রোহিঙ্গাদের নৌকায় মিয়ানমার বাহিনীর নির্বিচারে গুলি

ক্রাইমবার্তা রিপোট:স্ত্রী ও ছোট শিশুদের রেখে এসেছেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। প্রাণে বাঁচতে বড় দুই ছেলেকে নিয়ে বনে-জঙ্গলে কাটিয়েছেন বহুদিন। নৌকায় নাফ নদ পেরোনোর সময় গুলি করে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। দুই ছেলেকে হারিয়ে এখন দিশেহারা রোহিঙ্গা ইমান হোসেন এখন টেকনাফে।

নাফ নদে রোহিঙ্গাদের বহনকারী একটি নৌকায় নির্বিচারে গুলি করেছে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। গতকাল বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক রোহিঙ্গা এ কথা জানিয়েছেন।

রাতে ইমান হোসেন (৪৮) নামের ওই রোহিঙ্গা নাগরিককে উদ্ধার করে কক্সবাজারের টেকনাফে নিয়ে আসেন বাংলাদেশের জেলেরা। তিনি জানিয়েছেন, ওই নৌকায় তাঁর ছেলেসহ ৪২ জন মানুষ ছিলেন। তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানেন না। তিনি এখন টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছেন।

ইমান হোসেন জানান, গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে রাখাইন রাজ্যের মংডু পেরামপুরু চর এলাকায় হাজার খানেক রোহিঙ্গা বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে জড়ো হয়। তারা বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এ সময় রোহিঙ্গাদের নিয়ে ছয়টি নৌকা টেকনাফ সীমান্তের দিকে রওনা হয়। এর কিছুক্ষণ পর অপর একটি নৌকায় ইমান হোসেন, তাঁর দুই ছেলে সেলিম উল্লাহ (১৮) ও সালামত খাঁসহ (১৪) ৪২ জনের মতো মানুষ টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়। কিছুদূর আসার পর হঠাৎ বিজিপির একটি স্পিডবোট গুলি করতে থাকে। এ সময় প্রাণরক্ষায় বেশির ভাগই নদীতে ঝাঁপ দেয়। কয়েকজন নৌকায় থেকে যায়। ইমান হোসেন প্রায় দেড় ঘণ্টা সাঁতার কেটে সীমান্তের কাছাকাছি চলে আসেন এবং বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকেন।

একপর্যায়ে কেরুনতলী এলাকার আবদুস সালামের মাছ ধরার একটি নৌকা ইমানের চিৎকার শুনে তাঁকে উদ্ধার করে।

আবদুস সালাম জানান, তাঁরা নদীতে মাছ ধরছিলেন। এ সময় চিৎকার শুনে গিয়ে ইমানকে উদ্ধার করেন। নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়তে গিয়ে আহত হয়েছেন ইমান।

ইমান হোসেন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনটিভি অনলাইনকে জানান, তিনি ওয়াবেক নামের একটি গ্রামের বাসিন্দা। মিয়ানমারের সেনাদের হামলার সময় তিনি স্ত্রী ও ছোট পাঁচ সন্তানকে গ্রামে রেখে বড় দুই ছেলেকে নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে খেয়ে না খেয়ে পাহাড়ে-জঙ্গলে, খালে-বিলে পালিয়ে ছিলেন। শেষে বুধবার রাতে দালালের মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে পেরামপুরু থেকে নৌকায় ওঠেন।

কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। দুই ছেলেকে হারিয়ে এখন দিশেহারা ইমান হোসেন। তারা বেঁচে আছে কি ধরা পড়েছে তাও জানেন না। ওদিকে স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের অপর সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ নেই ইমানের।

ইমান হোসেন জানান, তিনি লেদা ও কুতুপালং ক্যাম্পে তাঁর গ্রামের অথবা আশপাশের পরিচিত লোক খুঁজবেন।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকী বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত এক মাসে ২০০ নৌকায় প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকিয়েছে বিজিবি।

Check Also

আশাশুনিতে শোভনালী ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার :আশাশুনির শোভনালী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ।সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকাল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।