মজলিসে শুরার নির্ভরযোগ্য সূত্রটি জানায়, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানই জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনিত হয়েছেন। নায়েবে আমির পদে নতুন মুখ হিসেবে যুক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা শামসুল ইসলাম, খুলনা মাওলানা মিয়া গোলাম পরওয়ার ও রাজশাহীর অধ্যাপক আতাউর রহমান। এছাড়া পুরানো নায়েবে আমিরদের মধ্যে স্বপদে বহাল আছেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও মাওলানা আবদুস সোবহান।
সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল পদে নতুন পাঁচ জন নিযুক্ত হয়েছেন। তারা হচ্ছেন, দলীয় প্রধান নির্বাচন পরিচালক এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সেক্রেটারি মাওলানা হামিদুর রহমান আযাদ ও অধ্যক্ষ মাওলানা মু. আবু তাহের। এদের মধ্যে শেষ তিনজন সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে আলোচনায় ছিলেন। সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল পদে পুরনোদের মধ্যে আছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করা এটিএম আজহারুল ইসলাম মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আছেন।
জামায়াতের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, সেক্রেটারি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সঙ্গে পরামর্শ করবেন। তবে বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রতিকূল অবস্থা থাকার সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করেই এই পদে নিয়োগ দিয়েছেন মকবুল আহমাদ। সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে সিলেটের ডা. শফিকুর রহমানের বাইরে কেউ-ই আলোচনায় ছিলেন না বলে জানান কেন্দ্রীয় শুরার এই সূত্রটি। সূত্রের ভাষ্য, প্রায় ৬ বছর দলকে একাত্মা করে রাখার পেছনে আমির হিসেবে মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে শফিকুর রহমানের বিকল্প ছিল না। সহজাতভাবেই তারা নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে সেক্রেটারি জেনারেলসহ অন্যান্য পদে মনোনয়ন সম্পন্ন হলেও খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে এড়িয়ে গেছে জামায়াত। দলের আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় সেক্রেটারি নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের কাছে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় আমির নির্বাচনের পর গত ২০ অক্টোবর শুরু হওয়া জেলা-মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা নির্বাচন সম্পন্ন করেছে জামায়াতে ইসলামী। চলতি মাসের শুরুতে শেষ হয়। ইতোমধ্যেই ঢাকা মহানগরকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে জামায়াত। ঢাকা দক্ষিণে আমির নির্বাচিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির নির্বাচিত হয়েছেন সেলিম উদ্দিন। দু’জনেই ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি। এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে উত্তর-দক্ষিণে ভাগ হলো ঢাকা মহানগর জামায়াত শিরোনামে গত ২৭ অক্টোবর প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মজলিসে শুরার সূত্র জানায়, জেলা ও মহানগর মিলিয়ে সর্বমোট ৮৩টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে জামায়াতের। এরমধ্যে সবগুলো জেলার আমির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এরপর জেলা ও মহানগরের আঞ্চলিক রুকনদের ভোটে আঞ্চলিক শুরা নির্বাচন করার পর সেক্রেটারি নিয়োগ দেবেন আমিররা। গঠনতন্ত্রের ধারা-৩১ এর ১ উপধারা অনুযায়ী, জেলা/মহানগরী সদস্যদের (রুকনগণের) ভোটে জেলা/মহানগরী আমির দুবছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।
সূত্রের তথ্য, নতুন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে ২৬২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। ৪২ হাজার রুকনদের মধ্যে ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছেন। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ধারা ১৮ এর ২ উপধারায় বলা আছে, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার কার্যকাল হবে তিন বছর। এর বাইরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মহিলা শাখার সদস্যরা মিলিয়ে আরও ৪০ জন কেন্দ্রীয় শুরার সদস্য হতে পারেন। গঠনতন্ত্রের একই ধারার ৪ এর ‘ঙ’ এ বলা আছে, কেন্দ্রীয় মহিলা মজলিসে শুরার সকল সদস্য কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হবেন।
মজলিশে শুরার সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় মহিলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলও নির্বাচিত হয়েছেন। তবে মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত নতুন সেক্রেটারির নাম জানতে পারেনি। সাবেক সেক্রেটারি শামসুন্নাহার নিজামী বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন।বাংলা ট্রিবিউন