ফুলবাড়িয়ায় ১৪৪ ধারা, পুলিশের মামলা
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হওয়ার পর পৌর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
আজ সোমবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পৌর শহরে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে এ ঘটনায় পুলিশের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে ৪০০ থেকে ৫০০ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ফুলবাড়িয়া থানার এসআই রফিক বাদি হয়ে গতকাল রোববার রাতে একটি মামলাও করেছেন।
ফুলবাড়িয়া কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে গতকাল রোববার পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধলে কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ (৫০) ও পথচারী সফর আলীর (৭০) মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ২০ জন।
এ ঘটনার পর থেকে ফুলবাড়ীয়ায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ফুলবাড়িয়া কলেজ জাতীয়করণ আন্দোলন
দুপুর ১২টায় কলেজ জাতীয় করণের দাবিতে আন্দোলনকারীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পরে। এসময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে বেশ কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ঘটনা ঘটে। পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের ব্যাপক লাঠিপেটা করে। শিক্ষকদের পিটাতে পিটাতে এক পর্যায়ে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে পড়ে পুলিশ। এ সময় গুরুতর আহত হয় কলেজ জাতীয়করণ দাবি আন্দোলন কমিটি আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক আবুল হাশেম, সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন, সহাকারী অধ্যাপক আবুল কালাম, সহকারী অধ্যাপক উপেন্দ্র চন্দ্র, সহকারী অধ্যাপক ফজলুল হক, প্রভাষক রুমা আখতারসহ আরটিভির ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি বিপ্লব বসাক, যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন দেলোয়ার হোসেন,শিক্ষার্থী কামাল, রুবেলসহ কমপক্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন।
৪৩তম দিনে আন্দোলনকারীর সাথে পুলিশ ও র্যাবের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। দুপুর দেড়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে কমপক্ষে শতাধিক রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ ও র্যাব । বিকেল পাঁটার দিকে আন্দোলকারীদের ধাওয়ায় পুলিশ পিছুহটে। পরে পুলিশ ও র্যাব একসাথে ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলন ছাড়িয়ে পরে উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে লাহেড়িপাড়ার আশপাশে দুই কিলোমিটার এলাকায়। এসময় পুলিশ ৪ জনকে আটক করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর দেড়টায় ফুলবাড়ীয়া ময়মনসিংহ সড়কে সাব রেজিস্ট্রার অফিস সংলগ্ন এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটাকালে পুলিশ পিকআপ ভ্যানের সামনে এক পথচারীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পায়। গুরুতর আহত সহাকারী অধ্যাপক আবুল কালাম (৫৮) কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশ ( সিবিএমসিবি) বিকেলে মারা যান। মৃত পথাচারী বৃদ্ধা কুশমাইল কড়ইতলা গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ছোট ভাই মাছ ব্যবসায়ী ছফর আলী (৫৫)।
ফুলবাড়ীয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রিফাত খান রাজিব জানান, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়াই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। শিক্ষক নিহত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সকালে কলেজের শিক্ষক আবুল কালাম বুকের ব্যাথা নিয়ে হাসপতালে ভর্তি হয়েছিলেন পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান। আর পথচারী মৃত্যু হয়েছে হৃদযন্ত্রেরক্রিয়া বন্ধ হয়ে। পৌর সদরে সকল দোকানপাটসহ যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ৪৩ দিন যাবৎ বিক্ষোভ মিছিল, মানবন্ধন অবরোধ, হরতাল, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ইউএনওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রধান করেছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আন্দোলকারীদের বিরুদ্ধে বিষেশ ক্ষমতা আইনে, বিস্ফোরক দ্রব্য, ভাচুরের অভিযোগে ৪ টি মামলা কারা হয়। শুক্রবার রাতভর উপজেলা বিভিন্ন স্থানে পুলিশ চিরণি অভিযান চালায়। গ্রেফতার করা হয় সহকারী অধ্যাপক আঃ জালাল উদ্দিনের পুত্র কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন মারুফসহ ৫ জনকে।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা সদরে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক অতিরিক্তি পুলিশ। থমথমে অবস্থা বিরাজ উপজেলা সদরে।