ক্রাইমবার্তা স্পোর্টস ডেস্ক: ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়ে ক্রিস গেইলের মনে একটাই প্রশ্ন থাকার কথা-কে এই আফিফ?
বাংলাদেশের যে কয়জন ক্রিকেটার সম্পর্কে গেইলের কম-বেশি ধারণা আছে, তাদের মধ্যে এত দিন নিশ্চিতভাবেই আফিফের নাম ছিল না। রাজশাহী কিংসের সেই তরুণ অফ স্পিনারের বলেই কিনা আজ বোল্ড হয়ে গেলেন টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান! গেইলকে ৫ রানে ফিরিয়েই থেমে যাননি আফিফ। বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ২১ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। বিপিএলে অভিষেক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। চিটাগং ভাইকিংস ব্যাটসম্যান গেইলকে ছাপিয়ে তাই সবার মনেই উঁকি দিচ্ছিল প্রশ্নটা-কে এই আফিফ?
পুরো নাম আফিফ হোসেন, ডাক নাম ধ্রুব। বয়স ১৭ বছর। বাড়ি খুলনা শহরে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সহ-অধিনায়ক বিকেএসপির এই ছাত্র। অফ স্পিন বল করলেও তিনি মূলত টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ব্যাট করেন বাঁ হাতে। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে এখনো খেলা হয়নি। তবে গত বছর প্রথম বিভাগ লিগে বিকেএসপির হয়ে ওপেন করেছেন। মাঝে মাঝে নামেন তিন নম্বরেও। নিজেদের মধ্যে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের প্রস্তুতি ম্যাচে কয়দিন আগেই খেলেছেন দেড় শ রানের ইনিংস। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে আফিফ আছেন অনূর্ধ্ব-১৪ থেকেই। যুব দলে আসার আগে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন অনূর্ধ্ব-১৫ এবং ১৭ ক্রিকেটেও।
বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে আফিফ প্রথম চমকটা দিলেন বল হাতে। নিজের প্রথম ওভারে পর পর দুই বাউন্ডারি খেয়ে পরের বলেই ‘প্রতিশোধ’ নিয়ে নিলেন চিটাগংয়ের ব্যাটসম্যান জহুরুল ইসলামের ওপর। অবশ্য আম্পায়ার জহুরুলকে এলবিডব্লু দিলেও টেলিভিশন রিপ্লেতে পরিষ্কার হয়েছে, বলটা প্যাডে লেগেছিল ব্যাট ছুঁয়ে।
বিপিএলের প্রথম উইকেট এভাবে আসায় আফিফের হয়তো অতৃপ্তি ছিল। তবে সেটা এখন নিশ্চিতভাবেই নেই। পরের ওভারে যে বোল্ড করে দিলেন গেইলকেই! প্যাডে লেগে এবার বল আঘাত করল স্টাম্পেই। পরাস্ত হওয়ার পর একবারও পেছনে না তাকিয়ে গেইল সোজা চলে যান ড্রেসিংরুমে।
১৭ বছরের এক তরুণ অফ স্পিনার বল হাতে নিয়েই গেইলের উইকেট পেয়ে গেলেন! শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দর্শকদের এই ঘোর আর কাটলই না। আফিফ এরপরও উইকেট পেতে লাগলেন একটার পর একটা। জহুরুল, গেইলের পর তিন ওভারের প্রথম স্পেলে ফিরিয়েছেন জাকির হাসানকেও। ১৩তম ওভারে আবার বোলিংয়ে এসে নিয়েছেন সাকলাইন সজীব আর ইমরান খানের উইকেট দুটি।
আফিফ এক একটা উইকেট পান আর সতীর্থদের উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। রাজশাহীর অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিকে তো বেশ কয়েকবারই দেখা গেল আফিফের পিঠ চাপড়ে দিতে। ৪-১-২১-৫, বিপিএলের অভিষেক ম্যাচে এই হলো আফিফের বোলিং পরিসংখ্যান। শোয়েব মালিকের অপরাজিত ৬৭ রানের পরও চিটাগং ভাইকিংস করতে পারল মোটে ১১১ রানে।
আফিফের প্রশংসা করতে গিয়ে বিসিবি এবং বিকেএসপির কোচরা আগে তার ব্যাটিং সামর্থ্যের কথাই বললেন। বিসিবির ন্যাশনাল গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদীনের কথা, ‘আফিফ খুবই ভালো ব্যাটসম্যান। বোলিংও খারাপ করে না। আজকের পারফরম্যান্স তাঁকে বোলিংয়ে আরও আত্মবিশ্বাস জোগাবে।’
বিকেএসপির কোচ আখিনুর জামানের মূল্যায়ন অবশ্য বোলার আফিফও পাচ্ছেন বেশ ভালো নম্বর, ‘সে উইকেট টেকার বোলার। বিকেএসপিতে থাকার সময়ও নিয়মিত উইকেট নিত, ব্রেক থ্রু এনে দিত। ব্যাটসম্যানদের রিড করার খুব ভালো ক্ষমতা আছে ওর।’
আফিফের আবির্ভাব তরুণ ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার সামর্থ্যই প্রমাণ করে বলে মনে করেন বিসিবির বয়স ভিত্তিক পর্যায়ের কোচ আবদুল করিম, ‘এ রকম আরও দুই-তিন জন ক্রিকেটার আমাদের আছে, যারা সুযোগ পেলে সামর্থ্য দেখাতে পারতো। বিপিএলের প্রত্যেক দলে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের এক-দুজন করে ক্রিকেটার নিলে আমরা তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারতাম।’