ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট ছা ইং ওয়ান এর ফোন দেওয়াকে ‘নগণ্য চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে চীন। দেশটি আরো জানায়, ‘চীন বিশ্বাস করে এই ক্ষুদ্র চেষ্টায় ওয়াশিংটন ‘এক চীন’ নীতিতে কোন পরিবর্তন আনবে না।’
১৯৭৯ সালে তাইওয়ান চীন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ‘এক চীন’ নীতিতে সমর্থন দিয়ে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন। চীন তাইওয়ানকে নিজ প্রদেশ বলেই গণ্য করে আসছে। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর পররাষ্ট্রনীতি ভেঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট তাইওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন।
শুক্রবারের এই ফোনালাপের জন্য চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ান ই তাইওয়ানকে দায়ী করে বলেন,‘ এটি একান্তই তাইওয়ানের দিক থেকে একটি নগণ্য চেষ্টা। এর ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে চীনের কাঠামো পরিবর্তিত হয়ে যাবে না।’ হংকং এর পোয়েনিক্স টিভি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ওয়ান ই আরো বলেন ‘আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দীর্ঘদিনের ‘এক চীন’ নীতিতে কোন পরিবর্তন আনবে না।’
এর আগে টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতায় জয়ী হওয়ায় অভিনন্দন জানাতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট আমাকে ফোন করেছিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে’। ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিম জানিয়েছে, জানুয়ারির নির্বাচনে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ছা ইংকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাইওয়ান প্রেসিডেন্ট দপ্তর জানায়, আলাপে দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের মধ্যে ‘ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মিত্রতার’ কথা উল্লেখ করেন।
চীন তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রদেশ হিসেবে গণ্য করে। ২০১৫ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইয়ান জিওনের সাথে দেখা করলেও জানুয়ারিতে ছা নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে। অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলেও ওয়াশিংটন তাইওয়ানের সেরা অস্ত্র বিক্রেতা ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিত্র। ট্রাম্প তার আরেক টুইটে বলেন, ‘মজার ব্যাপার, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করছে আর অভিনন্দন জানিয়ে করা একটি ফোনকল গ্রহণ করা আমার উচিত হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র নিড প্রেইস জানান ,‘ট্রাম্পের আলাপ যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক চীন’ নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত নয়। ট্রাম্পের মুখপাত্র কেলিনি কনওয়েল জানিয়েছেন, তাইওয়ানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সম্পর্কে ট্রাম্প ‘বেশ সচেতন’। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী র্যান্ডি স্যাকরিভার ট্রাম্পের সাথে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপকে ‘প্রাথমিক সৌজন্যতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, চীনের এই বিষয়ে কোন আপত্তি জানানো উচিত হবে না। তারা ভাল করেই জানে দুই নেতার মধ্যে কথোপকথন কখোনোই যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক চীন’ নীতি লঙ্ঘন নয়। যদিও তাইওয়ানের সাবেক ডাচ কূটনৈতিক গ্যারিট ভ্যান ডার উইস বলেন, এই ফোনালাপ তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
রয়টার্স থেকে নেয়া