ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে। গত ৯ অক্টোবর সীমান্ত এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর কথিত হামলার অভিযোগে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। ছয় সপ্তাহ ধরে চলা এই অভিযানে কমপক্ষে ৮৬ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা এবং কয়েক শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু মুসলমানরা জানিয়েছে, চলমান এ অভিযানে বেসামরিক নাগরিকদের নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গত শুক্রবারের ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্দোষ মানুষদের লক্ষ্য করে সবধরনের সহিংসতার ঘটনায় তুরস্ক নিন্দা জানায় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সকল পক্ষকে সুবিচারের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি; যাতে চলমান এই সহিংসতা নতুন করে জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাতের দিকে পরিচালিত না হয়। বিবৃতিতে সর্বোচ্চ সহযোগিতার জন্য সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে, গত ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে অন্তত ৮৬ জনকে তারা হত্যা করেছে এবং ওই এলাকায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের সম্পত্তি দখল করে তা ধংস করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালে একটি আইন পাসের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিায়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্বকে অস্বীকার করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে তাদের রাষ্ট্রহীন করা হয়। এরপর থেকেই রোহিঙ্গা নিপীড়ন চলে আসছে।
অপর এক খবরে বার্তা সংস্থা বিবিসি জানায়, মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে স্থানীয় সরকার কার্যালয় ভবনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা সবাই মুসলিম। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ইয়াঙ্গুনে স্থানীয় সরকার কার্যালয়ে ঘরে-তৈরি বোমার ওই বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। সন্দেহভাজন যে তিন মুসলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সাথে রাখাইন রাজ্যে কর্তৃপক্ষের ভাষায় যে সন্ত্রাসীরা তৎপর রয়েছেÑ তাদের কোনো যোগাযোগ আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইয়াঙ্গুনের অভিবাসন দফতরে একই ধরনের এক বিস্ফোরণ ঘটে। তাছাড়া ১৭ নভেম্বরের একটি সুপার মার্কেটে আরো দুটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল। কেউই এসব বিস্ফোরণের দায়িত্ব স্বীকার করেনি এবং পুলিশও কোনো সন্দেহভাজনের নাম বলেনি। রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এক আক্রমণের পর সেখানে সেনাবাহিনী কয়েক সপ্তাহ ধরে এক ব্যাপক সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। এরপর ওই রাজ্য থেকে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রাখাইন রাজ্যে শত শত বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়েছে এবং পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতন চালানোর খবর পাওয়া গেছে। ওয়ার্ল্ড বুলেটিন, বিবিসি।