পল্লি অঞ্চলে টাকার প্রবাহে ভাটা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:দেশের পল্লি অঞ্চলে টাকার প্রবাহে ভাটা পড়েছে। একদিকে ব্যাংক থেকে গ্রামে ঋণ বিতরণ কমেছে, অন্যদিকে গ্রাম থেকে ঋণ আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে গ্রাম থেকে নগদ টাকা চলে আসছে ব্যাংকে। এর মাধ্যমে টাকা যাচ্ছে কম। এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে গেছে। রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশই যাচ্ছে গ্রামে। এতে সার্বিকভাবে গ্রামে টাকার প্রবাহ কমে গেছে। যে কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।2

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে গ্রামাঞ্চলের কৃষি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ পয়েন্ট। ওই সময়ে টাকার অঙ্কে ঋণ বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হিসাবে কমেছে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের প্রবৃদ্ধির হারও কমেছে।

একদিকে গ্রামে ঋণ বিতরণ কমছে, অন্যদিকে গ্রামে বিতরণ করা ঋণ বেশি আদায় হওয়ায় নগদ টাকা চলে আসছে ব্যাংকে। ব্যাংক এসব টাকা আনছে শহরে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরÑ এই তিন মাসে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ২ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা আদায় করে ব্যাংকগুলো। আদায়ের হার তার আগের বছরের তুলনায় ছিল ৪ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে গ্রাম থেকে নগদ টাকা আদায় বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, কৃষিঋণ বিতরণ একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ে। বছরের শুরুতে লিঙ্কেজ মাধ্যমগুলোয় চুক্তি করতে ব্যাংকগুলোর কিছুটা সময় চলে যায়। ফলে বিতরণ একটু কম থাকে। এরপরও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর ঋণপ্রবাহ বেড়েছে; আদায়ও ভালো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নজরদারি করছে। বছর শেষে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষি ও পল্লি খাতে ঋণ বিতরণ সম্ভব হবে।

গ্রামাঞ্চলের অকৃষি খাতে ঋণ বিতরণ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যেখানে এ খাতে ঋণ বেড়েছিল সাড়ে ৪০ শতাংশ, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঋণপ্রবাহ কমেছে ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই খাতে ৩২৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ৩৪১ কোটি টাকা। এদিকে এ খাতে বিতরণ কমলেও আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এই সময়ে আদায় হয় ৩১৩ কোটি টাকা, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। কম পরিমাণে ঋণ দিয়ে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে আদায় করে ছোটখাট গ্রামীণ শিল্পগুলো থেকেও অর্থ উঠিয়ে আনছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ব্যাংক ও অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাম থেকে যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করে তার চেয়ে কম পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে। গ্রাম থেকে অর্থ তুলে শহরে নিয়ে আসা হয়। এর জন্য মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘প্রভাবিত নিয়মনীতি’র দুর্বলতা দায়ী। শহরের উপকণ্ঠে ব্যাংকের শাখা খুলে তা গ্রামীণ শাখা বলে চালানো হচ্ছে। ওই শাখাগুলো থেকে নগরেই ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রামীণ কৃষকদের ঋণের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ শাস্তি ও জরিমানা, শহরের বড় অঙ্কের ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে তা অনেক কম। ফলে ভয়ে গ্রামের লোক ঋণ গ্রহণ করে না এবং দ্রুত ফেরত দেয়; কিন্তু শহরের বড় অঙ্কের গ্রহীতারা ঋণ গ্রহণ করে বেশি, ফেরত দেয় কম। তিনি বলেন, গ্রামে ঋণের প্রবাহ কম হওয়ায় কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কম হলে কৃষি উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সর্বাধিক মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। উৎপাদনের কাজে অর্থ ব্যয় করতে না পারায় উৎপাদন কমে তাদের আয় কমে যাচ্ছে। এতে দেশজ উৎপাদনে কৃষির অবদান কমে যাবে। এছাড়া কৃষি খাত ছাড়া ছোটখাটো অন্য গ্রামীণ শিল্পগুলোও অর্থের অভাবে বিকশিত হতে পারছে না।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল দশমিক ০৬ শতাংশ। রেমিট্যান্সের বড় অংশই যাচ্ছে গ্রামে। ফলে এই খাতে আয় কমায় গ্রামে টাকার প্রবাহও কমেছে।

Check Also

আশাশুনিতে শোভনালী ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার :আশাশুনির শোভনালী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ।সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকাল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।