ক্রাইমবার্তা রিপোট:সরকারকে দেশের জনগণের মনের ভাষা বুঝে অবিলম্বে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আর জ্বালাও পোড়াও করবেন না। অবিলম্বে সংলাপে বসে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ তৈরি করুন। আসুন অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনার পথ বের করি। সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই আলোচনা করি।
শনিবার জামালপুর জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এ আহ্বান জানান। জেলার সিংহজানী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এসময় দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় যাবে।
তিনি বলেন, আমরা আজ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে। এই অবস্থা থেকে জাতি পরিত্রাণ চায়। আজ বিএনপির ওপরই সরকারের রাগ বেশি। কারণ বিএনপির একটি আলাদা সত্তা ধারণ করে। বিএনপির জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে। এটা মানুষের হৃদয়ের দল। এ দলকে কোনোভাবেই ধ্বংস করা যাবে না। সেই রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তুপ থেকে জেগে ওঠা দল হলো বিএনপি।
জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম তালুকদার শামীমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, নির্বাহী সদস্য সিরাজুল ইসলাম খান, এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সুলতান মাহমুদ বাবু, সাহিদা আক্তার রিতা, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল হক দুলাল, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মশিউর রহমান, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সজিব খান, সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউর রহমান, বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম, লোকমান আহমেদ লোটন, ফাইজুল করিম লাঞ্জু, যুবদল নেতা ফিরোজ মিয়া মিজানুর রহমান, ছাত্রদল নেতা ইকরামুল হোসেন মানিক প্রমুখ। এ ছাড়া অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা শাহ মো: আকরামুজ্জামান টুকন, ইমরান তালুকদার, স্থানীয় বিএনপি নেতা আমজাদ হোসেন, আহসানুজ্জামান রুমেল, আলতাফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। সকাল দশটায় সম্মেলন শুরু হয়। বিএনপিসহ ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবকদল, কৃষক দল, মহিলাদলসহ বিএনপির অঙ্গ দলগুলোর নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
সম্মেলনে সাবজেক্ট কমিটির সর্বম্মতিক্রমে জেলা বিএনপির নতুন কমিটির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেটর শাহ মো: ওয়ারেছ আলী মামুন আবারো নির্বাচিত হয়েছেন। ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পরে ঘোষণা করা হবে বলে সম্মেলনে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান।
বিএনপির নাম সরকার মুছে ফেলতে চায় এমন অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল বলেন, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কেস্ট্রো শহীদ জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি সারা জীবন অন্যায় এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জনগণের মন থেকে তাকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। ইতিহাস তাকে ধারণ করেছে। তেমনি বিমানবন্দর থেকে জিয়ার নাম মুছে, জাদুঘর থেকে পদক আর রাস্তা থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেললও জনগণের মন থেকে মোছা যাবে না। তিনি ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আমাদের পরীক্ষার সময় । শুধু নিজেদেরকে নয়, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এই দানব সরকারকে সরাতে হবে। না হলে জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে । একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই এই দানব সরকারকে আমরা সরাবো। আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণ করতে দিবো না।
তিনি বলেন, অনেকেই বলে থাকে বর্তমানের বিএনপির দুঃসময়। কিন্তু না। এখন শুধু বিএনপির নয়, বাংলাদেশের দুঃসময়। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ এতো সঙ্কট পার করেনি। আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হতে চলেছে।
দেশের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে এখন কোনো শান্তি নাই। আমরা কী এই বাংলাদেশে চেয়ে ছিলাম? মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই। আওয়ামী লীগ একনায়কত্বে বিশ্বাস করে। তাদের রক্তে অস্থি মজ্জায় কর্তৃত্ববাদ মিশে আছে।
বিগত আন্দোলন সংগ্রামে জামালপুরের সরিষাবারিতে চারজন প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের কথা স্বরণ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি দলের মরহুম মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারে কথাও স্বরণ করেন। এছাড়া জামালপুরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কথা স্বরণ করেন তিনি।
আন্দোলনে নিহতের পরিবারকে সহায়তা: এদিকে জেলা সম্মেলন শেষে জেলা সার্কিট হাউজে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ২০১২ সালের জামালপুরের সরিষাবাড়ির বিএনপি নিহত কর্মী বেলাল হোসেনের স্ত্রী জোহুরা আক্তারের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেন। এছাড়া বেলালের পরিবারকে আর্থিকভাবে স্থায়ী ব্যবস্থা করার কথাও জানান তিনি। এসময় বিএনপির স্থায়ী নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।