ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতনের চিত্র প্রকট আকার ধারণ করেছে। নীপিড়ন, নির্যাতন ও বর্বরতা এমন আকার ধারণ করেছে যে তা এখন কোনো পৈশাচিক নির্মমতাকেও হার মানাবে। পরিস্থিতি এখন এতটাই খারাপের দিকে গেছে যে, বাবার সামনে রোহিঙ্গা কন্যাকে করা হচ্ছে ধর্ষণ। আর তা দেখতে বাধ্য করা হচ্ছে বাবাকে।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান নির্বাহী ম্যাথু স্মিথ মনে করেন, পুরুষদের মাথায় রাইফেল ঠেকিয়ে কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণের চিত্র দেখতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা মানবতার লংঘন।
মানবাধিকারকর্মী ম্যাথু স্মিথ আরও জানান, সেনা অভিযান পরিচালিত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দানেও বাধা দেয়া হচ্ছে। আর এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অধিবাসীদের সাহায্য প্রেরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান এর মতে, অতি দ্রুত অন্তত ৩০ হাজার লোকের কাছে খাবার, পানি ও ওষুধ পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত। সেনা অভিযানের পর অন্তত দুই লাখের মতো রোহিঙ্গা সদস্য তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও দাবি করেন ট্যান।
এদিকে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা নিউ ইয়র্ক টাইমস মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে একটি ছবি প্রকাশ করে। রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান শুরুর আগে ও পরের ওই স্যাটেলাইট ইমেজে দু’টি গ্রামের দৃশ্য দেখানো হয়। এতে দেখা যায়, সবুজের মাঝের এক টুকরো গ্রাম দুটি পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর কি পরিমাণ নির্যাাতন চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়টির লোকেদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ যখন বিশ্বময় ছেয়েছে ঠিক তখনও শান্তির প্রতীক নোবেল বিজয়ী অং সাং সুচির নিরবতা ভাবিয়ে তুলেছে গোটা বিশ্বের মানুষদের। বিষ্মিত বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও।
সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো সেনাবাহিনীর বর্বরতাময় অভিযান সচক্ষে অবলোকনের জন্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানও প্রতিনিধি দল নিয়ে পরিদর্শনে গেলেন। দেখলেন সেনাদের চালানো অভিযানের এলাকাগুলোও।
ঢ়যড়ঃড়-১৪৭২০১৬১১২০১৮২৬৩৩রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই এখন পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এরও রয়েছে কিছু প্রতিবন্ধকতা। সাপ্তাহিকের সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা মনে করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমেরিকা-ভারতসহ অন্য শক্তিগুলোর যে ভূমিকা, তা বিশ্লেষণ করলে আতঙ্কিত হতে হয়। এখন যে আরএসও স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্যে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তাদের সংগ্রাম এক সময় বাংলাদেশেরও বিরুদ্ধে যাবে কি না?
এর ব্যাখ্যা হিসেবে গোলাম মোর্তোজা একটি বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন। সেটি হলো : ‘একটা সময়ে গিয়ে আরএসও তার স্বাধীন রাষ্ট্রের সীমানা বাংলাদেশের ভেতরেও বিস্তৃত করতে পারে। মিয়ানমারের কিছু অংশ, বান্দরবান-কক্সবাজার-টেকনাফ নিয়ে একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি তুলতে পারে আরএসও। বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থানরত ১০ থেকে ১২ লাখ রোহিঙ্গা সময়ের প্রেক্ষিতে তা আরও বাড়তে পারে, তারা হবে আরএসও’র সংগ্রামের মূল ভিত্তি। দেশের বাইরে থাকা রোহিঙ্গারা অর্থের জোগান দেবে। যেভাবে প্রবাসী তামিলদের থেকে অর্থ সহায়তা পেত এলটিটিই। প্রবাসে রোহিঙ্গাদের অবস্থান এতটা দৃঢ় না হলেও, তারা সংগ্রামে ভূমিকা রাখবে। এই ষড়যন্ত্রটি বিবেচনায় নিলে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের আচরণ বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, সুপরিকল্পিত। হয়তো বৃহৎ শক্তি যে বা যারা চায় না বাংলাদেশ ভালো থাকুক, তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু চলছে।’
এই বিশ্লেষন যদি বাংলাদেশ সরকার বিবেচনায় নিয়ে নেয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বাংলাদেশ প্রবেশ রীতিমতো ক্ষতিকর। তাই স্বাভিকভাবেই বাংলাদেশ বাংলাদেশ চাইবে না রোহিঙ্গা সম্প্রদায়টি তাদের দেশে প্রবেশ করুক।