যেভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিক মানিক সাহাকে

সাংবাদিক মানিক সাহা২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি। সেদিন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে খুলনা প্রেসক্লাবে আসেন সাংবাদিক মানিক সাহা। এরপর একজন পরিচিত লোক আসেন তার কাছে। তারা কিছুক্ষণ একান্তে কথা। লোকটিকে বিদায় দিয়ে মানিক সাহা বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রিকশায় ওঠেন। কিন্তু, প্রেসক্লাবের কাছাকাছি ছোট মির্জাপুরে আসতে না আসতেই দুষ্কৃতকারীরা বোমা ছুড়ে মারে তার দিকে। বোমায় মানিক সাহার মাথা উড়ে যায়। মগজ ছিটকে পড়ে রাস্তায়, পাশের বাড়ির সীমানা প্রাচীরে। আর লাশ পড়ে থাকে রাস্তায়।

বোমা বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিকরা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তারা পরনের কাপড় দেখে মানিক সাহাকে শনাক্ত করেন।

এ হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর ১৭ জানুয়ারি মামলা দায়ের করা হয়। খুলনা সদর থানার এসআই রনজিৎ কুমার দাস বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। ২০০৪ সালের ২০ জুন খুলনা থানার তৎকালীন ওসি মোশাররফ হোসেন ৫ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিরা হচ্ছে বুলবুল, আলী আকবর ওরফে শাওন, আকরাম ওরফে বোমারু আকরাম, নুরুজ্জামান ওরফে সুমন এবং মিঠু। পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশে কেএমপির ডিবির পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন পাল ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর অধিকতর তদন্তের চার্জশিট দাখিল করেন। এতে শুধু আবদুল হাই ইসলাম ওরফে কচির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এদিকে ২০০৪ সালের ১৯ মার্চ অন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এসআই আসাদুজ্জামান ফরাজী বিস্ফোরক অংশের চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। মামলায় ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটভুক্তরা হচ্ছে  মিঠুন, সুমন ওরফে নুরুজ্জামান, মো. আকবর আলী শিকদার, বুলবুল ওরফে বুলু, আকরাম ওরফে বোমারু আকরাম, সাত্তার ওরফে ডিসকো সাত্তার, সাকা ওরফে সাখাওয়াত, বেল্লাল, সরো ওরফে সরোয়ার ও শওকত হোসেন। চার্জশিটভুক্তদের মধ্যে মিঠুন, বুলবুল ওরফে বুলু ও আকরাম ওরফে বোমারু আকরাম জামিনে। সুজন ওরফে নুরুজ্জামান ও মো. আকবর আলী বিশ্বাস কারাগারে রয়েছে। এছাড়া সাত্তার ওরফে ডিসকো সাত্তার, সাকা ওরফে সাখাওয়াত, বেল্লাল, সরো ওরফে সরোয়ার ও শওকত হোসেন পলাতক।

২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। পুলিশ দুই দফা তদন্ত শেষে (অধিকতর তদন্তসহ) ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এতে ১৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের সবাই চরমপন্থী দলের সক্রিয় সদস্য বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে চরমপন্থী নেতা আবদুর রশিদ মালিথা, আলতাফ ওরফে বিডিআর আলতাফ, মাহফুজ ওরফে মফিজ ওরফে নাসি র‌্যাব-পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। অন্য আসামি সাত্তার ওরফে ডিসকো সাত্তার, বেলাল ওরফে বুলবুল, কচি ওরফে ওমর ফারুক, সাকা ওরফে সাকাওয়াত হোসেন ও সারোয়ার ওরফে সরো পলাতক। আর আকরাম হাওলাদার, আলী আকবর শিকদার ওরফে শাওন, হাই ইসলাম, নুরুজ্জামান, মিঠুন ও সুমন জামিনে আছে। এক যুগ ধরে চলে এ মামলার হত্যা ও বিস্ফোরক দুই অংশের কার্যক্রম। সাক্ষীরা যথাসময়ে সাক্ষ্য  না দেওয়ায় এ মামলাটি গতি হারায়। সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার অধিকাংশ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া মানিক সাহার মেয়ে মৌমিতা বিদেশে এবং প্রবীণ সাংবাদিক সাহাবুদ্দিন আহমেদ খুলনায় না থাকায় তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট এনামুল হক। তিনি জানান, মানিক সাহা হত্যা মামলায় ৫৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৯ জনের এবং বিস্ফোরক মামলার ১৬ জনের মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ রব হাওলাদার।

Check Also

সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে দুবলার চরে গেলেন ৪০১জন পূণ্যার্থী

উপকূলীয় অঞ্চল (শ্যামনগর): পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে অনুমতি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে রাস মেলায় গেছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।