিসায় তাকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া রেফারেন্স দেখিয়ে আনা হয়েছিল। মালয়েশিয়ান পুলিশ জানতে পেরেই জব্দ করে তার পাসপোর্ট। বর্তমানে পাসপোর্ট ছাড়াই একটি দোকানে কাজ করছেন তিনি। মেহেদীর বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে। দালালরা তাকে বলেছিল, ৮০ হাজার টাকার চাকরি। তবে এখানে এসে রীতিমত বোকা বনে গেছেন তিনি। তিনবার পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে ছুটে এসেছেন তিনি।

মেহেদী বলেন, ‘পুলিশ প্রায়ই রেইড দেয়। আগে জানতাম চাকরির ভিসা নিয়ে এসেছি। এসে দেখি স্টুডেন্ট ভিসা। আমার সঙ্গে আসা দুজন এখনও কারাগারে। তাদের ছাড়ানোর কেউ নেই। সেখানে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন অনেকে। দেশের বাড়ি ফোন করে টাকা পাঠানোর কথাটাও বলতে পারে না তারা।’

জাহাঙ্গীর নামে আরেক শ্রমিক বলেন, চলতি বছরের জুনে আমরা ২৯ জনের একটি গ্রুপ আসি। অবৈধ হওয়ায় আমাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। প্রায়ই পুলিশ রেইড দেয়। তাই আমরা এক জায়গায় বেশি দিন কাজ করতে পারি না। কাজ বদল করতে হয়। আমাদের অবৈধতার সুযোগ নিয়ে দোকান মালিকরাও কম টাকা বেতন দেন।

গত অক্টোবরে কুয়ালালামপুরের বেনজায়া টাইম স্কয়ারে অভিযান চালিয়ে অন্যান্য দেশের অবৈধ নাগরিকসহ প্রায় দেড়শ বাংলাদেশিকে আটক করেছে। সরেজমিনে টাইম স্কয়ারে গিয়ে দেখা যায়, কর্মচারীদের অভাবে বন্ধ রয়েছে দোতলার অধিকাংশ দোকান।

বাংলাদেশি দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতিদিন মর্মান্তিক জীবনযাপনও করছেন অনেকে। জাগো নিউজকে এক শ্রমিক বলেন, দিনে ১২ ঘণ্টা কাজের পর রাতে অনেকেই ঘুমায় না। পুলিশি অভিযানের ভয়ে আশপাশের জঙ্গলে চলে যায়। সেখানে গাছপালার নিচে আশ্রয় নেয়।

মো. জামাল নামে কাপড়ের দোকানের এক কর্মচারী  বলেন, ‘অনেক শ্রমিকের হাত-পায়ে ক্ষত অবস্থায় দেখেছি। আগে বুঝতাম না। পরে শুনলাম তারা রাতে জঙ্গলে থাকে। এমনও আছে আটকের ভয়ে ৩-৪ দিন জঙ্গল থেকে বের হয় না।’

মালয়েশিয়ায় ভালো নেই অবৈধ বাংলাদেশিরা

কুয়ালালামপুরের সবচেয়ে জমজমাট স্থান বুকিত বিনতাং। সেখানকার অধিকাংশ দোকানেই কাজ করছে বাংলাদেশিরা। আবুল হাসান নামে এক দোকানের কর্মচারী জাগো নিউজের কাছে ব্যক্ত করলেন নিজের দুর্বিষহ জীবন। চার বছর আগে ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ করছেন তিনি। আবুল টাকার অভাবে ফিরতে পারছেন না দেশে।

জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলা আরো তিন কর্মচারীরও একই অবস্থা। তাদের দালালদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে সেখানে গেছেন। তাদের একটাই দাবি, এ ধরনের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

Check Also

সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে দুবলার চরে গেলেন ৪০১জন পূণ্যার্থী

উপকূলীয় অঞ্চল (শ্যামনগর): পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে অনুমতি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে রাস মেলায় গেছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।