বিশ্ব এইডস দিবস আজ -ঐক্যের হাত তুলে এইডস প্রতিরোধের আহ্বান#পরিবার নেই পাশে, থাকে না রাষ্ট্রও-প্রতিবেশি দেশ ভারতের কারণে বাংলাদেশে এইস আইভির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে

 ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে দিবসটি পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  এ বছর বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য হল, ‘আসুন, ঐক্যের হাত তুলি: এইচআইভি প্রতিরোধ করি’।

এইডস-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায় ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করে আসছে। ইউএন-এইডস এর তথ্যমতে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এইডস-এ আক্রান্ত। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ মরণঘাতী রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘এইচআইভি চিকিৎসা কার্যক্রম সফল করার ক্ষেত্রে এইচআইভি আক্রান্তদের প্রতি সামাজিক বৈষম্যহীনতা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমি সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাসমূহের কার্যকরী ভূমিকা রাখার এবং প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ নিজ প্রেক্ষাপট থেকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, ‘এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করার লক্ষ্যে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়নের পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলা, পারিবারিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ইতিবাচক মনোবৃত্তির পরিচর্যা, উন্নত মননশীলতা এবং সুকুমার বৃত্তির অনুশীলন অত্যন্ত জরুরি।’

দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

পরিবার নেই পাশে, থাকে না রাষ্ট্রও
 দেশে বেশিরভাগ এইডস রোগীরাই পরিবার ও সমাজে নিজেদেরকে এইচআইভি পজিটিভ বা আক্রান্ত হিসেবে প্রকাশ করে না। কারণ, কারও এইডস রোগের কথা  প্রকাশ পেলে পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কেউই পাশে থাকে না। এ কারণে তারা পরিবারকে জানায় না। ফলে পরিবারেরই কেউ জানেই না তার স্বজনটি এইচআইভিতে আক্রান্ত। আর যাদের কথা কোনওভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে তারা চাকুরি হারান, স্বজন হারান, হারান পরিবারের মানুষগুলোকে এবং রাষ্ট্র থেকেও কোন সহযোগিতা পান না। কয়েকজন এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে। এইডসবিরোধী প্রচারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, সচেতনতার অভাবেই এমনটা ঘটছে।কয়েকমাস আগে ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে ভর্তি হন এইচআইভি পজিটিভ সালাউদ্দিন (ছদ্মনাম)। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা তার এইচআইভি পজিটিভের কথা শোনার পর তাকে সেখানে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানান। বাধ্য হয়েই সরকারি ওই হাসপাতাল ছেড়ে তাকে চলে আসতে হয়। হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে হয় বেসরকারি সংগঠন মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে। সালাউদ্দিন সৌদি আরব থাকতেন, ১৯৯৮ সালে তার শরীরে এইচআইভি  ধরা পড়ে। এরপরই তাকে চাকুরিচ্যুত করে দেশে ফেরত পাঠায় কর্তৃপক্ষ। জানা গেল, সালাউদ্দিনের এইচআইভি পজিটিভ জানার পর চিকিৎসকরা তাকে বলেছেন, আপনি আর আমাদের কাছে আসবেন না। আপনাকে আমরা চিকিৎসা দিতে পারব না।

এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ‘জনগোষ্ঠী’ পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কোথাও থেকে সহযোগিতা পায় না। তাদের নিয়ে সমাজে যে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে সেখান থেকে কেউ বের হতে পারছে  না।  একধরণের ভীতি তাদেরকে একাকী করে রেখেছে। এমনকি, কোনও পরিবারের কেউ যদি এইচআইভি পজিটিভ হন তাহলে তার পুরো পরিবারও সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন, অনেকটা একঘরে করে রাখার মতো। তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করা হয়, বিদেশে থাকলে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, দেশে এসে নিজ দেশেও হতে হয় পরবাসী।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার এখনও শূন্য দশমিক এক শতাংশেরও নীচে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১ শতাংশেরও কম।  সম্প্রতি জাতিসংঘের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার শতকরা এক ভাগেরও নিচে। একইসঙ্গে, শহরাঞ্চলের কোনও কোনও জায়গায় নেশাকারী কিছু ব্যক্তির মধ্যে বেশি মাত্রায় এইচআইভি সংক্রমণের হার রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংগঠন মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এমএস মুক্তি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এইচআইভি পজিটিভরা বিভিন্ন ধরণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাদের নিয়ে নানা স্টিগমা রয়েছে সমাজে।এখন পর্যন্ত তারা নিজেদের কথা বলে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন না, পরিবার তাদের গ্রহণ করে না, সমাজ তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে, রাষ্ট্র তাদের কোনও মৌলিক সুবিধাই দিতে পারে না।’

এমএস মুক্তি বলেন, ‘আমাদের দেশে চিকিৎসকরা এই রোগটা সনাক্ত করার বেলায় উদাসীন।চিকিৎসার ক্ষেত্রে এসব রোগীরা সব হারিয়ে আমাদের কাছে আসে। তাহলে এসব মানুষ কোথায় যাবে চিকিৎসার জন্য? আর আমরা সরকারের অর্থায়নে এইডস আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করি। তবে সরকারি অর্থায়ন ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাবে, তখন আমাদের কী হবে আমরা জানি না। এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। সরকার ও দাতাদের কাছ থেকে আমরা এ বিষয়ে কোনও আশ্বাস পাইনি।’

একইসঙ্গে প্রচার প্রচারণার অভাবে এইডস রোগীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বেসরকারি সংগঠন আশার আলো-র নির্বাহী পরিচালক হাবিবা আক্তার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রচারণার অভাবে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না এবং এর প্রতিরোধের বিষয়ে মানুষ কিছু জানতে পারছে না। কারণ, প্রচারের মাধ্যমেই মানুষ জানতে পারত, কীভাবে এইডস ছড়ায় এবং এটা প্রতিরোধের জন্য কী করা উচিত।একইসঙ্গে এর মাধ্যমে তাদের প্রতি যেসব বৈষ্যম তৈরি হয় পরিবার ও সমাজে সেগুলো দূর হবে।এভাবেই একসময় এসব মানুষগুলোকে তাদের পরিবার এবং সমাজ গ্রহণ করবে। এইডসকে অন্যান্য সব রোগের মতোই দেখতে হবে- এই সচেতনতা তৈরি করতে হবে সমাজে।’

এইচআইভি পজিটিভ সনাক্ত হওয়ার পর থেকে ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপ অনুযায়ী দেশে এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৪৩ জন বলে জানান হাবিবা আক্তার। তবে এই সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার হতে পারে বলেও জানান তিনি। আক্রান্তদের মধ্যে ৬০০ জন মারা গেছেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পাশের দেশ নেপালে ৪৯ হাজার, ভারতে দুই দশমিক এক লাখ, ভুটানে এক হাজার, পাকিস্তানে ৮৭ হাজার, মালয়শিয়াতে ৮২ হাজার, মিয়ানমারে ২ লাখ, থাইল্যান্ডে সাড়ে চার লাখ মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত ।

 

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।