জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে থাকা শফিকুর রহমানকেই শেষ পর্যন্ত দলের সেক্রেটারি জেনারেল করা হচ্ছে। তাঁর মনোনয়ন অনেকটা চূড়ান্ত। শিগগিরই শফিকুর রহমানসহ মনোনীত সাত নেতার নাম ঘোষণা করা হবে।
এ ছাড়া ছাড়া দলের নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ নায়েবে আমির ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে ছয়জনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে, যাঁরা অন্য নেতাদের তুলনায় কম বয়সী। এর মধ্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার, আতাউর রহমান ও শামসুল ইসলামকে নায়েবে আমির এবং এ টি এম মাসুম, রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদকে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল করা হচ্ছে। গোলাম পরওয়ার এখন সহকারী সেক্রেটারির দায়িত্বে আছেন। আতাউর ও শামসুল কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য। তাঁরা যথাক্রমে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আমির ছিলেন। এ টি এম মাসুম, রফিকুল ও হামিদুর রহমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য।
দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াতের নতুন আমির মকবুল আহমাদ সম্প্রতি দলের তিনটি পদে সাত নেতার নাম ও পদবি উল্লেখ করে তাঁদের বিষয়ে মজলিশে শুরার সদস্যদের মতামত চেয়েছেন। মজলিশে শুরার অঞ্চলভিত্তিক শাখাপ্রধানদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এ মতামত চাওয়া হয়।
এ কে এম ইউসুফ ও নাযির আহমদের মৃত্যুর পর বর্তমানে জামায়াতে তিনজন নায়েবে আমির আছেন। তাঁরা হলেন মাওলানা আবদুস সুবহান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও মুজিবুর রহমান। এর মধ্যে মাওলানা সুবহান ও সাঈদী একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত, তাঁরা কারাবন্দী আছেন। জানা গেছে, এ তিনজনের জ্যেষ্ঠতা ঠিক রেখে গোলাম পরওয়ার, আতাউর রহমান ও শামসুল ইসলামের নাম রাখা হয়েছে।
জামায়াতের নেতারা বলছেন, দলের দীর্ঘদিনের রীতি হচ্ছে অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্য থেকে নায়েবে আমির করা হয়। কিন্তু এবার এমন দুই নেতাকে সরাসরি নায়েবে আমির করা হচ্ছে, যাঁরা দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্তর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য বা সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে ছিলেন না। বিশেষ করে, বর্তমান নেতাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাককে নায়েবে আমির করা হচ্ছে না। এমনকি এই দুই নেতাকে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণ তিন নেতা এ টি এম মাসুম, রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদের পরে তাঁদের ক্রম ঠিক করা হয়েছে। নিজামী-মুজাহিদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ টি এম আজহার অনেক দিন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্বে ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হয়ে তিনি এখন কারাবন্দী। আর সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন দেশের বাইরে আছেন।
এ বিষয়ে দলের নেতাদের কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একাধিক নেতা বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ অনেক নেতাকে এড়িয়ে নায়েবে আমির ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে কয়েকজনের মনোনয়ন প্রস্তাব এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের অবনমিত করে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের ওপরে রেখে ক্রমবিন্যাসের ঘটনা অসন্তোষের পর্যায়ে গেছে।
সাত নেতার পদ-পদবি উল্লেখ করে নাম প্রস্তাবের ঘটনা জামায়াতে অভিনব এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন। দলের গঠনতন্ত্রে সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘আমীরে জামায়াত কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সহিত পরামর্শ করিয়া তাঁহাকে নির্বাচিত করিবেন।’ একইভাবে নায়েবে আমির নির্বাচনেও মজলিশে শ্ুরার পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জামায়াতের মধ্যম সারির একাধিক নেতা বলেন, নতুন আমির মজলিশে শুরার সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা বা বিকল্প কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তিনটি পদে সাত নেতার নাম প্রস্তাব করে চিঠি দেন। ফলে অনেকে প্রভাবিত হয়েছেন। আবার অনেকে ভিন্নমত পোষণ করার ইচ্ছা থাকলেও তা প্রকাশ করার সাহস পাননি।প্রথম আলো