এবার তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ দলের প্রার্থী হলেও সংগঠনের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা। জনগণের কাছে নিজের ব্যক্তি ইমেজের পরিবর্তনও তার জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে নিহত মেধাবী ছাত্র ত্বকীর বাবা, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাবি্ব সমকালকে বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করলেও আইভী ব্যক্তি হিসেবেই দলমত নির্বিশেষে ভোট পাবেন এবং বিজয়ী হবেন। নারায়ণগঞ্জের বাস্তবতায় এখন পর্যন্ত আইভীই এখানকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য নেতা। মেয়র হিসেবেও তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন।’
নির্বাচনী পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘আগামী ৪ ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ৪ ডিসেম্বরের পর নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নেমে আমার অবস্থান জনগণের সামনে তুলে ধরব।’ ৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর পর ৫ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করবেন প্রার্থীরা।
ফিরে দেখা বিগত মেয়র নির্বাচন :২০১১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দোয়াত-কলম মার্কা নিয়ে মেয়র পদে ভোটযুদ্ধে নামেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তখন তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শামীম ওসমান। বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচনের আগের রাতে নাটকীয়ভাবে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ায়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ক্যাডারদের মহড়ায়, গডফাদারের টাকার খেলায় ও বৈরী প্রচারে ওই নির্বাচনে আইভী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। তবে গতবারের নির্বাচনে ভোটারদের সামনে মূল ইস্যু ছিল_ সন্ত্রাস না শান্তি। এ প্রশ্নে তিনি নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে নির্ভীক ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন। জয়ী হন বিপুল ভোটে।
নতুন চ্যালেঞ্জের হিসাব-নিকাশ :আইভীর জন্য নতুন পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জের সরল একটি ব্যাখ্যা দিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি সমকালকে বলেন, ‘গতবার আইভী লড়েছিলেন ব্যক্তি হিসেবে। তার ব্যক্তিগত ইমেজ নির্বাচনে বড় একটা প্রভাব ফেলেছিল। সেটা তার বিজয়ের মূল কারণ ছিল; কিন্তু এবার তিনি দলীয় প্রার্থী। ভোটযুদ্ধ হচ্ছে ধানের শীষ ও নৌকার মধ্যে। তাই আইভীর ব্যক্তি ইমেজ এবারের নির্বাচনে তেমন প্রভাব ফেলবে না।’ সাখাওয়াত হোসেনের দাবি, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনী এলাকায় আনুপাতিক হিসাবে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ বিএনপির সমর্থক। তারা ব্যক্তি নয়, দলীয় প্রতীকে ভোট দেবেন। তাই ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারলে আইভীর জেতার সম্ভাবনা নেই। তিনি দাবি করেন, গতবারের নির্বাচনে নীরব ভোটারদের ‘সমর্থন’ বা ‘গায়েবি’ ভোট পড়েছিল আইভীর পক্ষে। এবার সেই গায়েবি ভোট পড়বে তার বাক্সে।
তবে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাবি্ব মনে করেন, এবারও আইভীরই জয় হবে। সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত মেধাবী ছাত্র ত্বকীর বাবা রাবি্ব সমকালকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভেতরের যে অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা বলা হচ্ছে, সেটা এ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ এবারও ভুল করবে না। গডফাদার, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেই রায় দেবেন তারা।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাজনৈতিক নেতা বলছেন, ‘দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করায় আইভী গতবারের মতো দলমত নির্বিশেষে ভোট পাবেন না। গতবার বিএনপির সমর্থক যারা ভোট দিয়েছিলেন, প্রতীকের কারণেই তারা এবার আইভীকে ভোট দেবেন না। আবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে আইভীকে মনোনীত করা হলেও স্থানীয়ভাবে যে অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে, তাও আইভীর বিপক্ষে যাবে। আইভীবিরোধী অংশের ভোটব্যাংকে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার ভোট রয়েছে। শেষ মুহূর্তে ভোটের সমীকরণে আইভীবিরোধী অংশ গোপনে বিএনপি প্রার্থীকেও সমর্থন দিতে পারে। কারণ সর্বশেষ এক বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত জনপ্রিয় নেতা শামীম ওসমানের বাবা একেএম শামসুজ্জোহাকে নিয়ে আইভীর নেতিবাচক মন্তব্য মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।’ এমন নেতিবাচক মন্তব্য করার কথা আইভী পরে অস্বীকার করলেও তার প্রতিপক্ষরা এ মন্তব্যকে প্রচারে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ আলাপকালে জানান, মেয়র হিসেবে আইভীর উল্লেখ করার মতো কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তারা শোনেননি। পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকার পরও বাংলাদেশের বাস্তবতায় আইভীর এই স্বচ্ছ ইমেজই ভোটযুদ্ধের নতুন চ্যালেঞ্জে তাকে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রেখেছে বলে মনে করেন তারা।সমকালকে